সিরিয়ার পতনোত্তর সময়ে পর্যটন আবার ফিরতে শুরু করেছে। কেউ ইতিহাসের ধ্বংসাবশেষ দেখতে, কেউ আবার সাম্প্রতিক যুদ্ধে ক্ষতচিহ্ন খুঁজতে ছুটছেন। ‘ডার্ক ট্যুরিজম’ নামের এই ভ্রমণরীতি এখন হয়ে উঠছে বিশাল বাণিজ্যিক খাত।
সিরিয়ার পালমিরা থেকে নতুন ভ্রমণধারা
ভোরের আলোয় সিরিয়ার প্রাচীন ওএসিস নগরী পালমিরার সোনালি স্তম্ভ ঝলমল করে ওঠে। একসময় বছরে প্রায় এক–দেড় লাখ পর্যটকের গন্তব্য ছিল এটি। ২০১১ সালে গৃহযুদ্ধ শুরু হলে সব বন্ধ হয়ে যায়।
২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর আসাদ সরকারের পতনের পর ধীরে ধীরে ফিরছে বিদেশি ভ্রমণকারী। কেউ মন্দির, থিয়েটার আর সমাধিসৌধ দেখতে আসছেন; কেউ আবার ধ্বংসস্তূপ, উড়ে যাওয়া ভবন আর যুদ্ধের দাগ চোখে দেখে নিতে চান—যাদের বলা হয় ডার্ক ট্যুরিস্ট (ডার্ক ট্যুরিস্ট → ডার্ক টুরিস্ট)।
ডার্ক ট্রাভেলাররা এখন ইন্সটাগ্রাম (ইনস্টাগ্রাম) আর টিকটক (টিকটক)–এ ভ্রমণ টিপস শেয়ার করেন। কেউ শহরতলির ভাঙা বসতি, রুশ সেনাদের ফেলে যাওয়া ট্যাঙ্ক বা যুদ্ধবিমান দেখে ছবি তুলছেন।
সাইদনাইয়া কারাগারের মতো স্থানেও আগ্রহ
সিরিয়ার সবচেয়ে ভয়ংকর কারাগার সাইদনাইয়া—যা পরিচিত ‘হিউম্যান স্লটারহাউস’ (হিউম্যান স্লটারহাউস) নামে। এখন খালি ও তালাবদ্ধ; তবু কিছু ট্যুর গাইড চুপিসারে পর্যটকদের ঢোকানোর আশ্বাস দেন।
ডেন্টিস্ট্রি ছাত্রী রীতা বাদরান ইনস্টাগ্রামে (ইনস্টাগ্রাম) ২৫ হাজার অনুসারী নিয়ে ডার্ক ট্যুর চালান। ব্যক্তিগত ট্যুর ১৩০ ডলার (ডলার), সাইদনাইয়ার জন্য আলাদা ১০০ ডলার ‘পারমিট ফি’। তিনি দেখান ব্যারেল বোমার জন্য ব্যবহৃত বিমান, বিদ্রোহীদের খনন করা গোপন সুড়ঙ্গ—যেখানে এখনও অগণিত মানুষের দেহাবশেষ রয়ে গেছে।

৪১ বিলিয়ন ডলার বাজারের রমরমা
গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্টস (গ্লোবাল ইন্ডাস্ট্রি অ্যানালিস্টস) জানায়, ডার্ক টুরিজমের বাজার এখন ৩৫ বিলিয়ন ডলার, ২০৩০ সালে তা হবে ৪১ বিলিয়ন।
সিরিয়া ছাড়াও ইরান, নর্থ কোরিয়া (নর্থ কোরিয়া), সাউথ সুদান (সাউথ সুদান), ইউক্রেন—সবই ডার্ক টুরিস্টদের আকর্ষণ। ইয়াং পায়োনিয়ার ট্যুরস (ইয়াং পাইওনিয়ার টুর্স) ২০১৩ সালে ৩০টি গন্তব্য থেকে এখন একশরও বেশি দেশে ট্যুর পরিচালনা করে।
ইসরায়েলে হামাস হামলার স্থান বা আফগানিস্তানে তালেবান শাসন দেখতে ভিড় বাড়ছে। মেক্সিকোতে ‘নাইট ওয়াক’ (নাইট ওয়াক) নামে অবৈধ সীমান্ত পারাপারের নকল অভিজ্ঞতার ট্যুরও জনপ্রিয় হয়েছে।
১৯৯৬ সালে দুই গবেষক—জে জন লেনন (জে জন লেনন) ও ম্যালকম ফোলি (ম্যালকম ফোলি)—প্রথম ‘ডার্ক টুরিজম’ শব্দটি ব্যবহার করেন।
ডার্ক-টুরিজম ডটকম (ডার্ক টুরিজম ডটকম)-এর প্রতিষ্ঠাতা পিটার হোহেনহাউস (পিটার হোহেনহাউস) বলেন—এ ভ্রমণ ideally হওয়া উচিত শ্রদ্ধাশীল, শিক্ষা–নির্ভর।
অনেকে আবার এসব স্থানকে ‘সেলফি স্পট’ বানিয়ে ফেলেন—যেমন ২০২৪ সালে আউশভিৎসে ১৮ লাখ মানুষের ভ্রমণ; কেউ স্মৃতিস্তম্ভে সম্মান জানান, আবার কেউ রেললাইনে দাঁড়িয়ে ছবি তোলেন।
সোশ্যাল মিডিয়ার দাপট
সস্তা বিমানের টিকিট আর সোশ্যাল মিডিয়ার রিল—দুই মিলে ডার্ক টুরিজম এখন দুনিয়া জুড়ে আলোচিত। প্রভাবশালীরা—লোগান পল (লোগান পল), হ্যারি জ্যাগার্ড (হ্যারি জ্যাগার্ড)—ইয়েমেন, ইরিত্রিয়া, আফগানিস্তান ঘুরে ভিডিও দেন, যেগুলো মিলিয়ন ভিউ পায়।

বুকিং ডটকম (বুকিং ডটকম) জানায়—জেন জেড ভ্রমণকারীদের ৬০% কোথায় যাবেন তা ঠিক করেন সোশ্যাল মিডিয়া দেখে; ৪৫% প্রভাবশালীদের ভিডিও দেখে অনুপ্রাণিত হন।
কেন যায় মানুষ?
অনেক তরুণ, বিশেষত ধনী দেশের, কখনো যুদ্ধ দেখেননি—তাই প্রত্যক্ষ অভিজ্ঞতা অর্জনের কৌতূহল প্রবল।
ইতালির তরুণ জিউলিও আর জার্মান সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার লুইস গাত্তি বলেন—সংবাদে দেখেই নয়, বাস্তব দেখে বুঝতেই তাদের সিরিয়া যাওয়া।
সিরিয়ান গাইড আলা সালামিয়া বলেন—এতে তারা দেশটিকে নিজের ভাষায় তুলে ধরতে পারেন।
রীতা বাদরান বলেন—“ট্যুরিস্টরা শুধু ছবি তুলে যায়, আর ট্রাভেলার যুদ্ধ বোঝে।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















