চীনের হেনান প্রদেশের একজন নারী নিজের পুত্রবধূকে কোমার মতো অবস্থায় পাঁচ বছর ধরে আগলে রেখেছেন। চিকিৎসা চালিয়ে যাওয়ার জন্য তিনি ধার নিয়েছেন এক কোটি ইউয়ান—বাংলাদেশি টাকায় প্রায় দেড় কোটি টাকারও বেশি। তাঁর এই আত্মত্যাগ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অসংখ্য মানুষের হৃদয় ছুঁয়েছে।
শাশুড়ির পাঁচ বছরের নিরলস লড়াই
হেনান প্রদেশের শিনসিয়াং এলাকার লিউ ঝেনইয়ান নামের এই নারী ২০২0 সালের ২৫ জুন এক সড়ক দুর্ঘটনার পর থেকে পুত্রবধূ ইউয়ানইয়ানের সেবায় নিয়োজিত। দুর্ঘটনায় ইউয়ানইয়ানের মাথা, মুখ, হাত, পেলভিসসহ শরীরের একাধিক স্থানে মারাত্মক আঘাত লাগে। চিকিৎসকেরা জরুরি ভিত্তিতে তাঁর মাথায় অস্ত্রোপচার করেন, কিন্তু কিছুদিন পর তিনি গভীর কোমায় চলে যান।
চার মাস পর সামান্য চেতনা ফিরে পেলেও এখনো তিনি মুখ খুলতে পারেন না, নিজের পোশাক বদলাতে পারেন না, শরীরের নাড়াচাড়া বা দৈনন্দিন কাজ কোনো কিছুই নিজের নিয়ন্ত্রণে করতে পারেন না।
হাসপাতালে দিন-রাত পাশে থাকা
দুর্ঘটনার পর প্রথম এক বছর লিউ ঝেনইয়ান হাসপাতালের মেঝেতে একটি অস্থায়ী বিছানা পেতে রাত কাটাতেন। তাঁর যত্ন এতটাই নিখুঁত ছিল যে অনেকে ভেবেছিলেন তিনি ইউয়ানইয়ানের জন্মদাত্রী মা। ইউয়ানইয়ান নিজে খেতে পারেন না বলে লিউ তার মুখ খুলে খাবার খাওয়ান। পরিচ্ছন্নতা পছন্দ করতেন বলে তিনি প্রতিদিন গোসল করিয়ে রাখেন এবং প্রয়োজন হলে পিঠে করে স্থান পরিবর্তন করান।

লিউ বলেন, “ডাক্তাররা বলেছিলেন মাত্র এক শতাংশ সম্ভাবনা আছে তাকে বাঁচিয়ে রাখার। কিন্তু হাসপাতালে এসে যখন ইউয়ানইয়ান আমাকে ‘মা’ বলে ডাকল, তখনই বুঝলাম—ওর পাশে থাকার দায়িত্ব আমারই।”
চিকিৎসার খরচে বাড়ির চরম সংকট
লিউয়ের ছেলে ও পুত্রবধূ ইউয়ানইয়ান হাইস্কুল থেকেই একে অপরকে চিনতেন। তাদের ১৫ বছরের দাম্পত্য জীবন ও দুটি সন্তান রয়েছে। এত বিপুল চিকিৎসা ব্যয়ের জন্য ধার-দেনায় জর্জরিত হয়ে পড়তে হয়েছে পরিবারকে। লিউ বলেন, “অনেক সময় ধার পাওয়া যাচ্ছিল না। তখন মনে হতো, ইশ, পুত্রবধূর জায়গায় যদি আমি শুয়ে থাকতাম! আমার ছেলে, তার স্ত্রী আর নাতি-নাতনিরা একসঙ্গে সুখে থাকুক—এই ছিল আমার কামনা।”
মায়ের প্রতিজ্ঞা, ছেলের অটুট সমর্থন
লিউ জানান, হাসপাতালে থাকা অবস্থায় তিনি ছেলেকে বলেছিলেন—“যদি ইউয়ানইয়ান না বাঁচে, তুমি যেন আর বিয়ে না করো। আমি নাতি-নাতনিদের সৎমা দিতে চাই না।” ছেলে তৎক্ষণাৎ এই শর্ত মেনে নেয়।
লিউ বলেন, তাঁর সঙ্গে পুত্রবধূর সম্পর্ক ছিল মেয়ে-মায়ের মতো। “আমার শাশুড়ি আমাকে যেমন স্নেহ করেছিলেন, তেমনই আমি পুত্রবধূকে দেখেছি।”

সাম্প্রতিক অস্ত্রোপচারে আবারও ঋণের বোঝা
দুর্ঘটনায় মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত ইউয়ানইয়ানের মাথার খুলির একটি অংশ পুনর্গঠনের জন্য সম্প্রতি আরেক দফা অস্ত্রোপচার প্রয়োজন হয়। এর জন্যও লিউকে আরও টাকা জোগাড় করতে হয়েছে।
তিনি বলেন, “ইউয়ানইয়ান সুন্দর থাকতে ভালোবাসে। যেহেতু সে নড়াচড়া করতে পারে না, আমিই তার ভরসা। কতদিনে পুরোপুরি সুস্থ হবে জানি না। তবে যতদিন লাগুক, আমি তার যত্ন নেওয়া ছাড়ব না।”
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















