জ্বালানি বাজারে রাজত্ব গড়ার পর নাইজেরিয়ার ব্যবসায়ী ফেমি ওটেডোলা এখন নেমেছেন দেশের সবচেয়ে বড় সংকট—বিদ্যুৎ ঘাটতি—দূর করার মিশনে। দেশের শক্তি কাঠামো বদলে দিতে তিনি গড়ে তুলছেন নতুন সাম্রাজ্য ‘গেরেগু পাওয়ার’।
জ্বালানি ব্যবসা থেকে শক্তি খাতে ঝুঁকির সিদ্ধান্ত
দীর্ঘদিন নাইজেরিয়ার জ্বালানি বাজারে আধিপত্য বিস্তার করেছেন ৬৩ বছর বয়সী বিলিয়নিয়ার ফেমি ওটেডোলা। ডিজেল সরবরাহ ব্যবস্থার দুর্বলতা দেখে তিনি ২০০৩ সালে ‘জেনন’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং অল্প সময়েই দেশের জ্বালানি খাতে শক্ত অবস্থান তৈরি করেন।
২০০7 সালে আফ্রিকা পেট্রোলিয়াম (পরবর্তীতে ফোরটে অয়েল) অধিগ্রহণের পর তিনি উঠে আসেন প্রথম সারির উদ্যোক্তাদের দলে। তবে ২০০৮ সালের বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দায় তেলের দাম ধসে গেলে প্রতিষ্ঠানটি কঠিন পুনর্গঠনের মধ্য দিয়ে যায়। পরবর্তীতে বাজার স্থিতিশীল হলে ২০১৯ সালে ওটেডোলা নিজের ৭৫% শেয়ার বিক্রি করে দেন।
ওটেডোলার মতে, দেশের আসল সমস্যা ও সম্ভাবনা দুটোই রয়েছে বিদ্যুৎ খাতে।
তিনি বলেন,
“ডাউনস্ট্রিম অয়েল ব্যবসা তার কাজ সম্পন্ন করেছে। ভবিষ্যৎ হলো বিদ্যুৎ উৎপাদনে। সেখানেই নাইজেরিয়ার উন্নয়নের চাবিকাঠি।”
২০১৩ সালে তিনি ‘গেরেগু পাওয়ার’ অধিগ্রহণ করেন। বিশেষজ্ঞদের পরামর্শে তিনি বিদ্যুৎ বিতরণ সংস্থার পরিবর্তে উৎপাদন খাতেই বিনিয়োগ করেন—যা তার দাবি অনুযায়ী, “বিলিয়ন বিলিয়ন ডলার ক্ষতি থেকে বাঁচিয়েছে।”
বর্তমানে গেরেগুর বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা ৪৩৫ মেগাওয়াট।
জনসংখ্যা ২৩ কোটির বেশি হলেও নাইজেরিয়ার প্রায় ৮ কোটি ৫০ লাখ মানুষ বিদ্যুৎবিহীন জীবন কাটায়—যা পুরো মিশরের জনসংখ্যার সমান।
দেশটির মোট উৎপাদন ক্ষমতা মাত্র ১৩,০০০ মেগাওয়াট, যেখানে দক্ষিণ আফ্রিকা ৫০,০০০ মেগাওয়াট নিয়ে সংগ্রাম করছে।
ওটেডোলা বলেন,
“গ্রিড ব্যর্থ হলেই ঘর-বাড়ি, হাসপাতাল, কারখানা সব বন্ধ। তখন পুরো দেশই ডিজেলের ওপর চলে—যা ব্যয়বহুল, অনির্ভরযোগ্য এবং অনিরাপদ।”
গেরেগুর ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা
ওটেডোলা জানান,
“আমরা গেরেগুকে বেসরকারি বিদ্যুৎ উৎপাদনের মানদণ্ডে পরিণত করতে চাই। চীনের স্টেট গ্রিড করপোরেশনসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক অংশীদারের সঙ্গে কাজ চলছে।”
লাভ প্রতিষ্ঠানেই পুনঃবিনিয়োগ করে উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানোর পরিকল্পনা রয়েছে।
আলিকো ড্যাঙ্গোটের বিশাল রিফাইনারি প্রকল্পের প্রশংসা করে তিনি বলেন,
“অনেকে তাকে পাগল ভাবত। এখন তার রিফাইনারি নাইজেরিয়ার জ্বালানি নিরাপত্তা বদলে দেবে।”
তবে ওটেডোলার মতে, দেশ এখনও তেলনির্ভরতা থেকে বের হতে পারেনি। কৃষি, প্রযুক্তি, অবকাঠামো—এসব খাতে বৈচিত্র্য আনাই হবে ভবিষ্যতের মূল শক্তি।
রাস্তাঘাট, রেল, বিমানবন্দরসহ বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়নকে তিনি ইতিবাচক পরিবর্তন হিসেবে দেখছেন।
ব্যবসার অনুকূল নীতি, বিনিয়োগ নিরাপত্তা ও নিয়মের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে পারলে নাইজেরিয়া আফ্রিকার সবচেয়ে আকর্ষণীয় বিনিয়োগগন্তব্যে পরিণত হবে বলে তার বিশ্বাস।
নাইজেরিয়ান উদ্যোক্তাদের প্রত্যাবর্তন: সম্ভাবনা ও শর্ত
ওটেডোলা মনে করেন,
“প্রবাসী উদ্যোক্তারা ফিরতে চাইবে, যদি দেশে টেকসই পরিবেশ থাকে—বিশ্বস্ত আইনব্যবস্থা, নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ এবং নিরাপদ বিনিয়োগ। দেশকে প্রথমে সেই আস্থা তৈরি করতে হবে।”
ওটেডোলার মতে, আফ্রিকাকে ঝুঁকিপূর্ণ বিনিয়োগগন্তব্য ভাবা একটি ভুল।
তার ভাষায়,
“ঝুঁকির আড়ালে বিশাল রিটার্ন লুকিয়ে থাকে। নাইজেরিয়ার শক্তি খাতেও সেই সম্ভাবনাই দেখেছি।”
জ্বালানি বাজার দখলের পর বিদ্যুৎ খাতে বিনিয়োগ—ফেমি ওটেডোলা আবার প্রমাণ করলেন, বড় ঝুঁকি না নিলে বড় সাফল্য আসে না। নাইজেরিয়ার ভবিষ্যৎ শক্তিক্ষেত্র নতুন উদ্যোক্তা-চিন্তার পথ দেখাচ্ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















