বছরের পর বছর ধরে ধারণা চলে এসেছে—পুরুষরা অসুস্থ হলে বাড়াবাড়ি করে, সামান্য ফ্লুতেই অতিরিক্ত অভিযোগ করে। তবে নতুন বড় আকারের গবেষণা বলছে, এই অভিযোগ পুরোপুরি সত্য নাও হতে পারে। সংক্রমণের ক্ষেত্রে পুরুষ ও নারীর শরীর ভিন্নভাবে প্রতিক্রিয়া দেখায়, এবং পুরুষরা সত্যিই কিছু ক্ষেত্রে বেশি গুরুতরভাবে আক্রান্ত হয়।
পুরুষদের সংক্রমণ কি বেশি গুরুতর?
একটি গবেষণায় প্রায় ৫০০ ফ্লু–রোগীর তথ্য বিশ্লেষণে দেখা গেছে, নারীদের তুলনায় পুরুষরা প্রায় দ্বিগুণ হারে আই–সি–ইউ–তে ভর্তি হয়েছেন। আরেকটি বিশ্লেষণে দেখা গেছে পুরুষদের মৃত্যুহার নারীদের তুলনায় ২৭–৫০% বেশি। দীর্ঘদিন গবেষকরা কারণ খুঁজছিলেন—এবার উত্তর মিলতে শুরু করেছে।
মাউস পরীক্ষায়ও দেখা গেল ‘ম্যান ফ্লু’
ল্যাব–পরীক্ষায় দেখা গেছে, সংক্রমিত পুরুষ ইঁদুর বেশি জ্বর, বেশি উপসর্গ এবং দীর্ঘসময় ভোগে। একই ভাইরাস পেলেও নারী ইঁদুরে উপসর্গ তুলনামূলক কম।
নারীদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কেন শক্তিশালী?
গবেষণা বলছে:
১. জীবনধারা
নারীরা বেশি স্বাস্থ্যসচেতন—টিকা গ্রহণ, হাত ধোয়া, সূর্যরশ্মি থেকে সুরক্ষা, চিকিৎসা নেওয়া—এসবেই তারা এগিয়ে।
২. বিবর্তনগত কারণ
ক্যামব্রিজ ইউনিভার্সিটির গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ শরীর ঐতিহাসিকভাবে প্রজননকে অগ্রাধিকার দিয়েছে, ইমিউন সিস্টেম উন্নয়নে নয়।
৩. জিনগত কাঠামো
নারীদের দুটি এক্স ক্রোমোজোম—যেখানে ইমিউন সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ বহু জিন রয়েছে। পুরুষের একটি মাত্র এক্স থাকে।
৪. হরমোনের প্রভাব
টেস্টোস্টেরন ইমিউন সেলের কার্যকারিতা কমায়—যা সংক্রমণে পুরুষকে দুর্বল করে তোলে।

অস্ট্রেলিয়ায় বড় গবেষণায় মিলল সবচেয়ে বড় রহস্য
স্প্যানিশ জেনেটিসিস্ট মারিয়া সোতেনা–রিওসের নেতৃত্বে ২০২৪ সালে ৯৮২ জন অস্ট্রেলীয়ের ১৩ লাখ ইমিউন সেল বিশ্লেষণ করা হয়। এখানেই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পার্থক্যটি ধরা পড়ে।
সি–ডি–এইট প্লাস টি–সেল, যা সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করে, বয়স বাড়ার সঙ্গে নারীদের শরীরে বাড়ে—কিন্তু পুরুষদের ক্ষেত্রে বাড়ে না।
এ কারণেই নারীরা দ্রুত সেরে ওঠে এবং ভাইরাস প্রতিরোধে শক্তিশালী প্রতিক্রিয়া দেখায়।
নারীদের সি–ডি–এইট প্লাস টি–সেলে ভাইরাস–ধ্বংসকারী মাইটোকন্ড্রিয়াল জিন বেশি সক্রিয়—যা তাদের ইমিউন সিস্টেমকে আরও কার্যকর করে।
কিন্তু শক্তিশালী ইমিউন সিস্টেম নারীদের জন্য ঝুঁকিও বাড়ায়
একই টি–সেল অতিমাত্রায় সক্রিয় হলে শরীরের নিজের কোষ আক্রমণ করতে পারে—ফলে অটো–ইমিউন রোগ।
পরিসংখ্যান বলছে, নারীরা এসব রোগে পুরুষদের তুলনায় চারগুণ বেশি আক্রান্ত হন।
নতুন গবেষণায় ভবিষ্যৎ চিকিৎসায় পরিবর্তনের ইঙ্গিত
বিজ্ঞানীরা মনে করেন:
- পুরুষদের জন্য বিশেষভাবে টি–সেল বৃদ্ধি–উদ্দীপক ভ্যাকসিন তৈরি করা যেতে পারে
- ইমিউনো–থেরাপির মাধ্যমে তাদের ভাইরাস–প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ানো সম্ভব
- নারীদের ক্ষেত্রে অটো–ইমিউন ঝুঁকি মাথায় রেখে চিকিৎসা পরিকল্পনা পরিবর্তন করা জরুরি
এভাবে লিঙ্গভেদে ভিন্ন ইমিউন প্রতিক্রিয়ার রহস্য খুলে যাচ্ছে—এবং ‘ম্যান ফ্লু’ নিয়ে দীর্ঘদিনের বিতর্কেরও বৈজ্ঞানিক জবাব মিলছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















