আফ্রিকার উপকূলীয় পরিবেশ দ্রুত ঝুঁকির মুখে। ম্যানগ্রোভ বন রক্ষা করে নীল-কার্বন ক্রেডিট বিক্রি এখন মহাদেশের ব্লু ইকোনমি ঘুরে দাঁড়ানোর সবচেয়ে সম্ভাবনাময় পথ হিসেবে দেখা দিচ্ছে।
নীল-কার্বনের শক্তি: আফ্রিকার নতুন সুযোগ
আফ্রিকার ব্লু ইকোনমি উন্নয়নের বড় সম্ভাবনা লুকিয়ে আছে ‘ব্লু কার্বন’ প্রকল্পে। এসব প্রকল্পে কোম্পানিগুলো কার্বন ক্রেডিট কিনে উপকূলীয় ম্যানগ্রোভ, সল্টমার্শ ও সীগ্রাস সংরক্ষণে অর্থায়ন করে।
ম্যানগ্রোভ বন সাধারণ বনাঞ্চলের তুলনায় দশ গুণ বেশি গতিতে কার্বন শোষণ করতে পারে। ঘন শিকড় ও পলি ধারণ ক্ষমতার কারণে এগুলো পৃথিবীর সবচেয়ে কার্যকর কার্বন সিঙ্ক হিসেবে পরিচিত। একই সঙ্গে ম্যানগ্রোভ তরুণ মাছের আবাসস্থল তৈরি করে এবং উপকূলকে বন্যা ও ক্ষয় থেকে রক্ষা করে।
কিন্তু সংকট বড়—শুধু নাইজার ডেল্টাই ১৯৮৮ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে ২৫% ম্যানগ্রোভ হারিয়েছে।
উপকূলের সংকট: কেন দরকার কমিউনিটিভিত্তিক সমাধান
ম্যানগ্রোভ ধ্বংসের অন্যতম কারণ হলো উপকূলীয় জীবিকা ব্যবস্থার ভাঙন।
সিয়েরা লিওনের অনেক এলাকায় মাছের মজুত কমে গেছে, মূলত অফশোর বাণিজ্যিক ট্রলারের অতিরিক্ত শিকারির কারণে। ফলে স্থানীয় জনগণ বাধ্য হচ্ছে ম্যানগ্রোভ কাঠ সংগ্রহে, যা বন ধ্বংসকে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে।
ওয়েস্ট আফ্রিকা ব্লু প্রকল্প রান্নার জন্য মাটির ইটের চুলা ও ম্যাংগ্রোভ কাঠবিহীন ফিশ-স্মোকিং ওভেন সরবরাহ করে কাঠের ব্যবহার ৬০% কমিয়েছে।
সফল নীল-কার্বন প্রকল্পে আয় তিন ভাগে যায়—
১) ডেভেলপার ও বিনিয়োগকারী
২) সরকার
৩) স্থানীয় কমিউনিটি
ঘানার কেতা লেগুন প্রকল্পে রাজস্বের ৩২% স্থানীয় ট্রাস্ট ফান্ডে যাচ্ছে, যার ব্যবহার নির্ধারণ করে স্থানীয় জনগণ। ইতোমধ্যে ৭২০টির বেশি কর্মসংস্থান তৈরি হয়েছে, ম্যানগ্রোভ পুনরোপণ থেকে জলচাষ পর্যন্ত নানা ক্ষেত্রে।
ক্রেডিটের দামও আশাব্যঞ্জক—২০২৪ সালে যুক্তরাজ্যের গ্রোসভেনর প্রতিটন ক্রেডিটের জন্য প্রায় ৫০ ডলার দিয়েছে, যা সাধারণ বনভিত্তিক কার্বন ক্রেডিটের তিন–দশ গুণ বেশি।
ঘানায় স্পষ্ট জমির মালিকানা, স্বচ্ছ আইন ও সহজ প্রকল্প কাঠামোর কারণে নীল-কার্বন দ্রুত এগোচ্ছে।
অন্যদিকে, আফ্রিকার বিশাল ম্যানগ্রোভ অঞ্চল থাকা সত্ত্বেও নাইজেরিয়ায় নিরাপত্তা ঝুঁকি ও সুশাসনের অভাবে বিনিয়োগ খুব কম।
বর্তমানে আফ্রিকার কার্বন প্রকল্পের মাত্র ২–৩% নীল–কার্বন, যেখানে বৈশ্বিক গড় ৫–১০%।
সমালোচনা থাকলেও অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করেন, ম্যানগ্রোভ রক্ষা করতে হলে এর অর্থনৈতিক মূল্য নির্ধারণ ছাড়া উপায় নেই।
ব্লু ফরেস্টের সিইও ভাহিদ ফোতুহি বলেন, “মূল্য না থাকলে ম্যানগ্রোভ কাটতেই থাকবে।”
কার্বন বাজার নিখুঁত না হলেও এটি এখনো সবচেয়ে কার্যকর উপায় স্থানীয়দের হাতে অর্থ পৌঁছে দিয়ে বন রক্ষায় উৎসাহিত করার।
অদূর ভবিষ্যৎ: নীল-অর্থনীতির পুনর্জাগরণ
আরও বেশি প্রকল্প চালু হলে বাজার হবে স্বচ্ছ, দাম হবে স্থিতিশীল। লক্ষ্য শুধু কার্বন ধরে রাখা নয়—উপকূলীয় অঞ্চলে দীর্ঘমেয়াদি নীল অর্থনীতি গড়ে তোলা।
ম্যানগ্রোভ পুনরুদ্ধার মানেই মাছের আবাস, জীববৈচিত্র্য বৃদ্ধি—এতে তৈরি হয় স্বনির্ভর ও টেকসই এক পরিবেশচক্র।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















