জাপানের অলংকারি মাছ নিশিকিগোই বা ‘সুইমিং জুয়েল’ এখন বিশ্বজুড়ে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। সবচেয়ে বড় উৎপাদনকারী অঞ্চল নিইগাতা এবার দক্ষিণ আমেরিকার বাজারে প্রবেশের পরিকল্পনা করেছে। দীর্ঘ সময় পরিবহনের সীমাবদ্ধতা দূর করতে নতুন প্রযুক্তি উন্নয়নে কাজ চলছে।
রপ্তানিতে রেকর্ড বৃদ্ধি
জাপানের অলংকারি মাছের রপ্তানি ২০২৪ সালে ৭.২ বিলিয়ন ইয়েনে পৌঁছায়, যা দেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ। চলতি বছরের জানুয়ারি–সেপ্টেম্বর মেয়াদে রপ্তানি ৩৪ শতাংশ বেড়ে ৬.১ বিলিয়ন ইয়েনে দাঁড়িয়েছে। বছর শেষে এই অঙ্ক ১০ বিলিয়ন ইয়েন ছুঁতে পারে বলে আশা করা হচ্ছে।
দক্ষিণ আমেরিকায় প্রবেশের সুযোগ
২০২৪ সালে আর্জেন্টিনা এবং ২০২৫ সালে ব্রাজিলে কোয়ারেন্টাইন প্রক্রিয়া অনুমোদন পাওয়ার পর দক্ষিণ আমেরিকায় রপ্তানি পথ খুলেছে। ব্রাজিলসহ এ অঞ্চলে নিশিকিগোই বেশ পরিচিত এবং চাহিদাও শক্তিশালী বলে মনে করছে নিইগাতা প্রশাসন।
নিইগাতা ২০৩২ অর্থবছর নাগাদ ৬ বিলিয়ন ইয়েন রপ্তানি আয়ের লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে, যা ২০২৪ সালের তুলনায় ৫০ শতাংশ বেশি।
বিদেশি ক্রেতাদের আগ্রহ
নভেম্বরের শুরুতে নিইগাতার ওজিয়ায় অনুষ্ঠিত একটি ট্রেড শোতে ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশের ক্রেতা অংশ নেন। শরৎকাল রপ্তানির শীর্ষ মৌসুম। একজন ব্রিটিশ ক্রেতা জানালেন, তিনি একটি মাছের জন্য ৫০ লাখ ইয়েন পর্যন্ত দিতে প্রস্তুত। নেদারল্যান্ডসের এক ক্রেতা আবার বললেন, বাজেটের কোনো সীমা নেই।
ওজিয়ার Isa Koi Farm–এর প্রেসিডেন্ট মিৎসুনোরি ইসা জানান, গত দুই বছরে বড় ও দামি মাছের লেনদেন বেড়েছে, বিশেষ করে লাস ভেগাসসহ বিদেশে বড় শো শুরু হওয়ার পর থেকে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনা বাজারে অনিশ্চয়তা
ইসা সতর্ক করে বলেন, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্কনীতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানিতে চাপ বাড়ছে। বছরের প্রথম নয় মাসে জাপানের মোট নিশিকিগোই রপ্তানির ৩২.৯ শতাংশ গেছে যুক্তরাষ্ট্রে।
চীন দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার (২০.৪ শতাংশ)। দুই দেশের ক্রমবর্ধমান উত্তেজনার কারণে উৎপাদকরা আশঙ্কা করছেন, ভবিষ্যতে চীনা বাজার সংকুচিত হতে পারে।
দীর্ঘ দূরত্ব পরিবহনের চ্যালেঞ্জ
দক্ষিণ আমেরিকায় সরাসরি ফ্লাইট না থাকায় সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্য দেশে ট্রানজিট লাগে। দীর্ঘ পরিবহনে মাছের পানি কার্বন ডাই–অক্সাইডে পূর্ণ হয়ে শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করে।
নিইগাতার গবেষণা প্রতিষ্ঠানের পরিচালক শো সাতো বলেন, মাছের নিঃশ্বাস থেকে পানিতে কার্বন ডাই–অক্সাইড বেড়ে গেলে মৃত্যুঝুঁকি বাড়ে।
৭২ ঘণ্টার পরিবহন সক্ষমতা তৈরির চেষ্টা
বর্তমানে মাছকে প্লাস্টিক ব্যাগে পানি ও অক্সিজেনসহ ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত নিরাপদ রাখা যায়। ২০২৫ অর্থবছর থেকে নিইগাতা পরিবহন সময় ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত বাড়ানোর পরীক্ষা শুরু করেছে। ব্যাগের ভেতর কার্বন ডাই–অক্সাইড শোষণকারী পদার্থ রাখা এবং হালকা অ্যানেসথেটিক ব্যবহার করে মাছকে ঘুমিয়ে রাখা—এ দুটি পদ্ধতি পরীক্ষায় আশাব্যঞ্জক ফল দিয়েছে।
২০২৬ সালেই ব্রাজিল ও আর্জেন্টিনায় পরীক্ষামূলক পরিবহন শুরু করার লক্ষ্য রয়েছে।

উৎপাদনে শ্রম সংকট ও দক্ষতা হস্তান্তরের সমস্যা
নতুন প্রজন্মকে প্রশিক্ষণ দেওয়া এবং পর্যাপ্ত শ্রমশক্তি পাওয়া—উৎপাদকদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। এই সমস্যা মোকাবিলায় এনটিটিআই ইস্ট নিইগাতার সঙ্গে যৌথভাবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে উৎপাদন প্রক্রিয়া সহজ করার উদ্যোগ নিয়েছে।
এআই দিয়ে মাছের লিঙ্গ শনাক্তকরণ
পুরুষ–মহিলা মাছ আলাদা করা উৎপাদকদের জন্য কঠিন। অভিজ্ঞ কৃষকরাও মাত্র ৪০–৬০ শতাংশ সঠিকভাবে শনাক্ত করতে পারেন। এআই মডেলকে মাছের অণ্ডকোষ ও ডিম্বাশয়ের আল্ট্রাসাউন্ড ছবি দিয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে, যাতে ৮০ শতাংশের বেশি নির্ভুলতায় লিঙ্গ শনাক্ত করা যায়। ক্রেতাদের জন্য মাছের লিঙ্গ একটি গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হওয়ায় এটি শিল্পে বড় পরিবর্তন আনতে পারে।
#tags | business trends | japan | fish export | niigata | south america | nishikigoi
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















