উদ্ধার তৎপরতা ও সতর্কতা ব্যবস্থার বাস্তব পরীক্ষা
উত্তর জাপানের উপকূলের অদূরে ৭.৫ মাত্রার শক্তিশালী ভূমিকম্পে অন্তত দুই ডজন মানুষ আহত হয়েছেন এবং হোক্কাইডো উপকূলে প্রায় ৬০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত সুনামি ঢেউ আঘাত হেনেছে। কাঁপুনি শুরুর পরপরই কর্তৃপক্ষ উপকূলজুড়ে সুনামি সতর্কতা জারি করে, সড়ক ও কিছু ট্রেন চলাচল বন্ধ করে এবং বাসিন্দাদের দ্রুত উঁচু এলাকায় বা নির্ধারিত আশ্রয়কেন্দ্রে যেতে নির্দেশ দেয়। তাৎক্ষণিকভাবে বড় ধরনের ভবন ধসের খবর না মিললেও ভাঙা শোপিস, ছাদ থেকে ঝুলে থাকা প্লাস্টার এবং দোকানের গ্লাসের জানালা ভেঙে পড়ার ছবিতে স্থানীয় আতঙ্ক স্পষ্ট হয়েছে।
২০১১ সালের তোহোকু দুর্যোগের মতো অতীতের অভিজ্ঞতা থেকে জাপান যে উন্নত সতর্কতা নেটওয়ার্ক ও কঠোর বিল্ডিং কোড গড়ে তুলেছে, এই ভূমিকম্প তা আরেকবার যাচাই করল। কর্তৃপক্ষ বলছে, সতর্কতা ব্যবস্থা বেশিরভাগ জায়গায় ঠিকমতো কাজ করেছে এবং উপকূলের মানুষ কয়েক মিনিট সময় পেয়েছেন উঁচু স্থানে চলে যাওয়ার জন্য। তবে স্থানীয় মেয়র ও উদ্ধারকর্মীরা কিছু দুর্বলতার কথা বলছেন—বৃদ্ধ বাসিন্দাদের ধীরে সরে যাওয়া, সরু উপকূলীয় সড়কে যানজট, আর বিদেশি পর্যটকদের সাইরেন ও নির্দেশনা বুঝতে না পারা ইত্যাদি। আগামী দিনগুলোতে সেতু, বন্দর ও বিদ্যুৎ কাঠামোতে লুকিয়ে থাকা ক্ষতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখবেন প্রকৌশলীরা।
আঞ্চলিক ভূমিকম্প ঝুঁকি ও ভবিষ্যৎ আলোচনার দিক
তাৎক্ষণিক ক্ষয়ক্ষতির বাইরে এই ভূমিকম্প পুরো এশিয়া-প্যাসিফিক অঞ্চলের ভূমিকম্প ঝুঁকি নিয়ে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে। আবহাওয়া কর্মকর্তা জানিয়েছেন, শক্তিশালী আফটারশক বা পরাঘাত কয়েকদিন ধরে চলতে পারে, যা পাহাড়ি এলাকায় ভূমিধসের আশঙ্কা বাড়িয়ে দিচ্ছে। জ্বালানি নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো কাছাকাছি বিদ্যুৎকেন্দ্র ও এলএনজি টার্মিনালের নিরাপত্তা যাচাই করছে, যাতে কোনোভাবেই বিদ্যুৎ সরবরাহ ব্যাহত না হয়।
টোকিওভিত্তিক কূটনীতিকদের মতে, উত্তরে বড় ধরনের বিদ্যুৎ বিভ্রাট বা পারমাণবিক দুর্ঘটনা হলে তা গাড়ির যন্ত্রাংশ থেকে শুরু করে সেমিকন্ডাক্টর উপকরণ পর্যন্ত পুরো আঞ্চলিক সাপ্লাই চেইনে প্রভাব ফেলতে পারে। পাশাপাশি প্রশ্ন উঠছে, রিং অব ফায়ারের অন্য দেশগুলো কি একই ধরনের ধাক্কা সামলাতে প্রস্তুত, নাকি জাপানের মতো কঠোর বিল্ডিং কোড আর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অবকাঠামো সেখানে অনুপস্থিত। দেশের ভেতরেও বিতর্ক ঘুরে ফিরবে ছোট উপকূলীয় শহরগুলোতে কতটা বিনিয়োগ হচ্ছে, যেখানে জনসংখ্যা কমে যাওয়ায় সমুদ্রপ্রাচীর, উল্লম্ব আশ্রয় টাওয়ার বা আধুনিক যোগাযোগব্যবস্থা টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে পড়ছে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















