কায়রোর ইডেক্স— ইজিপ্ট ডিফেন্স এক্সপো—এ আফ্রিকা ও মধ্যপ্রাচ্যের দ্রুত বাড়তে থাকা ড্রোন যুদ্ধব্যবস্থার বাজার দখলে প্রতিযোগিতায় নেমেছে বিশ্বের নানা দেশের প্রতিরক্ষা প্রতিষ্ঠান। ইউক্রেন যুদ্ধ ড্রোন প্রযুক্তিকে যে গতিতে এগিয়ে নিয়েছে, তা আফ্রিকার বাজারে বড় সুযোগ তৈরি করেছে।
ইডেক্স মেলায় ড্রোন প্রযুক্তির ঝলক
চার দিনব্যাপী এই ইজিপ্ট ডিফেন্স এক্সপো (ইডেক্স)–এ প্রদর্শন করা হয় নানা ধরনের আধুনিক সামরিক প্রযুক্তি—
কোয়াডকপ্টার, ইলেকট্রোম্যাগনেটিক রাইফেল, এআই–পাওয়ার্ড ন্যাভিগেশন সিস্টেমসহ বহু পণ্য।
ইউক্রেন, ইথিওপিয়া, সুদান, লিবিয়া ও ইয়েমেনের সংঘাতে মানববিহীন আকাশযান—ইউএভি (UAV) দ্রুত সস্তা ও কার্যকর অস্ত্র হিসেবে প্রমাণিত হওয়ায় এখন দেশগুলো বিলিয়ন ডলার ব্যয়ে নতুন ড্রোন কিনছে।
প্রদর্শনীতে উপস্থিত ছিলেন কেনিয়া, জিম্বাবুয়ে, রুয়ান্ডা, আজারবাইজান, সৌদি আরবসহ অনেক দেশের সামরিক প্রতিনিধি। রাশিয়া, চায়না, ইউনাইটেড স্টেটস, ইন্ডিয়া, পাকিস্তান, সাউথ কোরিয়া, তুর্কি, ইউএই–সহ বহু কোম্পানি অংশ নেয়।
মিশরের লক্ষ্য: ডিফেন্স হাবে পরিণত হওয়া
মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার সংযোগস্থলে অবস্থানকারী মিশর নিজস্ব সামরিক শিল্পকে বড় রপ্তানি কেন্দ্রে পরিণত করতে চায়। দেশটি প্রতি বছর ইউএস (US) সরকারের কাছ থেকে প্রায় ১.৩ বিলিয়ন ডলার সহায়তা পায়, যা সামরিক শিল্প সম্প্রসারণে সহায়ক।
ইডেক্সে ৪৫০টির বেশি কোম্পানি অংশ নেয়—যা দক্ষিণ আফ্রিকার আফ্রিকা অ্যারোস্পেস অ্যান্ড ডিফেন্স এক্সপো–র সমপর্যায়ের একটি আয়োজন।
মিশরের রাষ্ট্রীয় আরব অর্গানাইজেশন ফর ইন্ডাস্ট্রিয়ালাইজেশন চীনের নরিনকো (Norinco)–র সঙ্গে রকেট–সজ্জিত ড্রোন তৈরির সমঝোতা স্মারক সই করেছে।
এছাড়া ফ্রান্সের দাসো অ্যাভিয়েশন (Dassault Aviation)–এর সঙ্গে রাফাল ফাইটার জেট–এর যন্ত্রাংশ উৎপাদনেও চুক্তি হয়েছে।
মিশরের ‘জব্বার’ কামিকাজে ড্রোন আন্তর্জাতিক বাজারে
মিশরের প্রতিরক্ষা কোম্পানি অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল গ্রুপ তাদের একবার ব্যবহারযোগ্য জাব্বার–ফ্যামিলি কামিকাজে ড্রোন তিনটি গ্রাহকের কাছে বিক্রির চুক্তি করেছে।
কোম্পানির পরামর্শক মোহাম্মদ আল–সাইয়্যেদ বলেন,
“এ ধরনের শক্তিশালী প্রযুক্তি বৈশ্বিক বাজারে পৌঁছানো আমাদের জন্য গর্বের।”
২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত কোম্পানিটি আফ্রিকার বহু প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সাথে অংশীদারিত্বে কাজ করে।
ইউক্রেন যুদ্ধ ড্রোন প্রযুক্তিকে ত্বরান্বিত করেছে
ইডেক্সে প্রদর্শিত অনেক প্রযুক্তিই ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্রে পরীক্ষিত অথবা সেখান থেকে অনুপ্রাণিত।
রেড ক্যাট হোল্ডিংস (Red Cat Holdings)–এর মার্কেটিং ভাইস প্রেসিডেন্ট স্ট্যান নওয়াক বলেন—
“ইউক্রেন যুদ্ধক্ষেত্র এখন যেন একটি বাস্তব পরীক্ষাগার। প্রযুক্তি অবিশ্বাস্য গতিতে এগোচ্ছে।”
সংস্থাটি মার্কিন সামরিক বাহিনীকে সার্ভেইল্যান্স ড্রোন সরবরাহ করে এবং সৌদি আরব, মিশর, জর্ডান ও ইউএই–কে গ্রাহক হিসেবে লক্ষ্য করছে।
কেনিয়ায় রাইনো পোচার দমনে তাদের ড্রোন ব্যবহার করা হয়।
লাতভিয়ার ইরেজার (Eraser) কোম্পানিও প্রথমবার ইডেক্সে অংশ নিয়ে নতুন বাজার খুঁজছে।
ড্রোন প্রতিরোধ প্রযুক্তির চাহিদা বেড়েছে
ড্রোনের পাশাপাশি কাউন্টার–ড্রোন প্রযুক্তিও বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে।
এগুলো অন্তর্ভুক্ত—
যানবাহন–ভিত্তিক জ্যামার, ফিউচারিস্টিক লেজার অস্ত্র, মাইক্রোওয়েভ ইন্টারসেপ্টর ইত্যাদি।

চীনের চায়না ইলেকট্রনিক্স টেকনোলজি গ্রুপ কর্পোরেশন (CETGC) তাদের স্কাই ডোম (Sky Dome) সিস্টেম প্রদর্শন করে, যা মিসাইল, লেজার, মাইক্রোওয়েভ ও ইন্টারসেপ্টর ব্যবহার করে ড্রোন ধ্বংস করতে পারে।
ভারতের কমল্যাবস (Kommlabs) প্রদর্শন করে ড্রোন ক্যাপচার সিস্টেম, যেখানে নেট–যুক্ত বিশেষ ড্রোন স্বয়ংক্রিয়ভাবে শত্রু ড্রোন ধরে মাটিতে নামায়।
সিইও করেনবীর সিংহ বলেন—
“অনেক জায়গায় ড্রোন বোমা বহনের জন্য ব্যবহার হচ্ছে—এটি খুব দ্রুত বড় হুমকিতে পরিণত হতে পারে।”
জ্যামিং প্রতিরোধে এআই–নেভিগেশন
তুর্কি ও চীনের কোম্পানিগুলো প্রচলিত জ্যামার দেখালেও আজারবাইজানের সাইনাপলাইন (Synapline) প্রদর্শন করে এমন এআই–পাওয়ার্ড ন্যাভিগেশন সিস্টেম, যা জিপিএস জ্যামিংয়ের মধ্যেও ড্রোনকে চালাতে সক্ষম।
প্রকৌশলী আগিল বিলালভ বলেন—
“আফ্রিকার বাজারে আমাদের বড় আশা। আগামী বছর আমরা আন্তর্জাতিক প্রোডাকশন শুরু করতে চাই।”
কী–ফ্রেজ:
আফ্রিকা ড্রোন বাজার ইডেক্স মিশর
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















