গত বছরের ধান, ভুট্টা ও গম উৎপাদনকারী নাইজেরিয়ার হাজারো কৃষক এখনো ক্ষতির বোঝা বইছেন। ফেডারেল সরকারের নীতি পরিবর্তনের ফলে বাজারে সর্গাম, ব্রাউন রাইস, গম ও মকাই আমদানি অনুমোদন দেওয়া হলে স্থানীয় শস্যের দাম হঠাৎ পড়ে যায়—ফলে কৃষকের বিনিয়োগের কোটি কোটি নাইরা ডুবে গেছে।
Weekend Trust–এর কানো ও জিগাওয়ায় থাকা প্রতিবেদকেরা জানাচ্ছেন—এখনও অনেক কৃষক ভেজা মৌসুমের সেই ক্ষতির ধাক্কা সামলে উঠতে পারেননি। স্বাভাবিকভাবে এই সময়টায় জমি পরিষ্কার, সার–বীজ কেনা, সেচনালার সংস্কার, বীজ সংগ্রহ—এসব নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটে। কিন্তু এবার মাঠ প্রায় ফাঁকা, কৃষকের আগ্রহ নেই।
ভেজা মৌসুমের লাভেই চলে শুষ্ক মৌসুম—এবার সেই ভরসাই নেই
অনেক কৃষক ভেজা মৌসুমের আয়ে ভর করে শুষ্ক মৌসুমের সেচনির্ভর চাষাবাদ করেন। কিন্তু এবার পণ্যের দাম এতটাই কমে গেছে যে বাণিজ্যিক কৃষকেরাও বিনিয়োগে অনাগ্রহী।
কানোর কৃষক আলহাজি সানি উসমান কুতামা আগে বছরে ৩০০ বস্তা মকাই উৎপাদন করতেন। এবার তিনি বলেন—
“শুষ্ক মৌসুমের খরচ তুলতে বাধ্য হয়ে ৮০ বস্তা মকাই বিক্রি করেছি মাত্র ২৫,০০০ নাইরায়। এই দামে কিছুই পাওয়া যায় না। এত ক্ষতির পর অনেকেই আর জমিতে ফিরতে চাচ্ছে না। এতে দেশের খাদ্যনিরাপত্তাই বিপদে পড়বে।”
বাগওয়াই সেচ এলাকায় দেখা গেছে—অনেক জমি এখনও ঝোপঝাড়ে ঢাকা। পেঁয়াজ, টমেটো, গম—যেগুলো সাধারণত এই মৌসুমেই চাষ হয়—এখনও কৃষকের হাত লাগেনি।

সার–বীজ–জ্বালানির দাম বাড়ায় দুরবস্থা
মালাম মাইকানো ফায়ামফায়াম বলেন—
“ভেজা মৌসুমের ক্ষতি সামলাতেই হিমশিম। শুষ্ক মৌসুমে চাষ করব কী দিয়ে? সার ৬০,০০০ নাইরা, ডিজেল–বীজের দাম আরও বেশি—এ অবস্থায় চাষ অসম্ভব।”
তিনি জানান, ছোট কৃষকেরা উৎপাদন ব্যয় তুলতে না পেরে ধীরে ধীরে খাত ছাড়তে বাধ্য হচ্ছেন—যা দেশের খাদ্যসরবরাহ চেইনকে দুর্বল করছে।
গম, পেঁয়াজ, মরিচ উৎপাদনেও অনিশ্চয়তা
গমচাষি আলহাজি শেহু বেল্লো গারুন মালাম বলেন—গম উৎপাদন দেশজুড়ে কমছে, আর এবার আশঙ্কা আরও বেশি। অনেক কৃষক ঝুঁকি নিতে চাইছেন না।
“যারা বীজ কোম্পানির সঙ্গে চুক্তিতে আছেন তারা কিছুটা কাজ শুরু করেছেন, কিন্তু ব্যক্তিগত কৃষকেরা দ্বিধায়। চাষ এখন এক ধরনের জুয়া।”
পেঁয়াজচাষি মালাম আব্বা মুসা বলেন—
“জ্বালানি, সার, বীজ—সবকিছুর দাম আকাশছোঁয়া। গত মৌসুমে মরিচ উৎপাদনকারীরা মারাত্মক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। পেঁয়াজচাষিও বীজ সংকটে পড়েছি। কৃষকেরা সত্যিই এক ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে আছেন।”
ক্ষতির চাপ, ক্রমাগত ব্যয় বৃদ্ধি এবং বাজার অনিশ্চয়তা—এই তিন আঘাতে নাইজেরিয়ার শুষ্ক মৌসুমের খাদ্য উৎপাদন এখন বড় সংকটে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















