লন্ডনে কম বেতন, বেশি খরচ—ঋণের ফাঁদে ওউয়েন
লন্ডনে একটি কনস্ট্রাকশন কোম্পানিতে ১৮ বছর বয়সে প্রথম মার্কেটিং–এর চাকরি পান ওউয়েন উইলিস। তার অ্যাপ্রেন্টিসশিপ বেতন ছিল বছরে ১৪,৪০০ পাউন্ড (১৯,১৭৪ ডলার)। কিন্তু লন্ডনের উচ্চ ব্যয়ের তুলনায় এটি খুব দ্রুতই অপ্রতুল প্রমাণ হয়। ভাড়াই নিয়ে নিত তার হাতে থাকা আয়ের দুই–তৃতীয়াংশের বেশি। ফলে মাত্র ২৩ বছর বয়সেই তিনি প্রায় ২০,০০০ পাউন্ড ঋণে ডুবে যান।
বাঁচার উপায় হিসেবে তিনি ক্রেডিট কার্ড–এর ওপর নির্ভর করতে শুরু করেন। ধীরে ধীরে সেই ঋণ জমতে থাকে। তিনি বলেন, “এটা একটু একটু করে বাড়তেই থাকে। যত বেশি ঋণে যাই, তত কম পরিশোধ করতে পারতাম।” বন্ধুরাও একই পরিস্থিতিতে থাকায় বিষয়টি তার কাছে স্বাভাবিক হয়ে গিয়েছিল। অচিরেই তিনি তার সব ওভারড্রাফট ও ক্রেডিট কার্ডের সীমা শেষ করে ফেলেন।
নিজের আর্থিক সংকট লুকালেন না, বরং টিকটকেই বললেন গল্প
নিজের সংকট আড়াল না করে ওউয়েন সিদ্ধান্ত নেন তার আর্থিক যাত্রার অভিজ্ঞতা অনলাইনে শেয়ার করবেন। টিকটক ক্রিয়েটর রিওয়ার্ডস প্রোগ্রাম–এর সহায়তায় তিনি মাসে প্রায় ৫,০০০ পাউন্ড আয় করতে শুরু করেন—যা আজকের তরুণদের মধ্যে দ্রুত বাড়তে থাকা একটি প্রবণতা, যেখানে তারা সোশ্যাল মিডিয়ায় আর্থিক পরামর্শ দেয় ও নেয়।
পাঁচ মাসের মধ্যেই ওউয়েন পুরো ঋণ পরিশোধ করতে সক্ষম হন। তার খরচের অভ্যাসও বদলে যায়। তিনি বলেন, “এখন আমি আরও উদ্দেশ্য নিয়ে খরচ করি, সাপ্তাহিকভাবে যে–কোনো আকস্মিক আগ্রহে টাকা খরচ করি না।”
বড় ছবিটা: কেন জেন জেড বেশি ঋণে?
২০২৪ সালের ট্রান্সইউনিয়ন স্টাডি বলছে—জেন জেড তাদের ২০–এর দশকের প্রথম দিকে মিলেনিয়ালদের তুলনায় বেশি হারে ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার করে। প্রায় অর্ধেক জেন জেড (৪৮%) এবং মিলেনিয়াল (৪৬%) মনে করে তারা আর্থিকভাবে নিরাপদ নয়। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে—এন্ট্রি–লেভেল চাকরি কমে যাওয়া। র্যান্ডস্ট্যাডের এক রিপোর্ট জানায়, অনেক তরুণকে তাদের দীর্ঘমেয়াদি ক্যারিয়ার লক্ষ্যের সঙ্গে না–মেলা চাকরি নিতে হচ্ছে।

আর্থিক বিশেষজ্ঞের পরামর্শ: প্রথমেই নিজেকে টাকা দিন
ফিনান্সিয়াল কোচ ব্রায়ান মিচেলও কম আয়ের সময় দুইটি ক্রেডিট কার্ড ম্যাক্স–আউট করার অভিজ্ঞতা পেয়েছিলেন। এখন তিনি মানি কোচ। তার মতে, আর্থিক শৃঙ্খলা গঠনের চাবিকাঠি হলো অভ্যাস। তিনি বলেন, “মানুষ যা পায় তার সঙ্গে মানিয়ে নেয়। বেতন বাড়লে যেমন নতুন অবস্থাকে স্বাভাবিক মনে হয়, তেমনি উল্টো দিকেও সম্ভব। প্রথমেই নিজেকে টাকা দিন, আলাদা করে রাখুন—তারপর বাকি অংশে মানিয়ে নিন। আমার কাছে এটি গোল্ডেন রুল।”
শেখার মূল বিষয়গুলো
নগদে যেমন হিসাব রাখতেন, তেমনই ভাবুন
ওউয়েন বলেন, কার্ডে খরচ করলে তা বাস্তব মনে হয় না। যদি সেই পুরো টাকা নগদ থাকত, সিদ্ধান্ত ভিন্ন হতে পারত।
যা করতে পারেন, তাতে মন দিন
মিচেল বলেন, “আমি ইন্টারনেট থেকে আয় করি। আমাদের বাবা–মায়েরা এমন সুযোগ পাননি।” সুযোগ খুঁজে আয় বাড়ান।
বড় কেনাকাটা নিয়ে রাত কাটান
নতুন লোফারস বা লেদার জ্যাকেট কিনতে মন চাইলে একদিন বা এক সপ্তাহ অপেক্ষা করুন। প্রয়োজন নাকি শুধু ইচ্ছে—বুঝে নিন। প্রয়োজন না হলে খরচ করবেন না।
#ক্রেডিটকার্ডঋণ #ঋণমুক্তি #ওউয়েনউইলিস #টিকটকআয় #জেনজেডসংকট #আর্থিকশৃঙ্খলা #অনলাইনআয় #বাজেটিং #সঞ্চয় #ব্যক্তিগতঅর্থনীতি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















