০৫:৩৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫
ইউরোপীয় জোটের বিরুদ্ধে ইন্টেল, জারি রইল অ্যান্টিট্রাস্ট জরিমানা ফান্ডিং সংকটে জাতিসংঘের মানবাধিকার বিভাগ ‘সারভাইভাল মোডে’ আইএমএফ জানালো, চীনের অর্থনৈতিক মডেল বদলাতে হবে — বাড়লো প্রবৃদ্ধি আগে ভেঞ্চার গ্লোবাল এলএনজি–র বিরুদ্ধে শেলের অভিযোগ অকার্যকর, পাল্টা প্রতিশ্রুতি নোবেল শান্তি পুরস্কার পাওয়া মারিয়া করিনা মাচাদো কারো দেখা পেলেন না অস্ট্রেলিয়া–নিউজিল্যান্ডের সেরা ৩০০ গানের তালিকা, আলোচনায় লর্ড থেকে কাইলি অস্ট্রেলিয়ায় ১৬ বছরের কম বয়সীদের জন্য সোশ্যাল মিডিয়া ‘অফ’, বিপাকে কিশোর ইনফ্লুয়েন্সাররা ট্রাম্পের নবায়নযোগ্যবিরোধী বক্তৃতার মাঝেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমুদ্রবাতাসের জোয়ার নিউরআইপিএসে এআই দৌড়ের নতুন মানচিত্র, গুগলের জোরালো ঝাঁপ থাই-কাম্বোডিয়া সীমান্তে আবারও গোলাগুলি, নিরাপদ আশ্রয়ে লাখো মানুষ

ট্রাম্পের নবায়নযোগ্যবিরোধী বক্তৃতার মাঝেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমুদ্রবাতাসের জোয়ার

ভিয়েতনাম থেকে ফিলিপাইন, নতুন দিগন্ত

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ব্যয়–বৃদ্ধি ও নীতিগত অনিশ্চয়তায় অফশোর উইন্ড বা সমুদ্রবাতাস থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ধাক্কা খেলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এক ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ এ অঞ্চলের একাধিক উপকূলীয় দেশে সমুদ্রের তুলনামূলক অগভীর জল, শক্তিশালী বাতাস ও দ্রুত বাড়তে থাকা বিদ্যুৎ চাহিদাকে সামনে রেখে নতুন প্রকল্পের সারি তৈরি হচ্ছে। কয়লা নির্ভরতা কমিয়ে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে আগ্রহী সরকারগুলো এই খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য নীতি–সহায়তা ও প্রণোদনা দিতে শুরু করেছে।

Solar panels work near wind turbines in Quy Non, Vietnam on June 11, 2023. (AP Photo/Minh Hoang, File)

আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানিগুলোর চোখে এটি তুলনামূলক কম খরচে নতুন সাপ্লাই চেইন ও বন্দর অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, টারবাইন সংযোজন, সামুদ্রিক নির্মাণ ও গ্রিড সংযোগ–প্রকৌশলে নিজস্ব দক্ষতা তৈরি করা যাবে। তবে সবকিছু এখনো সুসংহত নয়; সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ও মুদ্রা–ঝুঁকি বাড়ায় অনেক প্রকল্পের অর্থায়ন কাঠামো নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করছেন, জেলে সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষা করে যেন প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়া হয় এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব কমাতে স্পষ্ট গাইডলাইন থাকা জরুরি।

ক্লাইমেট সঙ্কটে ভিন্ন সুর

এই আঞ্চলিক অগ্রযাত্রা স্পষ্টভাবে ধাক্কা খায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে জোরদার হওয়া নবায়নযোগ্যবিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে। নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে তিনি সমুদ্রবাতাস প্রকল্পকে ব্যয়বহুল, বিশ্রী ও বন্যপ্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বলে দাবি করছেন, এমন সময়ে যখন বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করছেন– নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বিলম্বিত হলে আরও তীব্র বন্যা, তাপপ্রবাহ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে। জলবায়ু প্রভাবের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কাছে এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ইঙ্গিত দিচ্ছে, কেবল একক শক্তির ওপর নির্ভর করলে ‘গ্রিন ফাইন্যান্স’ ও প্রযুক্তি সহযোগিতার ভবিষ্যৎ সবসময়ই অনিশ্চিত থেকে যাবে।

FILE -Windmills are seen at Ilocos Norte province, northern Philippines on May 6, 2024. (AP Photo/Aaron Favila, File)

নীতিবিশেষজ্ঞদের মতে, ঘোষিত সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের নীতি–সামঞ্জস্যের ওপর। একদিকে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন আর অন্যদিকে অফশোর উইন্ডের বড় লক্ষ্য ঘোষণা—এই দ্বৈত বার্তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমাতে পারে। একই সঙ্গে পুরোনো ট্রান্সমিশন লাইন সংস্কার, দীর্ঘ পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রক্রিয়া ও সীমান্ত–পেরোনো বিদ্যুৎ বাণিজ্যের নিয়মকানুনও বড় চ্যালেঞ্জ। তবু ঘোষিত প্রকল্পগুলোর একটি অংশও যদি সফল হয়, তবে জ্বালানি আমদানিনির্ভরতা কমবে, দাম ওঠানামা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সমুদ্র–বন্দর থেকে শুরু করে প্রকৌশল–কর্মসংস্থানে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় দেশগুলো—বাংলাদেশসহ—এখন গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই পরীক্ষাগুলো কতটা সফল হয়।

FILE -A wind turbine is seen at the booth of ETEK Technology Joint Stock company during Entech Hanoi 2009, an international trade fair on energy efficiency and the environment, at the Giang Vo Exhibition Center in Hanoi, Vietnam, June 18, 2009. (AP Photo/Chitose Suzuki, File)

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউরোপীয় জোটের বিরুদ্ধে ইন্টেল, জারি রইল অ্যান্টিট্রাস্ট জরিমানা

ট্রাম্পের নবায়নযোগ্যবিরোধী বক্তৃতার মাঝেও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় সমুদ্রবাতাসের জোয়ার

০৪:১৮:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ ডিসেম্বর ২০২৫

ভিয়েতনাম থেকে ফিলিপাইন, নতুন দিগন্ত

ইউরোপ ও উত্তর আমেরিকায় ব্যয়–বৃদ্ধি ও নীতিগত অনিশ্চয়তায় অফশোর উইন্ড বা সমুদ্রবাতাস থেকে বিদ্যুৎ প্রকল্পগুলো ধাক্কা খেলেও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ায় এক ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। অ্যাসোসিয়েটেড প্রেসের বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, ভিয়েতনাম, ফিলিপাইনসহ এ অঞ্চলের একাধিক উপকূলীয় দেশে সমুদ্রের তুলনামূলক অগভীর জল, শক্তিশালী বাতাস ও দ্রুত বাড়তে থাকা বিদ্যুৎ চাহিদাকে সামনে রেখে নতুন প্রকল্পের সারি তৈরি হচ্ছে। কয়লা নির্ভরতা কমিয়ে নির্ভরযোগ্য বিদ্যুৎ সরবরাহ বজায় রাখতে আগ্রহী সরকারগুলো এই খাতে বিনিয়োগকারীদের জন্য নীতি–সহায়তা ও প্রণোদনা দিতে শুরু করেছে।

Solar panels work near wind turbines in Quy Non, Vietnam on June 11, 2023. (AP Photo/Minh Hoang, File)

আন্তর্জাতিক জ্বালানি কোম্পানিগুলোর চোখে এটি তুলনামূলক কম খরচে নতুন সাপ্লাই চেইন ও বন্দর অবকাঠামো গড়ে তোলার সুযোগ। স্থানীয় ব্যবসায়ীরা আশা করছেন, টারবাইন সংযোজন, সামুদ্রিক নির্মাণ ও গ্রিড সংযোগ–প্রকৌশলে নিজস্ব দক্ষতা তৈরি করা যাবে। তবে সবকিছু এখনো সুসংহত নয়; সুদের হার বেড়ে যাওয়ায় ও মুদ্রা–ঝুঁকি বাড়ায় অনেক প্রকল্পের অর্থায়ন কাঠামো নতুন করে সাজাতে হচ্ছে। পরিবেশবিদরা সতর্ক করছেন, জেলে সম্প্রদায়ের মতামত উপেক্ষা করে যেন প্রকল্প অনুমোদন না দেওয়া হয় এবং সামুদ্রিক জীববৈচিত্র্যের ওপর প্রভাব কমাতে স্পষ্ট গাইডলাইন থাকা জরুরি।

ক্লাইমেট সঙ্কটে ভিন্ন সুর

এই আঞ্চলিক অগ্রযাত্রা স্পষ্টভাবে ধাক্কা খায় সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন করে জোরদার হওয়া নবায়নযোগ্যবিরোধী বক্তব্যের সঙ্গে। নির্বাচনী সমাবেশগুলোতে তিনি সমুদ্রবাতাস প্রকল্পকে ব্যয়বহুল, বিশ্রী ও বন্যপ্রাণীর জন্য ক্ষতিকর বলে দাবি করছেন, এমন সময়ে যখন বিজ্ঞানীরা বারবার সতর্ক করছেন– নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে বিনিয়োগ বিলম্বিত হলে আরও তীব্র বন্যা, তাপপ্রবাহ ও সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধির ঝুঁকি বহুগুণ বাড়বে। জলবায়ু প্রভাবের সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে থাকা দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোর কাছে এই রাজনৈতিক টানাপোড়েন ইঙ্গিত দিচ্ছে, কেবল একক শক্তির ওপর নির্ভর করলে ‘গ্রিন ফাইন্যান্স’ ও প্রযুক্তি সহযোগিতার ভবিষ্যৎ সবসময়ই অনিশ্চিত থেকে যাবে।

FILE -Windmills are seen at Ilocos Norte province, northern Philippines on May 6, 2024. (AP Photo/Aaron Favila, File)

নীতিবিশেষজ্ঞদের মতে, ঘোষিত সব পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হবে কি না, তা অনেকটাই নির্ভর করবে সরকারের নীতি–সামঞ্জস্যের ওপর। একদিকে নতুন কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র অনুমোদন আর অন্যদিকে অফশোর উইন্ডের বড় লক্ষ্য ঘোষণা—এই দ্বৈত বার্তা বিনিয়োগকারীদের আস্থা কমাতে পারে। একই সঙ্গে পুরোনো ট্রান্সমিশন লাইন সংস্কার, দীর্ঘ পরিবেশগত ছাড়পত্র প্রক্রিয়া ও সীমান্ত–পেরোনো বিদ্যুৎ বাণিজ্যের নিয়মকানুনও বড় চ্যালেঞ্জ। তবু ঘোষিত প্রকল্পগুলোর একটি অংশও যদি সফল হয়, তবে জ্বালানি আমদানিনির্ভরতা কমবে, দাম ওঠানামা কিছুটা হলেও নিয়ন্ত্রণে আসবে এবং সমুদ্র–বন্দর থেকে শুরু করে প্রকৌশল–কর্মসংস্থানে নতুন সুযোগ তৈরি হবে। বঙ্গোপসাগর উপকূলীয় দেশগুলো—বাংলাদেশসহ—এখন গভীর আগ্রহ নিয়ে দেখছে, দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার এই পরীক্ষাগুলো কতটা সফল হয়।

FILE -A wind turbine is seen at the booth of ETEK Technology Joint Stock company during Entech Hanoi 2009, an international trade fair on energy efficiency and the environment, at the Giang Vo Exhibition Center in Hanoi, Vietnam, June 18, 2009. (AP Photo/Chitose Suzuki, File)