টোকিও এখন বিশ্বের সবচেয়ে দামি বিলাসবহুল হোটেলের শহর হিসেবে নিউইয়র্ক ও লন্ডনকে পেছনে ফেলেছে। বিদেশি পর্যটকের সংখ্যা বাড়া এবং উচ্চমানের হোটেলের তুলনামূলক স্বল্পতার কারণে কক্ষভাড়া আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় দ্রুত বেড়েছে।
টোকিওর বিলাসবহুল হোটেলের গড় কক্ষভাড়া
মার্কিন রিয়েল এস্টেট ডেটা অ্যানালিটিক্স প্রতিষ্ঠান কোস্টার গ্রুপের সহযোগী সংস্থা এসটিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের নভেম্বর থেকে ২০২৫ সালের অক্টোবর পর্যন্ত টোকিওর বিলাসবহুল হোটেলের গড় দৈনিক কক্ষভাড়া হয়েছে ৬২৬ ডলার।
এই অঙ্ক লন্ডনের ৬১৬ ডলার, নিউইয়র্কের ৫৪৪ ডলার, সিঙ্গাপুরের ৪৩৭ ডলার এবং সিডনির ২৮৩ ডলারকে ছাড়িয়ে গেছে।
এসটিআর তাদের ছয় স্তরের শ্রেণিবিন্যাসে সবচেয়ে উচ্চমানের বিভাগকেই ‘লাক্সারি’ হিসেবে চিহ্নিত করে।
বিদেশি পর্যটকদের চাপেই মূলত দামের উল্লম্ফন
জাপান ন্যাশনাল ট্যুরিজম অর্গানাইজেশনের তথ্য অনুযায়ী, জানুয়ারি থেকে অক্টোবর ২০২৫ পর্যন্ত জাপানে বিদেশি আগমনের সংখ্যা দাঁড়ায় ৩ কোটি ৫৫ লাখ ৪৭ হাজার ২০০, যা আগের বছরের তুলনায় ১৮ শতাংশ বেশি। এই সংখ্যা ২০২৪ সালের সর্বোচ্চ রেকর্ড ৩ কোটি ৬৮ লাখ ৭০ হাজারের কাছাকাছি পৌঁছে গেছে।
হোটেল নিউ ওতানি টোকিওর একজন প্রতিনিধি জানান, আন্তর্জাতিক পর্যটকরা এখন বেশি দিন অবস্থান করছেন এবং তুলনামূলকভাবে দামি রুমই বেছে নিচ্ছেন।
গ্র্যান্ড হায়াত টোকিওর একজন প্রতিনিধির ভাষ্য, আন্তর্জাতিক সম্মেলনের আয়োজন বেড়ে যাওয়ায় ব্যবসায়িক ভ্রমণকারীর চাহিদাও শক্তিশালী রয়েছে।

জাপান বিদেশিদের কাছে আরও আকর্ষণীয়
দুর্বল ইয়েন ও জাপানি সংস্কৃতির প্রতি বৈশ্বিক আগ্রহ বৃদ্ধির কারণে পর্যটকের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। যুক্তরাজ্যের ভ্রমণবিমা প্রতিষ্ঠান ইনসিউরঅ্যান্ডগো ২০২৪ সালে এক জরিপে জাপানকে এমন দেশ হিসেবে প্রথম স্থানে রেখেছিল, যেখানকার দর্শনার্থীরা আবারও আসতে চান।
চীন-জাপান কূটনৈতিক টানাপোড়েনে আংশিক প্রভাব
নভেম্বরে চীন সরকার তাদের নাগরিকদের জাপানে ভ্রমণ এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেয়। এ কারণে কিছু বিলাসবহুল হোটেলে বুকিং স্থগিত ও বাতিল হয়। এক শিল্পসূত্র বলছে, বেশিরভাগ বাতিলই দলীয় ভ্রমণ থেকে এসেছে, তাই ব্যক্তি পর্যটনে প্রভাব সীমিত।
টোকিওতে নতুন বিলাসবহুল হোটেলের ঢল
বুলগারি হোটেল টোকিও (২০২৩), জানু টোকিও (২০২৪), ফেয়ারমন্ট টোকিও ও জেডব্লিউ ম্যারিয়ট টোকিও (২০২৫)– এসব নতুন সংযোজন শহরটিকে আরও প্রতিযোগিতামূলক করেছে।
ওয়াল্ডর্ফ অ্যাস্টোরিয়া টোকিও নিহোনবাশি ২০২৭ সালে চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
কেপিএমজি এফএএস–এর সিনিয়র ম্যানেজার হিরোয়ুকি ইওয়াসা বলেন, নতুন হোটেলগুলো এখন উচ্চ মূল্য সংযোজন করা ব্র্যান্ড বেছে নিচ্ছে, যাতে পুরোনো লাক্সারি হোটেলগুলোর সাথে নিজেদের আলাদা করে তুলতে পারে।
বিলাসবহুল কক্ষ কম থাকাও দামের অন্যতম কারণ
টোকিওর সব হোটেলের মধ্যে মাত্র ৫ শতাংশ লাক্সারি ক্যাটাগরির, যেখানে নিউইয়র্কে ২২ শতাংশ ও সিঙ্গাপুরে ২৩ শতাংশ।
শ্রমিক সংকটের কারণে পরিচালনা ব্যয় বেড়েছে, ফলে নতুন হোটেলগুলো পর্যাপ্ত মুনাফা পেতে কক্ষভাড়া উঁচু রাখতে বাধ্য হচ্ছে। শিল্প সংশ্লিষ্টদের ধারণা, উচ্চমানের হোটেলের দাম আরও বাড়তে পারে।

আগের তুলনায় কত বেড়েছে কক্ষভাড়া
এসটিআরের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৮–১৯ (মহামারির আগের সময়) এবং ২০২৪–২৫ এর মধ্যে তুলনায় দেখা যায়:
লাক্সারি ও আপার-আপস্কেল হোটেলের কক্ষভাড়া বেড়েছে ৩০ শতাংশ।
মিড-প্রাইসড আপস্কেল ও আপার-মিডস্কেল হোটেলে বৃদ্ধি ২০ শতাংশ।
মিডস্কেল ও ইকোনমি হোটেলে বৃদ্ধি মাত্র ৫ শতাংশ।
যেসব অঞ্চলে বিদেশি অতিথির অনুপাত বেশি, সেখানেই ডলারের হিসাবে কক্ষভাড়া দ্রুত বাড়ছে। টোকিও ও কিয়োটোর মতো শহরে এমন মাস রয়েছে, যেখানে মোট রাত্রিযাপনকারী অতিথিদের মধ্যে বিদেশির সংখ্যা জাপানি অতিথিদের ছাড়িয়ে গেছে।
ভবিষ্যৎ চাহিদার জন্য কৌশল প্রয়োজন
এসটিআরের ব্যবসায় উন্নয়ন ব্যবস্থাপক শিওরি সাকুরাই বলেন, সরকার ২০৩০ সালের মধ্যে ৬ কোটি বিদেশি পর্যটক আকর্ষণের লক্ষ্য নিয়েছে। তাই তুলনামূলক কমদামের হোটেলগুলোকেও আন্তর্জাতিক পর্যটকের সংখ্যা বাড়ার সম্ভাবনা বিবেচনায় নিয়ে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি কৌশল নিতে হবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















