কংগ্রেসের লোকসভা সদস্য শশী থারুর টানা তৃতীয়বারের মতো দলের গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন না। বৃহস্পতিবার অনুষ্ঠিত এই বৈঠকটি ছিল লোকসভা কংগ্রেস সংসদীয় দলের, যার সভাপতিত্ব করেন বিরোধী দলনেতা রাহুল গান্ধী। দলের সূত্র জানায়, থারুর আগেভাগেই তার অনুপস্থিতির কথা জানিয়েছিলেন।
উপস্থিতি নিয়ে প্রশ্ন ও সাম্প্রতিক প্রেক্ষাপট
গত কয়েক সপ্তাহে তিনি আরও দুটি দলের বৈঠকেও অংশ নেননি। এদিকে দলীয় কর্মসূচি এড়িয়ে তিনি বিভিন্ন সরকারি বা রাষ্ট্রীয় অনুষ্ঠানে অংশ নিচ্ছেন—যেমন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বক্তব্য শোনা এবং রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সম্মানে আয়োজিত রাজ্য ভোজসভায় যোগদান, যেখানে প্রধান বিরোধী নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়নি।
শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত থারুর এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেননি।
চণ্ডীগড়ের কংগ্রেস সাংসদ মনীশ তিওয়ারিও ওই বৈঠকে ছিলেন না। তবে তাঁর সঙ্গে দলের সম্পর্ক থারুরের মতো টানাপোড়েনপূর্ণ নয়। অপারেশন সিন্দুরের পর বিজেপি সরকারের বৈদেশিক প্রচার কার্যক্রমে অংশ নেওয়া নিয়েও দলের একাংশ ক্ষুব্ধ হয়েছিল। থারুর ও তিওয়ারি দু’জনই কংগ্রেসের হয়ে বিদেশ সফরে গিয়েছিলেন।
কলকাতায় থারুর: নারী অধিকার নিয়ে বক্তব্য ও পারিবারিক উপস্থিতি
বৃহস্পতিবার থারুরের অবস্থান নিয়ে জল্পনা থাকলেও তাঁর এক্স (X) প্ল্যাটফর্মের পোস্টে দেখা যায় তিনি কলকাতায় একটি এনজিও-আয়োজিত অনুষ্ঠানে ছিলেন। সেখানে পরিবার-পরিজনসহ তিনি মঞ্চে ওঠেন।
অনুষ্ঠানে তিনি নারীর অধিকার, বিশেষ করে বৈবাহিক ধর্ষণকে দণ্ডনীয় অপরাধ করার বিষয়ে তার প্রস্তাবিত আইনের কথা বলেন। এছাড়া বোনের প্রতি স্নেহ প্রকাশে তিনি মঞ্চে গানও গেয়েছেন।
এই অনুপস্থিতি ঘটল সংসদের শীতকালীন অধিবেশনের মাঝে, যা শেষ হবে ১৯ ডিসেম্বর।
গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকে অনুপস্থিতি ও দলীয় অবস্থান
কংগ্রেস ওয়ার্কিং কমিটির সদস্য থারুর ৩০ নভেম্বর, অধিবেশন শুরুর আগের রাতের এক গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকেও ছিলেন না। সে সময় তিনি জানান, তিনি আকাশপথে কেরালা থেকে ফিরছিলেন বলেই বৈঠকে যোগ দিতে পারেননি।
সাম্প্রতিক সময়েও তাকে সংসদে বক্তৃতার তালিকায় খুব একটা দেখা যাচ্ছে না।
এর আগে ভোটার তালিকার বিশেষ পুনর্বিবেচনা (SIR) নিয়ে দলের বৈঠকেও অনুপস্থিত ছিলেন তিনি। দল অভিযোগ করেছিল, এই প্রক্রিয়ার ভুলত্রুটির কারণেই বিহার নির্বাচনে তাদের পরাজয় হয়েছে। এই ইস্যুটি রাহুল গান্ধীর বিশেষ নজরদারিতে রয়েছে।
সেই বৈঠকে অনুপস্থিতির কারণ হিসেবে তিনি শারীরিক অসুস্থতার কথা জানিয়েছিলেন। তবে পরদিনই তিনি প্রধানমন্ত্রীর একটি বক্তৃতায় উপস্থিত ছিলেন এবং সামাজিক মাধ্যমে মোদিকে প্রশংসাও করেন।
আরও সম্প্রতি তিনি ছিলেন রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনের সম্মানে আয়োজিত রাষ্ট্রীয় নৈশভোজে একমাত্র কংগ্রেস প্রতিনিধি।
কংগ্রেসের প্রতিক্রিয়া ও দলীয় অস্বস্তি
থারুরের এই অবস্থান নিয়ে কংগ্রেস মুখপাত্র পবন খেরা বলেন, যখন দলের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয় না, তখন এককভাবে আমন্ত্রণ পাওয়া নিয়ে প্রত্যেকের বিবেক যেন প্রশ্ন তোলে।
এ পরিস্থিতির মধ্যেই থারুর একটি নিবন্ধে নেহরু-গান্ধী পরিবারকে বংশগত রাজনীতির উদাহরণ হিসেবে তুলে ধরেন, কিন্তু বিজেপির কোনো উদাহরণ দেননি। এর ফলে বিজেপির তরফে তাকে প্রশংসা করা হয়।

বিজেপি নেতা শাহজাদ পুনাওয়ালা তাকে ‘খেলাড়ি’ বলে মন্তব্য করেন, আর অন্য এক মুখপাত্র এই মন্তব্যকে ‘ট্রুথ বোম্ব’ আখ্যা দেন।
এদিকে থারুর বিজেপি নেতা এলকে আদবানিকে জন্মদিনে প্রশংসাসহ শুভেচ্ছা জানান এবং তাঁর বিতর্কিত রাজনৈতিক ভূমিকারও সাফাই দেন।
পবন খেরা পরে বলেন, থারুর ব্যক্তিগতভাবে কিছু বলেছেন, যা দলের অবস্থান নয়।
দলের আরেক নেতা মন্তব্য করেন, যদি থারুর মনে করেন বিজেপি বা মোদির কৌশল শ্রেষ্ঠ, তাহলে তিনি কেন কংগ্রেসে রয়েছেন, তার উত্তর দিতে হবে; না হলে তিনি ভণ্ডামি করছেন।
#শশীথারুর #কংগ্রেসবৈঠক #রাহুলগান্ধী #ভারতরাজনীতি
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















