দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের ৮০ বছর পূর্তিতে নির্মিত জাপানি অ্যানিমেটেড চলচ্চিত্রগুলোর ভিড়ে আলাদা হয়ে দাঁড়িয়েছে ‘‘পেলেলিউ: স্বর্গের গুয়ের্নিকা’’। কাজুওয়োশি তাকেদার মাঙ্গা অবলম্বনে গড়া এই চলচ্চিত্র যুদ্ধের অবর্ণনীয় নির্মমতা নতুন করে অনুভব করায়। জাপানের ভেতরের নাগরিকদের জীবন নয়, বরং দূর দ্বীপে পাঠানো একদল তরুণ জাপানি সৈনিকের দৃষ্টিতে যুদ্ধের অসহায় বাস্তবতা উঠে আসে।
যুদ্ধের স্বপ্নভঙ্গ এক আঁকিয়ে তরুণের গল্প
গোরো কুজির পরিচালনায় গল্পটি এগোয় তামারুকে ঘিরে। শান্ত স্বভাবের, মাঙ্গা আঁকার স্বপ্ন দেখা এই তরুণকে যুদ্ধে পাঠানো হয় দূর সমুদ্রের মাঝখানে অবস্থিত পেলেলিউ দ্বীপে। দ্বীপটিকে স্বর্গ ভেবে আসা তামারুর কল্পনা মুহূর্তেই ভেঙে পড়ে। আমেরিকান সেনারা এগিয়ে আসছে, আর জাপানি বাহিনীকে বলা হয়েছে শেষ সৈনিক না পড়া পর্যন্ত লড়াই করতে হবে। দ্বীপটির তেমন কৌশলগত মূল্য নেই—তা জানলেও উর্দ্ধতন কর্মকর্তাদের বেপরোয়া জয়ের দম্ভ enlisted সৈনিকদের অন্তরে মৃত্যু ভয়ের অন্ধকার আরও ঘনীভূত করে।
বেপরোয়া যুদ্ধের প্রাক্কালে প্রথম মৃত্যুর দৃশ্য
যুদ্ধ শুরু হওয়ার আগেই তামারু দেখে মৃত্যুর নিষ্ঠুর দৈনন্দিনতা। বৃষ্টিতে ভিজে নেওয়ার মুহূর্তে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে মারা যায় তার সহযোদ্ধা। এই আকস্মিক মৃত্যু কর্মকর্তারা লুকিয়ে ফেলেন সাজানো বীরত্বগাথার আড়ালে। তামারুকে লিখতে হয় সেই মিথ্যা চিঠি, যেখানে বলা হবে সৈনিকটি নাকি সাহসী যুদ্ধ করে প্রাণ দিয়েছে। নিষ্পাপ চেহারা আর কোমল আঁকা চরিত্র ব্যবহার করেও চলচ্চিত্রটি হঠাৎই দর্শককে নিয়ে যায় নির্মম বাস্তবতার ভেতর, যা তামারুর মতোই দর্শককেও নাড়া দেয়।
![]()
চরিত্রের মিষ্টি ডিজাইনের আড়ালে যুদ্ধের হাড়–হিম সত্য
চলচ্চিত্রটি প্রথমে কোমল ন্যারেশনে ধরা দিলেও খুব দ্রুতই খুলে যায় আরেক দরজা—আপাত মিষ্টি কার্টুন চরিত্রদের ঘিরে রক্তাক্ত যুদ্ধের সত্য। শিশুসুলভ নকশায় আঁকা সৈনিকদের চোখে মৃত্যুভয়, আর একইসঙ্গে তাদের বয়সের অল্পতা, যুদ্ধটিকে আরও বেদনাদায়ক ও অস্বস্তিকর করে তোলে। এই বৈপরীত্যই চলচ্চিত্রটিকে আলাদা উচ্চতায় নিয়ে যায়।
যুদ্ধশেষেও যার শেষ নেই—বেঁচে ফেরাদের ট্র্যাজেডি
দুই মাস ধরে চলা বাস্তব পেলেলিউ যুদ্ধের মতো পর্দার গল্পেও ক্ষয়ক্ষতি সীমাহীন। যুদ্ধ শেষে যারা বেঁচে থাকে, তারা লুকিয়ে মার্কিন ক্যাম্প থেকে খাবার চুরি করে টিকে থাকে দীর্ঘদিন। পরে একটি মার্কিন পত্রিকায় তারা জানতে পারে যুদ্ধ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। তবু তামারুর উর্ধ্বতনরা আত্মসমর্পণে অস্বীকৃতি জানালে ঘটে আরও মর্মান্তিক ঘটনা। দুর্বল সিজি অ্যানিমেশন বিক্ষিপ্ত কিছু দৃশ্য চোখে পড়লেও কেনজি কাওয়াইয়ের মগ্ন করা সুর চলচ্চিত্রকে শক্ত ভিত দেয়।
৮০ বছর পরও যুদ্ধের ক্ষত একইরকম কাঁচা
বিশ্বযুদ্ধের আট দশক পরেও বিশ্বে চলছে নতুন নতুন সংঘাত। এই প্রেক্ষাপটে ‘‘পেলেলিউ: স্বর্গের গুয়ের্নিকা’’ যুদ্ধের নিষ্ঠুরতা ও মানবিক বিপর্যয়ের মুখোমুখি দাঁড় করায় দর্শককে। কোনো আবেগমথিত দেশপ্রেম নয়, বরং যুদ্ধের হিমশীতল সত্যই চলচ্চিত্রের আসল শক্তি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















