প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বৃহস্পতিবার ফোনে কথা বলেছেন। দুই দেশের মধ্যে বাণিজ্য উত্তেজনা প্রশমনে এবং একটি সম্ভাব্য বাণিজ্য চুক্তির দিকে এগোনোর প্রেক্ষাপটে এই আলোচনা গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ফোনালাপটি এমন এক সময়ে হয়, যখন নতুন মার্কিন ডেপুটি ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ রিক সুইটজার দুই দিনের ভারত সফর শেষ করেছেন এবং বাণিজ্য সচিব রাজেশ আগরওয়ালসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন।
মোদির বক্তব্য
মোদি সামাজিক মাধ্যমে জানান, ট্রাম্পের সঙ্গে তার আলোচনা ছিল উষ্ণ ও ফলপ্রসূ। তিনি বলেন, দুই নেতা দ্বিপাক্ষিক অগ্রগতি পর্যালোচনা করেছেন এবং আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেছেন। মোদির মতে, ভারত-যুক্তরাষ্ট্র বৈশ্বিক শান্তি, স্থিতি ও সমৃদ্ধির জন্য একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যাবে।

সরকারি বিবৃতি
ভারত সরকারের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়, দুই দেশ সম্পর্কের ধারাবাহিক অগ্রগতি নিয়ে সন্তুষ্ট। তবে বিস্তারিত কিছু জানানো হয়নি।
বাণিজ্য আলোচনার গতি
ঘটনার সঙ্গে পরিচিত ব্যক্তিরা জানান, মোদি ও ট্রাম্প দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যের উন্নয়নে গতি ধরে রাখার ওপর গুরুত্ব দেন। একই সঙ্গে তারা শক্তিশালী প্রযুক্তি, জ্বালানি, প্রতিরক্ষা ও নিরাপত্তা সহযোগিতা বাড়ানোর উপায় নিয়ে আলোচনা করেন। এই বিষয়গুলো ফেব্রুয়ারিতে ওয়াশিংটনে তাদের শেষ সরাসরি সাক্ষাতে ঘোষিত ইন্ডিয়া-ইউএস কমপ্যাক্ট উদ্যোগের অংশ।
দুই নেতা আঞ্চলিক ও বৈশ্বিক পরিস্থিতি নিয়ে মতবিনিময় করেন এবং যৌথ স্বার্থে কাজ চালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে সম্মত হন।
গোয়েলের প্রতিক্রিয়া ও মার্কিন মন্তব্য
মুম্বাইয়ে বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল বলেন, বাণিজ্য চুক্তি তখনই হবে যখন উভয় দেশ সমানভাবে উপকৃত হবে। তিনি জানান, যদি ওয়াশিংটনের কাছে ভারতের প্রস্তাব সত্যিই “সেরা” মনে হয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে “সই করে ফেলাই উচিত।”

এর আগে, মার্কিন ট্রেড রিপ্রেজেন্টেটিভ জেমিসন গ্রিয়ার বলেছিলেন, ভারত এবার “সর্বোত্তম প্রস্তাব” দিয়েছে, যদিও তিনি ভারতকে কৃষিপণ্য আমদানিতে অনীহা দেখানোর কারণে “জটিল দেশ” বলে উল্লেখ করেন।
গোয়েল বলেন, আলোচনা ভালোভাবে এগোচ্ছে এবং একাধিক দফার আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তার মতে, তাড়াহুড়ো করে চুক্তি করতে গেলে ভুল সিদ্ধান্তের ঝুঁকি থাকে।
তিনি আরও পরিষ্কার করেন যে সুইটজারের ভারত সফরটি পুরোপুরি আনুষ্ঠানিক আলোচনা নয়, বরং তার নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর একটি পরিচিতিমূলক উদ্যোগ।
সম্পর্কের সাম্প্রতিক সংকট
এ বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় পণ্যে ২৫% প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করে, এরপর রাশিয়ান তেল কেনার কারণে আরও ২৫% শাস্তিমূলক কর যোগ করে। মোট ৫০% শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে সর্বোচ্চ, যা দুই দেশের সম্পর্ককে দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন স্তরে নামিয়ে আনে।

অর্থনৈতিক উপদেষ্টার মন্তব্য
ভারতের প্রধান অর্থনৈতিক উপদেষ্টা ভি অনন্ত নাগেশ্বরন বলেন, তিনি আশা করছেন চলতি অর্থবছরের শেষ নাগাদ চুক্তি সম্পন্ন হবে। তিনি জানান, নভেম্বরের মধ্যেই কিছু অগ্রগতি হবে বলে আশা করেছিলেন এবং চুক্তি সম্পন্ন হলে বিনিয়োগকারীদের মনোভাব উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত হবে।
ভারতের অবস্থান
পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করসহ দেশটির শীর্ষ নেতৃত্ব জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে যুক্তিসঙ্গত বাণিজ্য চুক্তিতে ভারত আগ্রহী, তবে কৃষক, ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও মধ্যবিত্তের স্বার্থের সঙ্গে আপস করা হবে না। তাদের মতে, বাণিজ্য চুক্তিটি জনজীবন ও ক্ষুদ্র ব্যবসার ওপর প্রভাব ফেলবে বলেই দুই দেশকে সতর্কভাবে “উভয়ের স্বার্থের মিলনবিন্দু” খুঁজে বের করতে হবে।
#ট্রাম্প-মোদি #যুক্তরাষ্ট্র-ভারতবাণিজ্য #বাণিজ্যচুক্তি #সারাক্ষণরিপোর্ট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















