মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ওবামাকেয়ারের বাড়তি স্বাস্থ্য ভর্তুকি শেষ হতে আর মাত্র কয়েকদিন বাকি, আর সে সময়ের আগেই সংকট সমাধানে ব্যর্থ হলো সিনেট। দুই দলের পৃথক প্রস্তাব পরপর ভোটে বাতিল হওয়ায় নতুন বছর শুরু হতেই প্রায় ২ কোটি ৪০ লাখ মানুষের বীমা প্রিমিয়াম হঠাৎ বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।
সিনেটে সমঝোতা ভেঙে পড়ল
ওয়াশিংটনে বৃহস্পতিবার পরপর দুই প্রস্তাবেই সিনেটররা দলীয় ভিত্তিতে একে অপরকে ঠেকিয়ে দিলেন। রিপাবলিকানরা চাইছিলেন উচ্চ আয়ের সীমার ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের জন্য সরাসরি অর্থ দেওয়ার ব্যবস্থা, আর ডেমোক্র্যাটরা চাইছিলেন ওবামাকেয়ার ভর্তুকির আরও তিন বছরের মেয়াদ বাড়িয়ে প্রিমিয়াম স্থিতিশীল রাখা। কোনোটিই ৬০ ভোটের সীমা পার করতে পারেনি।
নতুন প্রিমিয়াম নির্ধারণের সময়সীমা শুরু হবে জানুয়ারির ১ তারিখে। কংগ্রেস আগামী সপ্তাহেই ছুটিতে চলে গেলে জানুয়ারি ৫ তার আগে আর কোনো আইন পাস করা সম্ভব নয়।
২৪ মিলিয়ন মানুষের অনিশ্চয়তা বাড়ছে
সরকারি হিসাবে গত বছরের তুলনায় কম মানুষ এখন পর্যন্ত তাদের ওবামাকেয়ার পরিকল্পনা নবায়ন করেছেন। স্বাস্থ্যনীতি গবেষণা সংস্থা কেএফএফ বলছে, ভর্তুকি শেষ হলে গড় প্রিমিয়াম দ্বিগুণেরও বেশি বাড়তে পারে। জরিপে দেখা গেছে, অর্ধেকেরও বেশি আমেরিকান এসব ভর্তুকি চালু রাখার পক্ষে।
ডেমোক্র্যাট নেতা চাক শুমার অভিযোগ করেন, রিপাবলিকানদের অনমনীয়তাই দেশকে স্বাস্থ্য–বিপর্যয়ের দিকে ঠেলে দিচ্ছে। অন্যদিকে রিপাবলিকান নেতা জন থুন দাবি করেন, ডেমোক্র্যাটদের বিল আসলে রাজনৈতিক বার্তা ছাড়া কিছুই না।

রিপাবলিকানদের প্রস্তাব কী ছিল
রিপাবলিকান সিনেটর বিল ক্যাসিডি ও মাইক ক্রাপোর প্রস্তাবে বলা হয়েছিল, দারিদ্রসীমার ৭০০ শতাংশের ভেতরে আয় করা ব্যক্তিদের সর্বোচ্চ দেড় হাজার ডলার পর্যন্ত নগদ সহায়তা দেওয়া হবে। এই অর্থ দিয়ে গর্ভপাত বা লিঙ্গ পরিবর্তন সংক্রান্ত চিকিৎসা নেয়া যাবে না এবং পরিচয় ও নাগরিকত্ব যাচাই বাধ্যতামূলক করা হবে। ডেমোক্র্যাটরা এসব শর্ত সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেন।
এ সহায়তা মূলত সেইসব মানুষের জন্য, যাদের ‘ব্রোঞ্জ’ বা ‘ক্যাটাস্ট্রফিক’ ক্যাটাগরির কম খরচের বীমা রয়েছে। কিন্তু দেড় হাজার ডলার প্রকৃত চিকিৎসা খরচের তুলনায় খুবই কম, কারণ এসব পরিকল্পনায় নিজের পকেট থেকে দিতে হয় সাত হাজার ডলারেরও বেশি কাট-ছাঁট খরচ। জরুরি বিভাগে একবার গেলে হাজার ডলারের বেশি খরচ হওয়া খুব স্বাভাবিক।
ডেমোক্র্যাটদের অবস্থান
ডেমোক্র্যাটরা বলছেন, সময় এত কমে যাওয়ায় এখন ভর্তুকি বাড়ানো ছাড়া আর কোনো বাস্তবসম্মত সমাধান নেই। রিপাবলিকানদের বিল পাস হলে প্রিমিয়াম সংকট আরও গভীর হবে। চারজন রিপাবলিকান ডেমোক্র্যাটদের পক্ষের বিলের পক্ষে ভোট দিলেও ডেমোক্র্যাটদের দলে কেউ রিপাবলিকান বিল সমর্থন করেননি।
২০২৬ নির্বাচন সামনে, চাপ বাড়ছে
২০২৬ সালের মধ্যবর্তী নির্বাচন সামনে রেখে রিপাবলিকানরাই বেশি চাপে। কারণ ভর্তুকি শেষ হলে যে প্রিমিয়াম–বৃদ্ধি শুরু হবে, তা ডোনাল্ড ট্রাম্পের জয়ী রাজ্যগুলোতেও বড় ধাক্কা হতে পারে। মিসৌরির রিপাবলিকান সিনেটর জশ হাউলি বলেন, তার রাজ্যের মানুষ এখনকার প্রিমিয়ামই টানতে পারছে না, সেখানে ৫০ থেকে ১০০ শতাংশ বাড়লে তাদের অবস্থা আরও শোচনীয় হবে।
একই সময়ে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প প্রকাশ্যে রিপাবলিকান বিলের পক্ষে অবস্থান নিলেও এক পর্যায়ে দুই দলই সমাধানে আসবে বলে দাবি করেছেন।
হাউসে শেষ মুহূর্তের চেষ্টা
নিম্নকক্ষ হাউসে আগামী সপ্তাহে নতুন কোনো প্রস্তাব আনার চেষ্টা করা হতে পারে। তবে সেটি পাস হলেও সিনেটে তা টিকবে কি না, তা নিয়ে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে। এদিকে মধ্যপন্থী রিপাবলিকান ব্রায়ান ফিজপ্যাট্রিক ভর্তুকির মেয়াদ ২০২৭ পর্যন্ত বাড়ানোর দ্বিদলীয় বিল আনার চেষ্টা চালাচ্ছেন।
দেশজুড়ে স্বাস্থ্যখাতে অনিশ্চয়তা ছড়িয়ে পড়লেও আপাতত সমঝোতার কোনো ইঙ্গিত নেই।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















