বুলগেরিয়ার রাস্তায় উঠেপড়ে লেগেছে তরুণরা। বছরের শুরু থেকেই যেসব দেশে জেনারেশন জেডের বিক্ষোভ ক্ষমতাকে নাড়িয়ে দিয়েছে, এবার সেই ঢেউ এসে আঘাত করল ইউরোপের মাটিতে। টানা দুর্নীতি, অদম্য এলিট নিয়ন্ত্রণ আর সাধারণ মানুষের জীবনের সঙ্গে বিচ্ছিন্ন শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে তরুণদের ক্ষোভ এতটাই তীব্র হলো যে বৃহস্পতিবার ভেঙে পড়ল দেশটির সরকার।
উঠছে নতুন রাজনৈতিক সঙ্কেত
প্রধানমন্ত্রী রোসেন ঝেলিয়াজকভ সংসদে দাঁড়িয়ে ঘোষণা দিলেন পদত্যাগের। কয়েক সপ্তাহ পরেই দেশটির ইউরো মুদ্রা ব্যবস্থায় যোগ দেওয়ার কথা, কিন্তু সরকারের পতনে সেই বড় রাজনৈতিক অধ্যায়ের শুরুতেই তৈরি হলো নতুন অনিশ্চয়তা। গত চার বছরে সাতটি নির্বাচনের পরেও স্থিতি ফেরেনি। এবার সম্ভবত দ্রুতই আবার নির্বাচন ডাকতে হবে।
এই সঙ্কটে সবচেয়ে লাভবান হতে পারেন জনপ্রিয় রাষ্ট্রপতি রুমেন রাদেভ। নিজস্ব দল গঠন করে তিনি আগামী নির্বাচনে নামতে পারেন বলে জল্পনা বাড়ছে। পশ্চিমা সমর্থনের ব্যাপারে তাঁর অবস্থান অনেকটাই ভিন্ন, বিশেষ করে ইউক্রেন–রাশিয়া যুদ্ধকে ঘিরে।
বাজেট থেকে ক্ষোভের বিস্ফোরণ
সরকারের ২০২৬ সালের বাজেট খসড়া ছিল তরুণদের ক্ষোভের তাৎক্ষণিক কারণ। সমালোচকদের মতে, বাড়তি ব্যয় পরিকল্পনা দুর্নীতিগ্রস্ত রাজনৈতিক মহলকে আরও শক্তিশালী করবে এবং রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর তাদের নিয়ন্ত্রণ আরও পোক্ত হবে।

বহুদিনের জমে থাকা দুর্নীতির ঘা
২০০৭ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নে যোগ দেওয়ার পরও বুলগেরিয়ার দুর্নীতির ছবি খুব বেশি বদলায়নি। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের তালিকায় প্রতিনিয়ত নিচের দিকের দেশ হিসেবে অবস্থান করছে বুলগেরিয়া। বড় কোনো দুর্নীতির মামলায় উচ্চপর্যায়ের দণ্ড না হওয়ায় বছরজুড়ে ক্ষোভ জমছিল। ব্রাসেলসও বহুবার আইনের শাসন নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে।
জেন জেডের অনলাইন শক্তি
সোফিয়ার রাস্তায় বুধবার নেমেছিলেন হাজারো মানুষ। টিকটকসহ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠিত এই তরুণদের হাতে ছিল লেখা, জেন জেড আসছে এবং জেন জেড বনাম দুর্নীতি। সংসদের সামনে স্থাপিত জায়ান্ট স্ক্রিনে চলছিল রাজনীতিকদের ব্যঙ্গ করে বানানো ভিডিও আর মিম।
বিশ্লেষকদের মতে, তরুণদের এই উত্তাল উপস্থিতি দেখিয়েছে যে তারা আর নীরব দর্শক নয়। রাষ্ট্র দখলের মতো পুরোনো রাজনৈতিক অভ্যাস, স্বাস্থ্যব্যবস্থার অব্যবস্থা আর ভালো চাকরির অভাবে তারা ক্ষুব্ধ। গণতন্ত্র, দুর্নীতি ও সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা নিয়ে অনলাইনে গরম আলোচনা বহুদিন ধরেই চলছিল, এখন তা রূপ নিয়েছে রাস্তায়।
তরুণদের প্রথম বড় আন্দোলন
এই আন্দোলনের বড় অংশই জীবনে প্রথমবারের মতো রাস্তায় নেমেছে। তারা কমিউনিস্ট আমলের পতন কিংবা পরবর্তী অর্থনৈতিক ধসের স্মৃতি জানে না। তারা জানে আজকের জীবন, আজকের চাহিদা আর অসমতার যন্ত্রণাই তাদের সামনে সবচেয়ে বড় সত্য। আর সেই সত্যই ভেঙে দিল এক সরকারের ভিত্তি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















