ইউক্রেন যুদ্ধ থামাতে ইউরোপ ও কিয়েভ যখন টানা কূটনৈতিক দৌড়ে ব্যস্ত, তখন সবচেয়ে বড় উদ্বেগের নাম হয়ে উঠেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। রাশিয়ার বদলে ইউরোপের জন্য সবচেয়ে কঠিন বাধা এখন ওয়াশিংটনই—এমন উপলব্ধি ক্রমেই জোরালো হচ্ছে ব্রাসেলসে।
ব্রাসেলসের কূটনৈতিক অস্বস্তি
ইউক্রেন যুদ্ধ নিয়ে ইউরোপীয় নেতাদের সামনে দুটি সময়সীমা বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। একদিকে ট্রাম্পের চাওয়া বড়দিনের আগেই যুদ্ধবিরতি, অন্যদিকে আঠারো ডিসেম্বর ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ বৈঠক, যেখানে ইউক্রেনকে সহায়তার অর্থায়ন নিয়ে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হবে। এই প্রক্রিয়ায় শেষ মুহূর্তে যুক্তরাষ্ট্রের অপ্রত্যাশিত পদক্ষেপ নিয়ে ইউরোপীয় নেতারা শঙ্কিত।
ওয়াশিংটনের নতুন প্রস্তাব নিয়ে সন্দেহ

নভেম্বরের মাঝামাঝি যুক্তরাষ্ট্রের একটি তথাকথিত নতুন শান্তি পরিকল্পনা ফাঁস হয়। ইউরোপীয় কূটনীতিকদের মতে, এটি শান্তির নথি নয়, বরং ইউক্রেনকে রাশিয়ার শর্তে আত্মসমর্পণে বাধ্য করার ডাক। ইউরোপের চাপ এবং মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ভেতরের আপত্তিতে সেই প্রস্তাব প্রত্যাহার হলেও ট্রাম্প প্রশাসনের রাশিয়াপন্থী ঝোঁক বদলায়নি।
রাশিয়ার দখল বৈধ করার চাপ
রুশ সেনারা এখনো ইউক্রেনের প্রায় আঠারো শতাংশ ভূখণ্ড দখলে রেখেছে। ট্রাম্পের অবস্থান হলো, যুদ্ধবিরতি হলে এই দখল বজায় থাকবে। এমনকি ডনবাসের আরও বিস্তৃত এলাকা রাশিয়াকে দেওয়ার ইঙ্গিতও তিনি দিয়েছেন। ইউরোপের চোখে এটি ইউক্রেনের ওপর কৌশলগত পরাজয় চাপিয়ে দেওয়ার শামিল।
জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিরোধ
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কির সঙ্গে ট্রাম্পের ব্যক্তিগত বিরোধ আবার প্রকাশ্যে এসেছে। ট্রাম্প দাবি করেছেন, জেলেনস্কি নাকি যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি প্রস্তাব পড়েনইনি এবং তাঁর গণতান্ত্রিক বৈধতা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। প্রকাশ্য সংঘাতে না গিয়ে জেলেনস্কি নিজের শান্তি পরিকল্পনা সামনে এনেছেন এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত হলে নির্বাচনের প্রস্তুতির কথাও বলেছেন।

ইউক্রেনের সমঝোতার ইঙ্গিত
কিয়েভের প্রস্তাবে রাশিয়াকে কোনো ভূখণ্ড ছাড় না দেওয়ার কথা থাকলেও, দখলকৃত এলাকা ফেরাতে সামরিক শক্তি ব্যবহার না করার অঙ্গীকার রয়েছে। অর্থাৎ যুদ্ধ থামলে রাশিয়া আপাতত দখল বজায় রাখতে পারবে। এটি ট্রাম্পের চাপ সামাল দেওয়ার একটি কৌশল হিসেবেই দেখা হচ্ছে।
রুশ সম্পদ নিয়ে ইউরোপ-যুক্তরাষ্ট্র টানাপোড়েন
ইউরোপীয় ব্যাংকে জব্দ রাশিয়ার সার্বভৌম সম্পদ এখন নতুন বিরোধের কেন্দ্র। প্রায় দুইশো সত্তর বিলিয়ন ইউরোর এই অর্থ ইউক্রেনের পুনর্গঠনে ব্যবহার করতে চায় ইউরোপ। তবে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার মধ্যে গোপন সমঝোতার গুঞ্জনে ইউরোপ ক্ষুব্ধ। ইউরোপীয় কমিশন এখন এই অর্থ পুরোপুরি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রাখতে মরিয়া।
মিত্রের কাছ থেকেই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ
সব মিলিয়ে ইউরোপীয় কূটনীতিকদের কাছে বাস্তবতা কঠিন। রাশিয়া নয়, বরং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ মিত্র যুক্তরাষ্ট্রই ইউক্রেন ইস্যুতে ইউরোপের জন্য সবচেয়ে বড় অনিশ্চয়তা হয়ে উঠেছে। ট্রাম্প যদি রাশিয়ার পক্ষে একতরফা সমঝোতা চাপিয়ে দেন, ইউরোপের করার তেমন কিছু থাকবে না—এই আশঙ্কাই এখন সবচেয়ে বড়।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















