বছরের এই সময়টা এলেই উপহার কেনার চাপ বাড়ে। দোকান ঘোরা, অনলাইন পাতা স্ক্রল করা, দাম তুলনা—সব মিলিয়ে অনেকের জন্য কেনাকাটা আনন্দের চেয়ে ক্লান্তির। ঠিক এই জায়গাতেই দ্রুত জায়গা করে নিচ্ছে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা। বড়দিনের কেনাকাটায় ব্যক্তিগত সহকারী হয়ে উঠছে চ্যাটবট, যারা শোনে, বোঝে এবং পছন্দের তালিকা সাজিয়ে দেয়।
উপহার খোঁজার নতুন অভ্যাস
ধনী দেশগুলোতে এ মৌসুমে প্রায় তিন ভাগের দুই ভাগ ক্রেতা কেনাকাটায় কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার সাহায্য নিতে চান। তরুণদের আগ্রহ আরও বেশি। অনেকেই পছন্দের ধরন, বাজেট আর প্রয়োজন জানিয়ে দিচ্ছেন, বাকিটা সামলাচ্ছে চ্যাটবট। পণ্যের তালিকা, তুলনা এমনকি কোথায় সস্তা মিলছে তাও জানাচ্ছে এই ডিজিটাল সহকারী।

চ্যাটবটেই কেনা শেষ
শুধু পরামর্শ নয়, ধীরে ধীরে চ্যাটবটেই কেনাকাটা সম্পন্ন করার পথ খুলছে। গবেষণায় বলা হচ্ছে, আগামী দশকে বৈশ্বিক কেনাকাটার বড় অংশ এভাবেই হবে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা নির্মাতারা মনে করছেন, ইন্টারনেট যুগে যেমন অনলাইন বাজার বিপ্লব এনেছিল, তেমনি এবার কেনাকাটার অভিজ্ঞতা বদলে দেবে এই প্রযুক্তি।
সব বিক্রেতা অবশ্য খুশি নন। অনেক অনলাইন বাজার চায় ক্রেতা সরাসরি তাদের সাইটে আসুক। বিজ্ঞাপন আয়ের বিষয়টি বড় ফ্যাক্টর। আবার কেউ কেউ নতুন পথ বেছে নিচ্ছেন। বড় বড় খুচরা বিক্রেতা চ্যাটবটের সঙ্গে অংশীদারিত্বে যাচ্ছেন, যাতে নতুন ক্রেতার কাছে পৌঁছানো যায়।
নিজস্ব সহকারী বনাম বাইরের চ্যাটবট
কিছু প্রতিষ্ঠান নিজেদের কেনাকাটা সহকারী তৈরি করেছে। গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, কেনাকাটার সময় অনেক ক্রেতা তৃতীয় পক্ষের চ্যাটবট এর চেয়ে দোকানের নিজস্ব বটকে বেশি ভরসা করেন। কারণ সেখানে আগের কেনাকাটার তথ্য, পছন্দ আর ডেলিভারির নির্ভুলতা বেশি থাকে।

সব পণ্যে সমান দক্ষতা নয়
বিশেষজ্ঞদের মতে, যেসব পণ্যের স্পষ্ট বৈশিষ্ট্য আছে, সেখানে চ্যাটবট বেশি কার্যকর। যন্ত্রপাতি বা দৈনন্দিন সামগ্রীর ক্ষেত্রে তুলনা সহজ। কিন্তু ফ্যাশন বা রুচিনির্ভর পণ্যে সমস্যা হয়। সেখানে মাপ, অনুভূতি আর ব্যক্তিগত রুচির প্রশ্ন জড়িত, যা এখনো মানুষের অভিজ্ঞতার সমান নয়।
বিজ্ঞাপন আর বিশ্বাসের প্রশ্ন
চ্যাটবটে বিজ্ঞাপন ঢুকলে নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে পারে। কিছু প্রতিষ্ঠান ইতিমধ্যে এই পথে হাঁটছে। এতে ক্রেতার আস্থা নষ্ট হওয়ার ঝুঁকিও আছে। তাই ব্র্যান্ডগুলো অন্য কৌশল খুঁজছে, যাতে চ্যাটবট তাদের পণ্য সুপারিশ করে।
দোকানের নতুন গুরুত্ব
অদ্ভুতভাবে, অনলাইন কেনাকাটা বদলাতে গিয়ে বাস্তব দোকানের গুরুত্বও বাড়তে পারে। চোখে পড়ার মতো সাজসজ্জা, মানবিক বিক্রয়কর্মী আর পণ্য ছুঁয়ে দেখার অভিজ্ঞতা এখনো অনেকের কাছে অমূল্য। জরিপ বলছে, মানবিক যোগাযোগের মূল্য আবার বাড়ছে। বড়দিনের সময় তো উৎসবের আমেজ পেতেও মানুষ রাস্তায় নামতে চায়।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















