কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দৌড়ে সফটওয়্যারে চীন ও যুক্তরাষ্ট্র প্রায় সমানে সমান অবস্থানে পৌঁছে গেছে। বহু সূচকে চীনা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মডেল এখন মার্কিন মডেলকেও ছাড়িয়ে যাচ্ছে। কিন্তু হার্ডওয়্যারের ক্ষেত্রে চিত্রটি ভিন্ন। শক্তিশালী চিপ উৎপাদনে যুক্তরাষ্ট্র এখনও স্পষ্টভাবে এগিয়ে, আর সেই সুবিধার কেন্দ্রে রয়েছে এনভিডিয়া।
এই ব্যবধানকে কীভাবে কাজে লাগানো হবে, তা নিয়ে ওয়াশিংটনে মতভেদ দীর্ঘদিনের। এক পক্ষ চায় চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা উন্নয়ন থামাতে উন্নত চিপ সরবরাহ পুরোপুরি বন্ধ করতে। আরেক পক্ষের ধারণা, চীনকে পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন না করে মার্কিন প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল রাখাই বেশি কার্যকর। ডোনাল্ড ট্রাম্প শেষ পর্যন্ত দ্বিতীয় পথটিই বেছে নিয়েছেন।
চীনে এনভিডিয়ার চিপ বিক্রির অনুমোদন
ডিসেম্বরের শুরুতে ট্রাম্প প্রশাসন চীনের নির্দিষ্ট অনুমোদিত গ্রাহকদের কাছে এনভিডিয়ার এইচ দুইশো চিপ বিক্রির ছাড়পত্র দেয়। শর্ত হিসেবে যুক্তরাষ্ট্র সরকার পাবে বিক্রয় আয়ের একটি বড় অংশ। এই চিপটি এনভিডিয়ার সর্বাধুনিক ব্ল্যাকওয়েল বা আসন্ন রুবিনের চেয়ে পুরোনো হলেও, আগের অনুমোদিত এইচ কুড়ির তুলনায় বহু গুণ বেশি শক্তিশালী। বিশ্লেষকদের মতে, এই সিদ্ধান্তে এনভিডিয়ার বছরে বিপুল রাজস্ব বাড়তে পারে।
তবে বেইজিং বসে নেই। চীনা সরকার ইতোমধ্যে ভিন্ন কৌশলে হাঁটছে, যার লক্ষ্য বিদেশি চিপের ওপর নির্ভরতা কমানো।

দোলাচলের মার্কিন নীতি
গত কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্রের চিপ নিয়ন্ত্রণ নীতি একাধিকবার বদলেছে। বাইডেন প্রশাসন ২০২২ সালে চীনের জন্য উন্নত চিপ বিক্রিতে কঠোর নিষেধাজ্ঞা দেয়। তখন এনভিডিয়া নিয়ম মানতে নতুন মডেল তৈরি করে। পরে নিয়ম আরও কড়াকড়ি হলে আবার নতুন সংস্করণ আনা হয়। ট্রাম্প প্রশাসন একপর্যায়ে এসব চিপ নিষিদ্ধ করলেও পরে সিদ্ধান্ত বদলায়। এই অনিশ্চয়তাই চীনকে বিকল্প পথে হাঁটতে উৎসাহিত করেছে।
চীনা চিপ শিল্পের উত্থান
চীনা নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলো এখন দেশীয় কোম্পানিগুলোকে বিদেশি চিপ এড়িয়ে চলতে উৎসাহ দিচ্ছে। নিরাপত্তার যুক্তির পাশাপাশি দেশীয় বিকল্প ব্যবহারের আহ্বান জোরালো হয়েছে। ফলও মিলছে। চলতি বছরে চীনের কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা চিপ বাজারের বড় অংশ দখল করেছে দেশীয় নির্মাতারা। কয়েক বছর আগেও যেখানে মার্কিন কোম্পানিগুলোর আধিপত্য ছিল, এখন সেখানে ভারসাম্য দ্রুত বদলাচ্ছে। চীনের কয়েকটি শীর্ষ চিপ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারমূল্যের উল্লম্ফন সেই পরিবর্তনেরই ইঙ্গিত।

তবু বড় বাধা রয়ে গেছে
সব অগ্রগতির পরও চীনা চিপ নির্মাতাদের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে। উন্নত মেমোরি প্রযুক্তি ও আধুনিক উৎপাদন কারখানার অভাব তাদের গতি কমিয়ে দিচ্ছে। সবচেয়ে এগিয়ে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলোর চিপও এখনও এনভিডিয়ার এইচ দুইশোর কাছাকাছি পৌঁছাতে পারেনি। বিশেষজ্ঞদের ধারণা, সেই স্তরে যেতে চীনের আরও কয়েক বছর লাগবে, আর ততদিনে এনভিডিয়া আরও একাধিক প্রজন্ম এগিয়ে যাবে।
ট্রাম্পের কৌশল কতটা কার্যকর
এনভিডিয়ার প্রধান নির্বাহী নিজেই স্বীকার করেছেন, চীন শেষ পর্যন্ত এইচ দুইশো চিপ কিনতে দেবে কি না, তা অনিশ্চিত। চীনা সরকার সীমিত অনুমতির কথাও ভাবছে। যুক্তরাষ্ট্র চায় চীনকে প্রযুক্তিগতভাবে নিজেদের সঙ্গে বেঁধে রাখতে। কিন্তু চীনের সংকল্প ঠিক উল্টো, যত দ্রুত সম্ভব সেই বন্ধন ছিন্ন করা।
এই দ্বন্দ্বের ফলাফল শুধু চিপ বাজার নয়, বৈশ্বিক কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ভবিষ্যৎ দিকও নির্ধারণ করে দিতে পারে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















