আমেরিকার ভেতরে ‘ঘর কার’—এই প্রশ্নকে কেন্দ্র করে নতুন এক গভীর বিভাজনের কথা বলছে সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা ভাবনা। বাহ্যিক শত্রুর চেয়ে ভেতরের পরিচয়, সংস্কৃতি ও অভিবাসন নিয়ে সংঘাতই যেন রাজনীতির কেন্দ্রে।
ভেতরের যুদ্ধ, বাইরের নয়
সাম্প্রতিক জাতীয় নিরাপত্তা নথিতে রাশিয়া বা চীনের চেয়ে ইউরোপ, অভিবাসন ও সাংস্কৃতিক পরিচয় নিয়ে ভাষাই বেশি চোখে পড়ছে। ইউরোপের গণতন্ত্র, অভিবাসন নীতি, জন্মহার কমে যাওয়া এবং জাতীয় পরিচয়ের সংকটকে বড় হুমকি হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। বার্তা স্পষ্ট—অভিবাসন কঠোর না হলে ‘সভ্যতাগত বিলুপ্তি’র আশঙ্কা।

ঘর নিয়ে লড়াই
এই সংঘাত আসলে ‘ঘর’ নিয়ে। কে এই দেশের মালিক, কে নিজেকে ঘরের মানুষ ভাবতে পারবে—এই প্রশ্নে সমাজ বিভক্ত। যুদ্ধ, অর্থনীতি, সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও জলবায়ু বদলের ধাক্কায় অনেকের কাছে পরিচিত আমেরিকা অচেনা হয়ে উঠছে। সেই অনিশ্চয়তা মানুষকে শক্ত নেতার আশ্বাসের দিকে টানে।
অভিবাসন ও পরিচয়ের টানাপোড়েন
ইতিহাসের যে কোনো সময়ের চেয়ে এখন বেশি মানুষ জন্মভূমির বাইরে বাস করছে। দক্ষিণ সীমান্তে অভিবাসন চাপ, অননুমোদিত বসবাসকারীর সংখ্যা বৃদ্ধি—সব মিলিয়ে ভয় ও ক্ষোভ বাড়ছে। একই সঙ্গে জনসংখ্যার গঠন বদলাচ্ছে; শ্বেতাঙ্গ সংখ্যাগরিষ্ঠতার যুগ ফুরোচ্ছে—এই বাস্তবতা রাজনৈতিক সংঘাতকে তীব্র করছে।

বহুমুখী সংঘর্ষ
এক দিকে শ্বেতাঙ্গ খ্রিস্টান পরিচয় রক্ষার তাগিদ, অন্য দিকে কৃষ্ণাঙ্গদের দীর্ঘদিনের বৈষম্যের বিরুদ্ধে লড়াই। পাশাপাশি পরিচয়, ভাষা, আচরণ ও প্রযুক্তির দ্রুত বদলে সামাজিক নিয়ম প্রতিদিন পাল্টাচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ঝড়ে কাজের নিশ্চয়তা নড়বড়ে, তরুণদের কাছে নিজের বাড়ি কেনা দূরের স্বপ্ন—সব মিলিয়ে মানসিক গৃহহীনতা বাড়ছে।
দেয়াল প্রতীক কেন
সীমান্তে দেয়াল শুধু ভৌত বাধা নয়, পরিবর্তনের গতির বিরুদ্ধেও প্রতীক। অভিবাসন ঠেকানো যেমন বার্তা দেয়, তেমনি সংস্কৃতি, প্রযুক্তি ও প্রজন্মগত বদলের ভয় থেকেও আশ্রয় দেয়। এই মানসিক পটভূমিই নতুন নিরাপত্তা ভাবনার মূল সুর।

সভ্যতা বনাম গণতন্ত্র
এখন রাজনীতির কেন্দ্রে ‘পশ্চিমা সভ্যতা’ রক্ষা—জাতি ও ধর্মের ওপর জোর। এই দৃষ্টিতে গণতন্ত্র, মিত্রতা বা জোট গৌণ হয়ে পড়ে; অভিবাসনই প্রধান হুমকি। তাই ইউরোপের প্রতিও সমর্থন শর্তসাপেক্ষ—কঠোর অভিবাসন ও খ্রিস্টীয় উত্তরাধিকার জোরদার না হলে সহায়তা অনিশ্চিত।
অর্থ ও ক্ষমতার ভাষ্য
ফলে জাতীয় নিরাপত্তার সংজ্ঞা বদলাচ্ছে—সংস্কৃতি, আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্য ও পারিবারিক কাঠামো রক্ষাও নিরাপত্তা হিসেবে ধরা হচ্ছে। এটি কোনো বিচ্ছিন্ন ভাবনা নয়; প্রশাসনের ঘরোয়া ও বৈদেশিক নীতির গভীর ব্যাখ্যা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















