চীনের বিরল খনিজ রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ বিশ্বজুড়ে আতঙ্ক তৈরি করলেও জাপান আগেই শিখেছে নির্ভরতা কমানোর কঠিন পাঠ। পনেরো বছরের প্রস্তুতিতে টোকিও এখন অন্য দেশগুলোর জন্য বাস্তব এক দৃষ্টান্ত।
চীনের একচেটিয়া দখল ও জাপানের পুরোনো অভিজ্ঞতা
গাড়ি থেকে শুরু করে উন্নত ইলেকট্রনিক্স—সবখানেই প্রয়োজন বিরল খনিজ। এই খনিজের জোগানে দীর্ঘদিন ধরে চীনের প্রায় একচেটিয়া দখল। দুই হাজার দশ সালে দ্বীপ বিরোধ ঘিরে চীন হঠাৎ করে জাপানের জন্য বিরল খনিজ রপ্তানি কার্যত বন্ধ করে দিলে টোকিও বুঝে যায়, এই নির্ভরতা কতটা ঝুঁকিপূর্ণ। সেই অভিজ্ঞতাই জাপানকে বিকল্প পথ খুঁজতে বাধ্য করে।
নীরব প্রস্তুতিতে গড়া নতুন সরবরাহ শৃঙ্খল

ওই সংকটের পর জাপান সরকার ও বড় ব্যবসায়িক গোষ্ঠীগুলো চুপচাপ কাজ শুরু করে। লক্ষ্য ছিল চীনের বাইরে থেকে খনিজ আনা এবং পুরো সরবরাহ শৃঙ্খল নিজের নিয়ন্ত্রণে আনা। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নেতৃত্বে বড় অঙ্কের তহবিল গঠন করা হয়, যাতে খনি থেকে শুরু করে পরিশোধন ও উৎপাদন পর্যন্ত সব ধাপ ধীরে ধীরে নিরাপদ করা যায়।
অস্ট্রেলিয়া ও মালয়েশিয়ার সঙ্গে জোট
এই কৌশলের গুরুত্বপূর্ণ অংশ ছিল অস্ট্রেলিয়ার একটি খনি কোম্পানির সঙ্গে অংশীদারত্ব। অস্ট্রেলিয়ার খনি থেকে কাঁচামাল তোলা হয়, মালয়েশিয়ায় তা পরিশোধন করা হয়, এরপর জাপানে এনে ব্যবহার করা হয়। এই ব্যবস্থায় চীনের বাইরে বড় আকারের বিরল খনিজ পরিশোধন সম্ভব হয়, যদিও খরচ ও পরিবেশগত চ্যালেঞ্জ ছিল বড় বাধা।

খরচ, পরিবেশ আর রাজনৈতিক বাস্তবতা
বিরল খনিজ পরিশোধনের সময় বিপুল বর্জ্য ও তেজস্ক্রিয় অবশিষ্টাংশ তৈরি হয়। এগুলোর নিরাপদ ব্যবস্থাপনা ব্যয়বহুল ও সময়সাপেক্ষ। জাপানি ও সহযোগী দেশগুলোর কারখানায় কঠোর নিয়ম মানতে হয়, যা খরচ বাড়ায়। অন্যদিকে চীনের অনেক কারখানা তুলনামূলক কম নিয়ন্ত্রিত হওয়ায় তারা সস্তায় উৎপাদন করতে পারে। এই বৈষম্য কাটাতে জাপানকে দীর্ঘদিন সরকারি সহায়তার ওপর নির্ভর করতে হয়েছে।
নির্ভরতা কমলেও পথ এখনও বাকি
দুই হাজার দশ সালে জাপানের বিরল খনিজ আমদানির প্রায় পুরোটা আসত চীন থেকে। এখন সেই নির্ভরতা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে, যদিও পুরোপুরি শেষ হয়নি। তবু জাপান দেখিয়েছে, রাজনৈতিক সংকটের ধাক্কা সামলে ধীরে ধীরে বিকল্প গড়া সম্ভব।

বিশ্বের জন্য বার্তা
সম্প্রতি চীনের নতুন রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপকে নতুন করে ভাবতে বাধ্য করেছে। নিজেদের দেশে খনি ও কারখানা গড়ার পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সহযোগিতার দিকে ঝুঁকছে তারা। এই জায়গায় জাপানের অভিজ্ঞতা বলছে, একা নয়—মিত্রদের সঙ্গে সমন্বয়ই দীর্ঘমেয়াদি সমাধান।
সত্যের মুহূর্তে আন্তর্জাতিক সহযোগিতা
জাপানের নীতিনির্ধারকেরা মনে করেন, এখন সময় এসেছে দেশগুলো একসঙ্গে বাজার তৈরি করার। চীনের বাইরে থেকে বেশি পরিমাণে বিরল খনিজ কিনলে উৎপাদন বাড়বে, খরচ কমবে। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এই সহযোগিতা কতটা গভীর হবে। কারণ বিরল খনিজ শুধু অর্থনীতির নয়, আস্থার বিষয়ও।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















