যুক্তরাষ্ট্রের সুপ্রিম কোর্ট যদি ডোনাল্ড ট্রাম্পের ক্ষমতা সম্প্রসারণের পথে সবুজ সংকেত দেয়, তবে স্বাধীন নিয়ন্ত্রক সংস্থাগুলোর অস্তিত্ব ও বিশ্বাসযোগ্যতা এক বড় সংকটে পড়তে পারে।
বিচার আর বাণিজ্যের সংযোগ
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিযোগিতা ও একচেটিয়া বিরোধী নীতির বাস্তব চিত্র যেন একই সময়ে দুটো ঘটনায় ধরা পড়েছে। একদিকে সুপ্রিম কোর্টে চলছে পুরোনো এক রায়ের ভাগ্য নির্ধারণ, অন্যদিকে বিনোদন খাতে শত শত বিলিয়ন ডলারের অধিগ্রহণ যুদ্ধ। এই দুই ঘটনাই এখন সরাসরি প্রেসিডেন্টের ক্ষমতার সঙ্গে জড়িয়ে পড়েছে।
ফেডারেল ট্রেড কমিশন নিয়ে পুরোনো রায়
উনিশশ পঁয়ত্রিশ সালে দেওয়া একটি ঐতিহাসিক রায়ে বলা হয়েছিল, ফেডারেল ট্রেড কমিশনের কমিশনারদের যথেচ্ছভাবে বরখাস্ত করতে পারবেন না প্রেসিডেন্ট। উদ্দেশ্য ছিল, রাজনৈতিক চাপমুক্ত থেকে বিশেষজ্ঞদের মাধ্যমে বাজার তদারকি নিশ্চিত করা। সেই রায়ই এখন বাতিলের মুখে।
ট্রাম্প বনাম স্লটার মামলা
ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের অগ্রাধিকার মানতে অস্বীকৃতি জানানোর অভিযোগে এক কমিশনারকে বরখাস্ত করা হয়। এই সিদ্ধান্তের বৈধতা নিয়েই সুপ্রিম কোর্টে মামলা। আদালত যদি প্রেসিডেন্টের পক্ষে রায় দেয়, তবে কমিশনের নেতৃত্ব নিয়ন্ত্রণ পুরোপুরি হোয়াইট হাউসের হাতে চলে যাবে।
একক নির্বাহী তত্ত্বের উত্থান

বর্তমান আদালত এমন এক ধারণার প্রতি সহানুভূতিশীল, যেখানে বলা হয় নির্বাহী ক্ষমতার সবটাই প্রেসিডেন্টের হাতে। এই ব্যাখ্যা অনুযায়ী, স্বাধীন সংস্থা বলে কিছু থাকার কথা নয়। সমর্থকদের মতে, এতে গণতান্ত্রিক জবাবদিহি বাড়ে। সমালোচকদের মতে, এতে বিশেষজ্ঞভিত্তিক শাসন ভেঙে পড়ে।
বিচারপতিদের উদ্বেগ
আদালতের ভেতরেই প্রশ্ন উঠেছে, এই পথে হাঁটলে পারমাণবিক শক্তি থেকে শুরু করে আর্থিক সেবা পর্যন্ত সবকিছু রাজনৈতিক সিদ্ধান্তে পরিণত হবে। একবার এই সীমা ভাঙলে থামানো কঠিন হবে বলেও সতর্ক করেছেন বিচারপতিরা।
স্বল্পমেয়াদি প্রভাব, দীর্ঘমেয়াদি ঝুঁকি
তাৎক্ষণিকভাবে বড় পরিবর্তন নাও দেখা যেতে পারে, কারণ বাস্তবে প্রেসিডেন্ট আগেই অনেক সংস্থায় নিয়ন্ত্রণ জোরদার করেছেন। কিন্তু দীর্ঘমেয়াদে এর ফল হতে পারে ভয়াবহ। বড় ব্যবসায়িক সিদ্ধান্ত তখন জনস্বার্থ নয়, বরং প্রেসিডেন্টের পছন্দ-অপছন্দে নির্ভর করবে।
বাণিজ্যে রাজনৈতিক আনুগত্যের প্রবণতা
এমন পরিবেশে ব্যবসায়ীরা আইনি যুক্তির বদলে ক্ষমতাকেন্দ্রের সঙ্গে সম্পর্ক গড়তেই বেশি আগ্রহী হবে। সাম্প্রতিক বড় মিডিয়া কোম্পানি অধিগ্রহণ ঘিরে বিতর্ক এই আশঙ্কাকেই জোরালো করেছে।
কংগ্রেসের সীমিত হাতিয়ার
সবচেয়ে বিস্ময়কর বিষয় হলো, এমন রায় হলে কংগ্রেসের পক্ষে তা পাল্টানো প্রায় অসম্ভব হবে। তখন প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা নিয়ন্ত্রণে অর্থ বরাদ্দ আটকে দেওয়া বা অভিশংসন ছাড়া কার্যত আর কোনো পথ থাকবে না।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















