আসাদ পরিবারের শাসনের পতনের এক বছর পূর্তিতে সিরিয়ায় ন্যায়, জবাবদিহি ও শান্তিপূর্ণ সহাবস্থানের নতুন যুগের অঙ্গীকার করেছেন প্রেসিডেন্ট আহমাদ আল শারা। রাজধানী দামেস্কসহ দেশের নানা শহরে হাজার হাজার মানুষ রাস্তায় নেমে এদিনটি উদযাপন করেছে। ভোরের আজানের সঙ্গে পুরোনো শহরের মসজিদগুলোতে শুরু হয় উৎসবের প্রার্থনা, উড়ে সিরীয় পতাকা।
বিদ্যুৎগতির পরিবর্তন ও শাসন অবসান
গত বছরের নভেম্বরের শেষ দিকে ইসলামপন্থী নেতৃত্বাধীন জোটের বিদ্যুৎগতির অভিযানে ডিসেম্বরের আট তারিখে দামেস্কের পতন ঘটে। এর মধ্য দিয়ে শেষ হয় আসাদ পরিবারের পাঁচ দশকেরও বেশি শাসন ও এক দশকের রক্তক্ষয়ী গৃহযুদ্ধ। আল শারা বলেন, স্বাধীনতার এই ভোর অতীতের স্বৈরতন্ত্র ও মিথ্যার উত্তরাধিকার থেকে চূড়ান্ত বিচ্ছেদের ঘোষণা।
ন্যায় ও জবাবদিহির অঙ্গীকার
উদযাপন উপলক্ষে ভাষণে আল শারা জানান, আইন ভঙ্গ ও সিরীয় জনগণের বিরুদ্ধে অপরাধে জড়িতদের জবাবদিহি নিশ্চিত করতে রূপান্তরকালীন ন্যায়বিচারের নীতিতে সরকার অটল। আতশবাজি ও বিপ্লবী সুরের সঙ্গে দেশজুড়ে উদযাপন চললেও তিনি স্থিতি ও সহাবস্থানের গুরুত্বে জোর দেন।

ভঙ্গুর রূপান্তর ও সহিংসতার চ্যালেঞ্জ
বহুধর্মীয় সিরিয়ার ক্ষমতা রূপান্তর এখনও ভঙ্গুর। আলাউই অধ্যুষিত উপকূলে সাম্প্রদায়িক হত্যাকাণ্ড এবং দক্ষিণের দ্রুজ সংখ্যাগরিষ্ঠ সুইদায় প্রাণঘাতী সংঘর্ষ উদ্বেগ বাড়িয়েছে। সহিংসতায় সরকারি বাহিনী বা মিত্রদের জড়িত থাকার অভিযোগে তদন্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
যুদ্ধের ক্ষত ও ন্যায়ের অপেক্ষা
দুই হাজার এগারো সালে গণতন্ত্রপন্থী আন্দোলনে দমনপীড়ন থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধে অর্ধমিলিয়নের বেশি মানুষ নিহত এবং লক্ষ লক্ষ বাস্তুচ্যুত হয়েছে। এখনও বহু মানুষ নিখোঁজ, অনেকেই আগের সরকারের কারাগারে হারিয়ে গেছেন। পরিবারগুলো বিচার ও সত্যের অপেক্ষায়।
আশা ও বাস্তবতার টানাপোড়েন
একজন চিকিৎসক ইয়াদ বুরগোল বলেন, গত এক বছরে যা ঘটেছে তা অলৌকিক মনে হয়। বিদ্যুৎ ও মৌলিক সেবার প্রয়োজন থাকলেও তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নাগরিক শান্তি। মানবিক কর্মী গাইথ তারবিনও যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে নাগরিক শান্তিকে অগ্রাধিকার দেওয়ার আহ্বান জানান।
বিদেশে অগ্রগতি, ঘরে বড় কাজ
আল শারা আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মর্যাদা পুনরুদ্ধার ও নিষেধাজ্ঞা শিথিলের মতো অগ্রগতি দেখালেও ঘরে বিশ্বাস অর্জন, নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, প্রতিষ্ঠান পুনর্গঠন ও জাতীয় ঐক্য রক্ষার বড় চ্যালেঞ্জ রয়ে গেছে। উমাইয়া মসজিদে ভোরের প্রার্থনার পর তিনি শক্তিশালী ও স্থিতিশীল সিরিয়া গঠনে নাগরিকদের ঐক্যের আহ্বান জানান।

মানবাধিকার মূল্যায়ন ও সমালোচনা
অধিকার সংস্থাগুলো বলছে, ন্যায় ও স্বচ্ছতায় কিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ থাকলেও সহিংসতা ঠেকাতে ব্যর্থতা উদ্বেগজনক। সংখ্যালঘু সুরক্ষা ও বিকেন্দ্রীকরণ প্রশ্নে সমালোচনার মুখে সরকার কেন্দ্রীভূত রাষ্ট্রব্যবস্থার অবস্থানেই অনড়।
জাতিসংঘের বার্তা ও ভিন্ন প্রতিক্রিয়া
জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস বলেন, সামনে কেবল রাজনৈতিক রূপান্তর নয়, ভাঙা সমাজ জোড়া লাগানো ও মর্যাদাপূর্ণ নিরাপদ জীবনের সুযোগ রয়েছে। তবে সর্বত্র উৎসব ছিল না। জাবলেহ এলাকায় দোকানপাট বন্ধ থাকে, উত্তর-পূর্ব কুর্দি অঞ্চলে নিরাপত্তাজনিত কারণে সমাবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি হয়। কেন্দ্রের সঙ্গে একীভূতকরণ চুক্তির অগ্রগতি থমকে আছে, আর দক্ষিণে ইসরায়েলি নিরাপত্তা ইস্যুও বড় চ্যালেঞ্জ।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















