জাপানের হোক্কাইডোর তাইকি শহরে অবস্থিত হোক্কাইডো স্পেসপোর্ট ধীরে ধীরে এশিয়ার বাণিজ্যিক রকেট উৎক্ষেপণের গুরুত্বপূর্ণ ঘাঁটি হয়ে উঠতে চাইছে। বেসরকারি খাতে উন্মুক্ত জাপানের একমাত্র রকেট উৎক্ষেপণ কেন্দ্র হিসেবে দেশি ও বিদেশি মহাকাশ কোম্পানির আগ্রহ ক্রমেই বাড়ছে।
হোক্কাইডো স্পেসপোর্টের উত্থান
টোকাচি অঞ্চলের তাইকি শহরে অবস্থিত এই স্পেসপোর্টকে ঘিরে জাপানের মহাকাশ শিল্পে নতুন গতি তৈরি হয়েছে। এশিয়ার মহাকাশ শিল্পের কেন্দ্র হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে এখানে নিয়মিত অবকাঠামো উন্নয়ন চলছে। দেশীয় স্টার্টআপ থেকে শুরু করে বিদেশি সংস্থাও এখন এই কেন্দ্রকে তাদের ভবিষ্যৎ উৎক্ষেপণ ঘাঁটি হিসেবে দেখছে।
মোমো রকেট থেকে জিরো অভিযানের পথে
দুই হাজার উনিশ সালে ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিস তাদের সাউন্ডিং রকেট মোমো নম্বর তিন সফলভাবে উৎক্ষেপণ করে ইতিহাস গড়ে। এটি ছিল জাপানের প্রথম কোনো বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মহাকাশে রকেট পাঠানোর ঘটনা, যা সারা দেশে ব্যাপক আলোড়ন তোলে। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি জিরো নামের নতুন রকেট তৈরিতে ব্যস্ত, যা কক্ষপথে বেসরকারি কৃত্রিম উপগ্রহ বহনে সক্ষম হবে। নতুন সমাবেশ ভবন ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা শেষ হলে, দুই হাজার ছাব্বিশ সালের আগেই এই রকেট উৎক্ষেপণের লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে।
বিদেশি কোম্পানির আগমন
শুধু জাপানি নয়, বিদেশি সংস্থার উপস্থিতিও বাড়ছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে তাইওয়ানের একটি রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠানের জাপানি শাখা এখান থেকে উৎক্ষেপণ পরিচালনা করে, যা ছিল জাপানে কোনো বিদেশি গোষ্ঠীর প্রথম এমন কার্যক্রম। সামনে টোকিওভিত্তিক পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেট নির্মাতা প্রতিষ্ঠান এবং যুক্তরাষ্ট্রের একটি মহাকাশ কোম্পানিও এই স্পেসপোর্ট ব্যবহারের বিষয়ে আলোচনা চালাচ্ছে।

ভৌগোলিক সুবিধাই বড় শক্তি
স্পেসপোর্ট পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান স্পেস কোতানের প্রধান ইয়োশিনোরি ওদাগিরি জানান, এই কেন্দ্রের সবচেয়ে বড় শক্তি এর ভৌগোলিক অবস্থান। দক্ষিণ ও পূর্ব দিকে বিস্তৃত সমুদ্র, তুলনামূলকভাবে কম আকাশ ও নৌযান চলাচল এবং বছরে দুই হাজার ঘণ্টার বেশি সূর্যালোক তাইকিকে উৎক্ষেপণের জন্য আদর্শ করে তুলেছে। স্থানীয়ভাবে পরিচিত টোকাচি-বারে নামে পরিচ্ছন্ন আকাশের দিনও এখানে বেশি।
চার দশকের প্রস্তুতি
তাইকি শহর কর্তৃপক্ষ প্রায় চল্লিশ বছর আগে থেকেই মহাকাশ শিল্পকে আকৃষ্ট করার উদ্যোগ নেয়। দুই হাজার একুশ সালে এশিয়ার বাণিজ্যিক স্পেসপোর্ট হওয়ার স্বপ্ন বাস্তবায়নে স্পেস কোতান প্রতিষ্ঠায় সক্রিয় ভূমিকা রাখে শহর প্রশাসন। ভবিষ্যতে উৎক্ষেপণ চাহিদা বাড়বে ধরে নিয়ে আশপাশের এলাকায় আরও উৎক্ষেপণ কেন্দ্র ও সহায়ক অবকাঠামো সম্প্রসারণের পরিকল্পনাও চলছে।
গাড়ি শিল্প থেকে মহাকাশ শিল্পে যোগসূত্র
হোক্কাইডোর মহাকাশ খাতে আগ্রহ দেখাচ্ছে জাপানের গাড়ি শিল্পও। গত জুনে একটি বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান তাইকিতে পুনর্ব্যবহারযোগ্য রকেটের উড্ডয়ন ও অবতরণ পরীক্ষা চালায়। আরেকটি বড় গাড়ি নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারস্টেলার টেকনোলজিসের জিরো রকেটের ইঞ্জিন উৎপাদনে যুক্ত হয়েছে। ইতিমধ্যে রকেটের জ্বালানি পাম্প পাঠানো হয়েছে এবং আগামী বসন্তেই সম্পূর্ণ ইঞ্জিন সংযোজন শুরুর পরিকল্পনা রয়েছে।
হোক্কাইডোর অর্থনীতিতে নতুন সম্ভাবনা
ওদাগিরির মতে, বিশেষ করে রকেট ইঞ্জিন খাত এমন একটি ক্ষেত্র হতে পারে যেখানে উন্নত পেট্রোল ইঞ্জিন প্রযুক্তির দক্ষ ব্যবহার সম্ভব। তিনি আশা প্রকাশ করেন, টোকাচি অঞ্চলের এই বাড়তে থাকা মহাকাশ শিল্প হোক্কাইডোর অর্থনীতির অন্যতম চালিকাশক্তিতে পরিণত হবে, আধুনিক সেমিকন্ডাক্টর উৎপাদনের আরেক বড় প্রকল্পের পাশাপাশি।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















