নির্বাচনের সময় সব ধরনের ঝুঁকি সম্পূর্ণভাবে দূর করা সম্ভব নয় বলে মন্তব্য করেছেন নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবু ফজল মো. সানাউল্লাহ। তিনি বলেন, এই বাস্তবতা মাথায় রেখে রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের সর্বোচ্চ সতর্ক থাকতে হবে। গোপন নাশকতা ও হত্যাচেষ্টার আশঙ্কা মোকাবিলায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সম্পূর্ণ প্রস্তুত থাকলেও ব্যক্তিগত ও সাংগঠনিক সচেতনতা অত্যন্ত জরুরি।
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক
শনিবার নির্বাচন কমিশনে অনুষ্ঠিত এক বিশেষ বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা বলেন ইসি সানাউল্লাহ। তিনি জানান, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে যেকোনো ধরনের হত্যাচেষ্টা বা গোপন হামলা ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থায় রয়েছে। সাম্প্রতিক নিরাপত্তা উদ্বেগ সত্ত্বেও নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে বলে তিনি আশ্বাস দেন।
বিশেষ বৈঠকে নিরাপত্তা পরিস্থিতি পর্যালোচনা
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার পর উদ্ভূত আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি পর্যালোচনায় এ বৈঠকে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দা সংস্থার প্রতিনিধিরা অংশ নেন। বৈঠকে সাম্প্রতিক সহিংসতা, গোপন হামলা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকির বিভিন্ন দিক বিশ্লেষণ করা হয়।
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলা কেন্দ্রবিন্দুতে
বৈঠকে বিশেষভাবে আলোচনায় আসে ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির ওপর সাম্প্রতিক ‘গোপন ও লক্ষ্যভিত্তিক হামলা’। এই ঘটনায় রাজনৈতিক অঙ্গন ও ভোটারদের মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে বলে জানান কমিশনার সানাউল্লাহ।
তিনি বলেন, তদন্তের স্বার্থে সব তথ্য প্রকাশ করা সম্ভব নয়, তবে প্রাথমিক অনুসন্ধানে দেখা গেছে সন্দেহভাজন ব্যক্তি ধীরে ধীরে ভুক্তভোগীর ঘনিষ্ঠতা অর্জন করেছিল। তার অতীতে রাজনৈতিক সহিংসতা ও অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডের সংশ্লিষ্টতাও রয়েছে।
জামিনে মুক্ত অপরাধীদের নতুন ঝুঁকি
বৈঠকে জানানো হয়, অতীতে গ্রেপ্তার হওয়া অনেক জঙ্গি ও অপরাধী সময়ের ব্যবধানে জামিনে মুক্ত হয়ে বর্তমানে সমাজে সক্রিয় রয়েছে। এতে করে নতুন করে নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি হচ্ছে। বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করে অতিরিক্ত কী ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা নিয়ে আলোচনা হয়েছে।
বিচ্ছিন্ন ঘটনা নাকি সমন্বিত নাশকতা
হামলাটি বিচ্ছিন্ন কোনো ঘটনা নাকি বৃহত্তর সমন্বিত পরিকল্পনার অংশ—এ বিষয়টিও পর্যালোচনা করা হয়। একই সঙ্গে প্রতিরোধমূলক গোয়েন্দা তৎপরতা বা অভিযানে কোনো ঘাটতি ছিল কি না, তাও খতিয়ে দেখা হয়েছে।
নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা
সাম্প্রতিক সময়ে দুটি উপজেলা পর্যায়ের নির্বাচন অফিসে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা করা হয়, যা ব্যর্থ হলেও সিসিটিভি ফুটেজে ধরা পড়ে। নির্বাচন কমিশনের মতে, এসব ঘটনা ব্যক্তি বা বিচ্ছিন্ন গোষ্ঠীর মাধ্যমে গোপন নাশকতার ইঙ্গিত দেয়।
নিরাপত্তা জোরদারে কঠোর নির্দেশনা
নাশকতা প্রতিরোধে চেকপোস্ট বাড়ানো, পরিচিত অপরাধীদের চলাচলে বিধিনিষেধ, অবৈধ অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধার এবং গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে সমন্বয় জোরদারের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে বলে জানান কমিশনার।
‘রেবেল হান্ট’ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ
আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কমিশনকে জানায়, ‘রেবেল হান্ট’ অভিযানের দ্বিতীয় ধাপ শুক্রবার থেকে পুনরায় শুরু হয়েছে। এটি সমন্বিতভাবে পরিচালিত হচ্ছে এবং সীমান্ত এলাকা, বিশেষ করে দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল ও রোহিঙ্গা অধ্যুষিত অঞ্চলে বাড়তি নজরদারি দেওয়া হচ্ছে।
সাইবার হুমকি ও গুজব নজরদারি
নির্বাচন কমিশন জানায়, জাতীয় সাইবার অবকাঠামো ব্যবহার করে সাইবার নিরাপত্তা ইউনিট ইতোমধ্যে সক্রিয় রয়েছে। নির্বাচনসংক্রান্ত গুজব, বিভ্রান্তিকর তথ্য ও অনলাইন হুমকি পর্যবেক্ষণে কমিশনে একটি বিশেষ সমন্বয় সেল কাজ করছে।
ভীতি সৃষ্টির চেষ্টা ব্যর্থ হবে
হামলার মাধ্যমে প্রার্থী ও ভোটারদের মধ্যে ভীতি তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে কি না—এমন প্রশ্নের জবাবে ইসি সানাউল্লাহ বলেন, এই ধরনের কর্মকাণ্ডের উদ্দেশ্যই ভয় সৃষ্টি করা। তবে এসব অপচেষ্টা সফল হতে দেওয়া হবে না।
অস্ত্র লাইসেন্স প্রসঙ্গে অবস্থান
স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার বক্তব্যে প্রার্থীদের অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়ার প্রসঙ্গ উঠলেও নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে এ বিষয়ে এখনো কোনো আলোচনা হয়নি বলে জানান কমিশনার। আনুষ্ঠানিক ব্যাখ্যা পেলে বিষয়টি পর্যালোচনা করা হবে।
গ্রেপ্তার ও তদন্ত অগ্রগতি
শরিফ ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনায় ইতোমধ্যে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। চলমান তদন্তের কারণে বিস্তারিত তথ্য প্রকাশ করা হয়নি বলে কমিশন জানায়।
আচরণবিধি বাস্তবায়নে মাঠে প্রশাসন
নির্বাচনী আচরণবিধি বাস্তবায়নে ৪৮ ঘণ্টার সময়সীমা শেষ হওয়ার পর অবৈধ পোস্টার ও ব্যানার অপসারণে রিটার্নিং অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
সতর্ক থাকার আহ্বান ও নির্বাচন সময়মতো
ইসি সানাউল্লাহ বলেন, নির্বাচনের সময় সব ঝুঁকি দূর করা সম্ভব নয়। তাই রাজনৈতিক দল ও প্রার্থীদের বিশেষভাবে সতর্ক থাকতে হবে। তিনি সতর্ক করে বলেন, নাশকতা কখনো কখনো ঘনিষ্ঠ বলয় থেকেও আসতে পারে।
তিনি পুনর্ব্যক্ত করেন, নির্ধারিত সময়েই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে এবং গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া ব্যাহত বা ভয় দেখানোর যেকোনো প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে রাষ্ট্র কঠোর ও সমন্বিতভাবে ব্যবস্থা নেবে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















