০৪:০৬ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ১৫ ডিসেম্বর ২০২৫
ভিন্ন একটি চিন্তা… সিরিয়ায় কেন এখনো মার্কিন সেনা? উপস্থিতির পেছনের কারণ ও বর্তমান বাস্তবতা পূর্ব কঙ্গোতে সবচেয়ে সংকটময় সময়ে বন্ধ হলো বিনা খরচের প্রসূতি সেবা হারিয়ে যাচ্ছে শকুন এশিয়ার মহাকাশ মানচিত্রে নতুন কেন্দ্র হতে চায় হোক্কাইডো স্পেসপোর্ট অমিতাভ ঘোষের নতুন বই ‘ঘোস্ট-আই’: অতীত, জলবায়ু সংকট আর এক অদ্ভুত বাস্তবতার খোঁজ ভোট না দিলে ঘরে থাকার হুঁশিয়ারি: শরীয়তপুরে বিএনপি নেতার বক্তব্যে তোলপাড় হাদিকে গুলির ঘটনায় ‘মাথায় বাজ পড়ার মতো’ ধাক্কা খেলেন সিইসি হাদির অবস্থা আরও সংকটজনক, সর্বশেষ সিটি স্ক্যানে মস্তিষ্কের ফোলা বেড়েছে রোহিঙ্গা আশ্রয় মানবিক দায়িত্ব, প্রত্যাবাসন জরুরি

এক বছরে ২৫৮ কারখানা বন্ধ, কর্মহীন এক লাখ শ্রমিক: এএফডব্লিউএ

গত এক বছরে দেশে অন্তত ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে এক লাখের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। এ পরিস্থিতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে জানিয়েছে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এএফডব্লিউএ)।

সংলাপে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে করণীয়’ শীর্ষক এক সংলাপে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের জেন্ডার কর্মকর্তা আমরিন হোসাইন অ্যানি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাদের হাওলাদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম এবং এএফডব্লিউএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান।

প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম সংকটের যৌথ চাপ
বক্তারা বলেন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, জলবায়ু সংকট ও নাজুক শ্রম পরিস্থিতির সম্মিলিত প্রভাবে তৈরি পোশাক খাত এখন আরও জটিল ও অনিশ্চিত বাস্তবতায় পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং শ্রমিক অধিকার—এই তিনটি বিষয়কে একীভূত করে একটি সমন্বিত রোডম্যাপ তৈরির ওপর তারা জোর দেন।

একের পর এক কারখানা বন্ধ, বাড়ছে বেকারত্ব

মজুরি ও মুনাফার বৈষম্য
আমরিন হোসাইন অ্যানি বলেন, পোশাক শিল্প থেকে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হয়, তার সঙ্গে শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির স্পষ্ট বৈষম্য রয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের মজুরি এখনও জীবনধারণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি। উৎপাদন ব্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চাপ প্রায়শই শ্রমিকদের ওপরই চাপানো হয়, যার ফলে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি নারী। নারীদের এই অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, জেন্ডার-সংবেদনশীল কর্মস্থল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার এখনও সীমিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়া, রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা—সব মিলিয়ে খাতটির অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

ন্যূনতম মজুরি ও শ্রমিক ঐক্যের আহ্বান
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এই সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি মানবিক ও জীবনধারণযোগ্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবি জানান। কোনো শ্রমিকের মজুরি যেন দারিদ্র্যসীমার নিচে না থাকে, সে জন্য রেশনিং ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং সব খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে একক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেন।

সব পক্ষের অংশগ্রহণে সমাধানের তাগিদ
সমাপনী বক্তব্যে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, শিল্পখাতের সমস্যার সমাধানে শ্রমিক, মালিক ও সরকার—সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি কম মজুরি ও মজুরি বৈষম্যের অবসান এবং কারখানায় স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।

জনপ্রিয় সংবাদ

ভিন্ন একটি চিন্তা…

এক বছরে ২৫৮ কারখানা বন্ধ, কর্মহীন এক লাখ শ্রমিক: এএফডব্লিউএ

০৯:০৩:০২ অপরাহ্ন, রবিবার, ১৪ ডিসেম্বর ২০২৫

গত এক বছরে দেশে অন্তত ২৫৮টি কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে, যার ফলে এক লাখের বেশি শ্রমিক কর্মহীন হয়েছেন। এ পরিস্থিতি সামাজিক ও অর্থনৈতিক ঝুঁকি আরও বাড়িয়ে তুলেছে বলে জানিয়েছে এশিয়া ফ্লোর ওয়েজ অ্যালায়েন্স (এএফডব্লিউএ)।

সংলাপে গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন
রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবে আয়োজিত ‘প্রযুক্তিগত রূপান্তর, জলবায়ু পরিবর্তন ও বিদ্যমান শ্রম পরিস্থিতির প্রেক্ষাপটে করণীয়’ শীর্ষক এক সংলাপে এ গবেষণা প্রতিবেদন উপস্থাপন করেন বাংলাদেশ নারী প্রগতি সংঘের জেন্ডার কর্মকর্তা আমরিন হোসাইন অ্যানি।

অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন। আলোচনায় অংশ নেন অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ, শ্রমিক-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের যুগ্ম আহ্বায়ক আবদুল কাদের হাওলাদার, বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফৌজিয়া মোসলেম এবং এএফডব্লিউএর বাংলাদেশ প্রতিনিধি আরিফুর রহমান।

প্রযুক্তি, জলবায়ু ও শ্রম সংকটের যৌথ চাপ
বক্তারা বলেন, প্রযুক্তিগত পরিবর্তন, জলবায়ু সংকট ও নাজুক শ্রম পরিস্থিতির সম্মিলিত প্রভাবে তৈরি পোশাক খাত এখন আরও জটিল ও অনিশ্চিত বাস্তবতায় পড়েছে। এই সংকট থেকে উত্তরণে প্রযুক্তি ব্যবস্থাপনা, জলবায়ু সহনশীলতা এবং শ্রমিক অধিকার—এই তিনটি বিষয়কে একীভূত করে একটি সমন্বিত রোডম্যাপ তৈরির ওপর তারা জোর দেন।

একের পর এক কারখানা বন্ধ, বাড়ছে বেকারত্ব

মজুরি ও মুনাফার বৈষম্য
আমরিন হোসাইন অ্যানি বলেন, পোশাক শিল্প থেকে যে পরিমাণ মুনাফা অর্জিত হয়, তার সঙ্গে শ্রমিকদের প্রাপ্ত মজুরির স্পষ্ট বৈষম্য রয়েছে। বৈশ্বিক সরবরাহ শৃঙ্খলে বাংলাদেশের গুরুত্বপূর্ণ অবস্থান থাকা সত্ত্বেও শ্রমিকদের মজুরি এখনও জীবনধারণযোগ্য পর্যায়ে পৌঁছায়নি। উৎপাদন ব্যয় ও আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার চাপ প্রায়শই শ্রমিকদের ওপরই চাপানো হয়, যার ফলে তাদের জীবনমানের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।

নারী শ্রমিকদের অংশগ্রহণ ও সীমাবদ্ধতা
বর্তমানে তৈরি পোশাক খাতে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করছেন, যাদের মধ্যে ৬০ শতাংশের বেশি নারী। নারীদের এই অংশগ্রহণ অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও নিরাপদ কর্মপরিবেশ, জেন্ডার-সংবেদনশীল কর্মস্থল এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে তাদের প্রবেশাধিকার এখনও সীমিত। রাজনৈতিক অস্থিরতা, ক্রেতাদের আস্থা কমে যাওয়া, রপ্তানি বাজারে প্রতিযোগিতা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সংকট এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক মন্দা—সব মিলিয়ে খাতটির অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে বলে তিনি জানান।

ন্যূনতম মজুরি ও শ্রমিক ঐক্যের আহ্বান
অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক এম এম আকাশ বলেন, এই সংকট সমাধানে সমন্বিত উদ্যোগ প্রয়োজন। তিনি মানবিক ও জীবনধারণযোগ্য জাতীয় ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা ও বাস্তবায়নের দাবি জানান। কোনো শ্রমিকের মজুরি যেন দারিদ্র্যসীমার নিচে না থাকে, সে জন্য রেশনিং ব্যবস্থা, প্রশিক্ষণ কেন্দ্র স্থাপন এবং সব খাতে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের অধিকার নিশ্চিত করার আহ্বান জানান তিনি। একই সঙ্গে শ্রমিক সংগঠনগুলোকে একক প্ল্যাটফর্মে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার তাগিদ দেন।

সব পক্ষের অংশগ্রহণে সমাধানের তাগিদ
সমাপনী বক্তব্যে শ্রমিক নেতা আবুল হোসেন বলেন, শিল্পখাতের সমস্যার সমাধানে শ্রমিক, মালিক ও সরকার—সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ জরুরি। তিনি কম মজুরি ও মজুরি বৈষম্যের অবসান এবং কারখানায় স্বাস্থ্যকর ও নিরাপদ কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার ওপর গুরুত্ব দেন।