দক্ষিণ ফ্লোরিডার রাজনীতিতে এক যুগান্তকারী পরিবর্তনের সাক্ষী হলো মায়ামি। ডিসেম্বরের নির্বাচনে আইলিন হিগিন্স নির্বাচিত হয়েছেন শহরের প্রথম নারী মেয়র হিসেবে, একই সঙ্গে এই শতাব্দীতে প্রথম ডেমোক্র্যাট মেয়র। কিন্তু এই জয়ের তাৎপর্য শুধু পরিচয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়। এটি প্রায় চার দশক ধরে চলা ক্ষমতাধর পরিবারগুলোর একচ্ছত্র প্রভাবের অবসান এবং দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির রাজনীতির বিরুদ্ধে এক স্পষ্ট বার্তা।
ক্ষমতার বংশপরম্পরার অবসান
দীর্ঘ সময় ধরে মায়ামির রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেছে হাতে গোনা কয়েকটি প্রভাবশালী পরিবার। এবারের নির্বাচনে তেরো প্রার্থীর ভিড়েও হিগিন্সের জয় দেখিয়েছে, ভোটাররা সেই পুরোনো শাসনব্যবস্থায় আর আস্থা রাখছেন না। শহরটি এমন এক দশকের মাঝামাঝি সময়ে নতুন মেয়র পাচ্ছে, যখন জনসংখ্যা, ব্যবসা আর বিনিয়োগের চাপ মায়ামিকে তার সামর্থ্যের চেয়েও দ্রুত বদলে দিচ্ছে।

দুর্নীতির ছায়া আর ক্ষোভ
বিদায়ী মেয়র ফ্রান্সিস সুয়ারেজের সময়কালে শহর রাজনীতিতে দুর্নীতির অভিযোগ ঘনীভূত হয়। ডেভেলপারদের সঙ্গে সন্দেহজনক লেনদেন নিয়ে ফেডারেল তদন্ত, পাশাপাশি খণ্ডকালীন মেয়রের দায়িত্ব পালন করেও ব্যক্তিগত সম্পদের অস্বাভাবিক বৃদ্ধি শহরবাসীর ক্ষোভ বাড়িয়েছে। সাবেক মেয়র জো ক্যারোলোর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার ও মামলার বোঝা শেষ পর্যন্ত করদাতাদের কাঁধে চাপিয়েছে। এসব ঘটনাই মায়ামির পুরোনো সমস্যাকে আবার সামনে এনেছে, যেখানে ধনী ও প্রভাবশালীরা সুবিধা পায়, আর সাধারণ মানুষের ভাগ্যে জোটে জটিল ডেমোক্রেসি।
দ্রুত বৃদ্ধি, তীব্র চাপ
মহামারির পর ফ্লোরিডা উত্তরাঞ্চলের মানুষের কাছে হয়ে ওঠে নতুন আশ্রয়। ভালো আবহাওয়া, আয়কর না থাকা আর দূর থেকে কাজের সুযোগ মায়ামিকে আকর্ষণীয় করে তোলে। ২০২০ থেকে ২০২৪ সালের মধ্যে শহরের জনসংখ্যা বেড়েছে প্রায় দশ শতাংশ। গড়ে উঠেছে বিলাসবহুল সুউচ্চ ভবন, নতুন ব্যবসা আর ঝলমলে আর্থিক কেন্দ্র। কিন্তু এই উন্নতির আড়ালে চাপ বেড়েছে অবকাঠামো, সড়ক আর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার ওপর।

দুই মায়ামির বাস্তবতা
অর্থনৈতিক উত্থানের সঙ্গে সঙ্গে বেড়েছে জীবনযাত্রার খরচ। গত কয়েক বছরে প্রকৃত মজুরি কমেছে, আবাসন ব্যয় বেড়েছে ব্যাপকভাবে। ভাড়া দিতে গিয়ে সাধারণ মানুষ আয়ের বড় অংশ হারাচ্ছে। ফলে শহরে এখন আলোচনায় এসেছে ‘দুটি মায়ামি’—একটি অতিধনীদের জন্য, আরেকটি তাদের সেবা দেওয়া শ্রমজীবীদের জন্য।
নতুন নেতৃত্বের চ্যালেঞ্জ
আইলিন হিগিন্স এই অভিবাসন আর বিনিয়োগ প্রবাহকে দেখছেন মিশ্র আশীর্বাদ হিসেবে। মেয়রের ক্ষমতা সীমিত হলেও তার হাতে থাকা বাজেট আগের তুলনায় বহুগুণ বেশি। তিনি পূর্ণকালীন মেয়র হিসেবে কাজ করতে চান, অনুমোদন প্রক্রিয়া সংস্কার করতে চান এবং সাশ্রয়ী আবাসনের দিকে জোর দিতে চান। ব্যবসায়ী মহল ও শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোও দক্ষ জনশক্তি তৈরির দৌড়ে নেমেছে।

শহর বিক্রি নয়, শহর গড়া
মায়ামি বরাবরই স্বপ্নের শহর হিসেবে পরিচিত। কিন্তু এখন মেয়রের দায়িত্ব শুধু শহরের ভাবমূর্তি বিক্রি করা নয়, বরং যারা এখানে বাস করছে, তাদের জন্য শহরটিকে কার্যকর ও বাসযোগ্য করে তোলা। নতুন মেয়রের সামনে সবচেয়ে বড় প্রশ্ন, এই উন্মত্ত বৃদ্ধিকে কি তিনি সবার জন্য টেকসই নগরীতে রূপ দিতে পারবেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















