বিশ্ব অর্থনীতির চাপ ও প্রধান বাজারগুলোতে ভোক্তা চাহিদা কমে যাওয়ার প্রভাবে চলতি ২০২৫–২৬ অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক রপ্তানি কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি কমলেও যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও কানাডায় সীমিত প্রবৃদ্ধি সামগ্রিক চিত্রে সামান্য স্বস্তি দিচ্ছে।
বিশ্ববাজারে চাহিদা সংকোচনের সরাসরি প্রভাব পড়েছে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক খাতে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে, অর্থাৎ জুলাই থেকে নভেম্বর সময়ে, তৈরি পোশাক রপ্তানি প্রায় স্থবির অবস্থায় রয়েছে। এই সময়ে মোট রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ১৬ দশমিক ১৩ বিলিয়ন ডলার, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য নয় শতাংশ বেশি।
রপ্তানির সামগ্রিক চিত্র
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর তথ্য অনুযায়ী, প্রধান বাজারগুলোতে রপ্তানির গতি একরকম নয়। ইউরোপীয় ইউনিয়নে চাহিদা কমেছে, একই সঙ্গে অপ্রচলিত ও নতুন বাজারগুলোতেও রপ্তানি হ্রাস পেয়েছে। এর ফলে সামগ্রিক রপ্তানি প্রবৃদ্ধি উল্লেখযোগ্যভাবে থমকে গেছে।
ইউরোপীয় ইউনিয়নে চাপ
বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানির প্রায় অর্ধেকই যায় ইউরোপীয় ইউনিয়নে। চলতি অর্থবছরের প্রথম পাঁচ মাসে এই বাজারে রপ্তানি আয় হয়েছে প্রায় ৭ দশমিক ৮৩ বিলিয়ন ডলার। তবে গত বছরের একই সময়ের তুলনায় এখানে রপ্তানি এক শতাংশের বেশি কমেছে। ইউরোপে ভোক্তা চাহিদা দুর্বল হয়ে পড়ায় এই নেতিবাচক প্রবণতা তৈরি হয়েছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলক স্বস্তি
দ্বিতীয় বৃহত্তম বাজার যুক্তরাষ্ট্রে তুলনামূলক ভালো চিত্র দেখা গেছে। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে পোশাক রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৩ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার। প্রবৃদ্ধি হয়েছে তিন শতাংশের একটু বেশি, যা সামগ্রিক রপ্তানি চিত্রে কিছুটা হলেও স্বস্তি যোগ করেছে।
যুক্তরাজ্য ও কানাডার ইতিবাচক ভূমিকা
যুক্তরাজ্য ও কানাডা—এই দুই বাজারেই ইতিবাচক প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যে রপ্তানি আয় দাঁড়িয়েছে প্রায় ১ দশমিক ৮৫ বিলিয়ন ডলারে, আর কানাডায় রপ্তানি হয়েছে প্রায় ৫৫ কোটি ডলার। বিশেষ করে কানাডার বাজারে তুলনামূলক বেশি প্রবৃদ্ধি ভবিষ্যতের সম্ভাবনার ইঙ্গিত দিচ্ছে।
অপ্রচলিত বাজারে উদ্বেগ
যে অপ্রচলিত বাজারগুলোকে ভবিষ্যতের বিকল্প গন্তব্য হিসেবে ধরা হয়, সেখানেই সবচেয়ে বেশি উদ্বেগের খবর মিলেছে। পাঁচ মাসে এসব বাজারে মোট রপ্তানি তিন শতাংশের বেশি কমেছে। ফলে রপ্তানি বৈচিত্র্যকরণের কৌশল বর্তমানে বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে।
বাজার বৈচিত্র্য ও মূল্য সংযোজনের তাগিদ
খাতসংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকদের মতে, প্রচলিত বাজারে চাপ এবং নতুন বাজারে একযোগে পতনের কারণে এখনই বাজার বৈচিত্র্য ও পণ্যে মূল্য সংযোজনের দিকে জোর দেওয়া জরুরি। তা না হলে ভবিষ্যতে এই খাতের ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
ওভেন ও নিট পোশাকে ভিন্ন বাস্তবতা
পোশাক কারখানার ভেতরেও পরিস্থিতি একরকম নয়। শার্ট ও ট্রাউজারের মতো তুলনামূলক বেশি দামের ওভেন পোশাকে সামান্য প্রবৃদ্ধি দেখা গেছে, যা এই খাতে কর্মরতদের অবস্থান কিছুটা স্থিতিশীল রাখছে।
অন্যদিকে টি-শার্ট ও সোয়েটারের মতো নিট পোশাকে রপ্তানি কমেছে। সাধারণত দ্রুত ও বড় পরিমাণে বিক্রি হওয়া এসব পণ্যের চাহিদা কমে যাওয়া ইঙ্গিত দিচ্ছে, বিশ্ববাজারে সাধারণ ভোক্তার ব্যয় সংকুচিত হচ্ছে। এর ফলে এই খাতে কর্মরত শ্রমিকদের অনিশ্চয়তাও বাড়ছে।
মাত্র শূন্য দশমিক শূন্য নয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি স্পষ্ট করে দিচ্ছে, দেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকাশক্তি তৈরি পোশাক খাত বর্তমানে স্থবির সময় পার করছে। বৈশ্বিক অর্থনৈতিক চাপ ও কঠিন দরকষাকষির বাস্তবতায় টিকে থাকতে এই খাতকে নতুন কৌশল, বাজার অনুসন্ধান এবং উচ্চমূল্যের পণ্যের দিকে এগোতেই হবে।
#BangladeshRMG #GarmentIndustry #ExportCrisis #GlobalDemand #ApparelExports #BangladeshEconomy
|
|
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















