লাতিন আমেরিকার একের পর এক নির্বাচনে ডানপন্থী রাজনীতির উত্থানের পেছনে যে নামটি নীরবে ঘুরে বেড়াচ্ছে, তিনি ফার্নান্দো সেরিমেদো। ট্রাম্পঘনিষ্ঠ এই কৌশলবিদ আজ অঞ্চলটির রাজনীতিতে আলোচিত ও বিতর্কিত চরিত্র।
হন্ডুরাসে হঠাৎ মোড় ঘোরা নির্বাচন
হন্ডুরাসের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের আগে জরিপে পিছিয়ে ছিলেন রক্ষণশীল প্রার্থী নাসরি আসফুরা। ভোটের মাত্র চার দিন আগে ডোনাল্ড ট্রাম্পের আকস্মিক সমর্থন বদলে দেয় পরিস্থিতি। ফল গণনার সময় দেখা যায় আসফুরা এগিয়ে গেছেন হাজার হাজার ভোটে। এই চমকের নেপথ্যে ছিলেন তার প্রচার ব্যবস্থাপক, আর্জেন্টিনার ফার্নান্দো সেরিমেদো। তিনি নিজেই দাবি করেন, ট্রাম্পের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের বার্তাটি সমন্বয় করেছিলেন লাতিন আমেরিকা বিষয়ক কৌশলবিদ ডিক মরিসের সঙ্গে।

ব্রাজিল থেকে শুরু বিতর্কের যাত্রা
সেরিমেদোর নাম প্রথম বড়ভাবে আলোচনায় আসে ব্রাজিলে। দুই হাজার বাইশ সালে জাইর বোলসোনারো নির্বাচনে হেরে যাওয়ার পর তিনি এক অনলাইন সম্প্রচারে ভোট কারচুপির অভিযোগ তোলেন। পুরোনো ভোটযন্ত্রে হস্তক্ষেপের এই দাবি দেশজুড়ে উত্তেজনা ছড়ায়। পুলিশ তদন্ত করলেও তার বিরুদ্ধে শেষ পর্যন্ত কোনো অভিযোগ গঠন হয়নি। তবে এই ঘটনাই তাকে ডানপন্থী রাজনীতির আলোচনায় নিয়ে আসে।
আর্জেন্টিনা ও মিলেই অধ্যায়
বুয়েনস আয়ার্সে নিজের রাজনৈতিক বিপণন সংস্থা, প্রশিক্ষণ একাডেমি ও ডানপন্থী মতাদর্শভিত্তিক সংবাদমাধ্যম গড়ে তোলেন সেরিমেদো। তার স্ত্রীই তাকে আর্জেন্টিনার উঠতি রক্ষণশীল নেতা হাভিয়ের মিলেইর প্রচারে যুক্ত হতে উৎসাহ দেন। ডিজিটাল কৌশল নিয়ে কাজ করতে গিয়ে তিনি মিলেইর মঞ্চে চেইনস ব্যবহারকে প্রতীকী অস্ত্র বানানোর পরামর্শ দেন বলে দাবি করেন।

ট্রাম্পের নজরে আসা
মিলেই যখন জরিপে পিছিয়ে, ঠিক তখনই যুক্তরাষ্ট্রের এক প্রভাবশালী রক্ষণশীল অনুষ্ঠানে সাক্ষাৎকারের সুযোগ আসে। মুহূর্তের মধ্যে তা নিশ্চিত করেন সেরিমেদো। এই সাক্ষাৎকার মিলেইকে আন্তর্জাতিক পরিচিতি দেয় এবং ট্রাম্পের দৃষ্টি কাড়ে। পরে মিলেইর ঘনিষ্ঠ মহলের সঙ্গে বিরোধে সেরিমেদোর পথ আলাদা হলেও ট্রাম্পের সঙ্গে আর্জেন্টিনা সরকারের সম্পর্ক আরও দৃঢ় হয়।
লাতিন আমেরিকাজুড়ে বিস্তার
চিলিতে বিতর্কিত বামপন্থী সংবিধান বাতিলের প্রচার, বলিভিয়ায় সরকার পরিবর্তনের কৌশল—প্রায় সবখানেই তার ছাপ। তার একাডেমির শিক্ষার্থীদের কেউ কেউ আজ সরাসরি রাষ্ট্রক্ষমতার কাছাকাছি। বলিভিয়ার প্রেসিডেন্ট রদ্রিগো পাসের ঘনিষ্ঠ উপদেষ্টাদের মধ্যেও রয়েছেন তার প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা। সেরিমেদো নিজে এখন বুয়েনস আয়ার্স, হন্ডুরাস ও বলিভিয়ার মধ্যে নিয়মিত যাতায়াত করেন।

বামপন্থীদের চোখে ‘অন্ধকারের রাজপুত্র’
লাতিন আমেরিকার বামপন্থীরা তাকে ব্যঙ্গ করে ‘অন্ধকারের রাজপুত্র’ বলেন। তবে সেরিমেদোর দাবি, তিনি ভুয়া হিসাব বা অপপ্রচার চালান না। অনলাইন আলোচনার ধারা বুঝে বার্তা সাজান মাত্র। তার প্রযুক্তিগত কাজের অংশীদার ট্রাম্পের সাবেক প্রচার ব্যবস্থাপক ব্র্যাড পার্সকেল। সব অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি সাংবাদিকদের নিজের দপ্তরে স্বাগত জানান।
তবে সব ক্ষেত্রেই তার প্রভাব কাজ করেনি। হন্ডুরাসের সাবেক প্রেসিডেন্টের আকস্মিক মুক্তির ঘটনায় তিনি জড়িত নন বলে জানান। তার মতে, এই সিদ্ধান্ত আসফুরার প্রচারের ক্ষতি করতে পারত। ট্রাম্প কখনো কখনো ঘনিষ্ঠদেরও চমকে দেন—এটাই রাজনীতির বাস্তবতা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















