মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ধারাবাহিক কটাক্ষ, অপমানসূচক মন্তব্য ও সমাবেশে উসকানিমূলক স্লোগানের মাঝেও মিনেসোটার কংগ্রেস সদস্য ইলহান ওমর জানিয়েছেন, তিনি অটল ও নির্ভীক। নিজের প্রতি প্রেসিডেন্টের বক্তব্যকে তিনি দেখছেন বিভ্রান্তি তৈরির কৌশল হিসেবে।
ট্রাম্পের আক্রমণ ও রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট
ডিসেম্বরে একাধিক অনুষ্ঠানে ডোনাল্ড ট্রাম্প ইলহান ওমরকে নিয়ে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করেন। এক পর্যায়ে তিনি ওমরকে ‘আবর্জনা’ বলে আখ্যা দেন এবং তাঁর সমর্থকদের কাছ থেকে ‘ফেরত পাঠাও’ স্লোগানও শোনা যায়। মিনেসোটায় মহামারি-পরবর্তী সময়ে সংঘটিত এক বড় ধরনের প্রতারণা কেলেঙ্কারি নিয়ে প্রশ্ন উঠতেই এই আক্রমণ আরও তীব্র হয়। ওই তদন্তে বহু সোমালি বংশোদ্ভূত ব্যক্তির বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হলেও ইলহান ওমরের বিরুদ্ধে কোনো অনিয়মের অভিযোগ নেই।

ওমরের জবাব, ভয় নয় দৃঢ়তা
ক্যাপিটল হিলের দপ্তরে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইলহান ওমর বলেন, প্রেসিডেন্টের এই ‘অস্বস্তিকর আসক্তি’ তাঁকে বিচলিত করে না। তাঁর ভাষায়, ক্ষমতার ঘাটতি ঢাকতেই বিদ্বেষ ব্যবহার করা হয়। তিনি জানান, বুলিদের কথায় থেমে যাওয়া তাঁর স্বভাব নয় এবং নিজের শিকড় ও নাগরিক পরিচয় নিয়ে তিনি গর্বিত।
দীর্ঘদিনের লক্ষ্যবস্তু সোমালি কমিউনিটি
মিনেসোটার সোমালি কমিউনিটিকে ট্রাম্প দীর্ঘদিন ধরেই নিশানা করে আসছেন। নির্বাচনী প্রচার থেকে শুরু করে সাম্প্রতিক বক্তব্যে তিনি শরণার্থী ও অভিবাসীদের নিয়ে বিভ্রান্তিকর দাবি করেছেন। ওমর নির্বাচিত হওয়ার পর এই কমিউনিটির প্রতীকী মুখ হয়ে ওঠেন এবং তাতে আক্রমণ আরও ব্যক্তিকেন্দ্রিক হয়।
কংগ্রেসে উত্থান ও বিতর্ক
দুই হাজার আঠারোর মধ্যবর্তী নির্বাচনে জয়ী হয়ে ইলহান ওমর কংগ্রেসে প্রবেশ করেন এবং তরুণ প্রগতিশীলদের একটি দলের অংশ হিসেবে দ্রুত পরিচিতি পান। ফিলিস্তিন ইস্যুসহ নানা বিষয়ে তাঁর সরব অবস্থান তাঁকে আলোচনায় রাখে। একসময় সামাজিক মাধ্যমে দেওয়া মন্তব্যের জন্য তিনি সমালোচিত হলেও পরে দুঃখপ্রকাশ করেন। দুই হাজার তেইশে রিপাবলিকানরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা ফিরে পেলে তাঁকে পররাষ্ট্র বিষয়ক কমিটি থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়।

প্রতারণা তদন্ত ও অভিবাসন অভিযান
মহামারির সময় শিশুদের খাবার কর্মসূচির নামে ভুয়া দাবির মাধ্যমে বিপুল অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে তদন্ত শুরু হয় দুই হাজার বাইশে। এই ঘটনাকে ঘিরে ট্রাম্প প্রশাসন মিনেসোটা জুড়ে অভিবাসন অভিযান জোরদার করে। ইলহান ওমর জানান, সাম্প্রতিক দিনে দুইজন মার্কিন নাগরিক ভুলভাবে আটক হয়েছিলেন এবং তাঁর দপ্তরের হস্তক্ষেপে মুক্তি পান। নিজের সন্তানদের নিরাপত্তা নিয়েও তিনি উদ্বেগ প্রকাশ করেন।
কমিউনিটির প্রতিক্রিয়া ও ব্যক্তিগত গল্প
নিজ জেলার মানুষের সঙ্গে সময় কাটিয়ে ওমর বলেন, সোমালি কমিউনিটি ভীত নয়, বরং সাহসী। গৃহযুদ্ধ পেরিয়ে আশ্রয়শিবির থেকে যুক্তরাষ্ট্রে আসার অভিজ্ঞতা তাঁদের দৃঢ় করেছে। তাঁর মতে, অপরাধীদের কাজের দায় পুরো কমিউনিটির ওপর চাপানো অন্যায় এবং সেটিই মানুষকে সবচেয়ে ক্ষুব্ধ করছে।
শেষ কথা, বিদ্বেষে নয় রাজনীতিতে বিশ্বাস
ইলহান ওমরের বক্তব্য, অর্থনীতি ও বৈদেশিক নীতি নিয়ে ব্যর্থতা আড়াল করতেই তাঁকে লক্ষ্যবস্তু করা হচ্ছে। তবু তিনি বলেন, ভয় বা হুমকিতে তিনি নতি স্বীকার করবেন না এবং তাঁর কমিউনিটিও মাথা উঁচু করেই থাকবে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















