ডিজিটাল সময়ে সোশ্যাল মিডিয়া এখন দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ। শিশু থেকে প্রাপ্তবয়স্ক—সবাই ফেসবুক, টিকটক, ইনস্টাগ্রাম ও ইউটিউবে যুক্ত। সংযোগ, তথ্য আর বিনোদনের এই সহজ পথের আড়ালে বাড়ছে এক নীরব ঝুঁকি। ধীরে ধীরে স্বাভাবিক হয়ে উঠছে নেতিবাচক আচরণ।
আজ অনেকেই বিপজ্জনক কাণ্ড, সাইবার বুলিং কিংবা অনৈতিক কনটেন্টকে আর অস্বাভাবিক মনে করছেন না। এই বদলে যাওয়া দৃষ্টিভঙ্গিই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষতিকর কনটেন্টকে আরও দৃশ্যমান করে তুলছে।
ভিউ আর লাইকেই তৈরি হচ্ছে ঝুঁকির চক্র
এই সমস্যার বড় অংশের উৎস ব্যবহারকারীর আচরণ। না বুঝেই অনেকে ঝুঁকিপূর্ণ ভিডিও দেখেন, লাইক দেন, শেয়ার করেন। এতে কনটেন্ট নির্মাতারা আরও একই ধরনের উপাদান বানাতে উৎসাহ পান।
কিশোর-কিশোরীরা এখানে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে। সমালোচনামূলক দৃষ্টিভঙ্গির অভাবে তারা যা দেখে, তাই অনুকরণ করে। ধীরে ধীরে বিপজ্জনক আচরণও বিনোদন বলে মনে হতে থাকে। এভাবেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষতিকর কনটেন্ট একসময় স্বাভাবিক দৃশ্য হয়ে ওঠে।
কনটেন্ট নির্মাতাদের ভূমিকাও কম নয়। জনপ্রিয়তা আর আয়ের তাগিদে কেউ কেউ ঝুঁকিপূর্ণ স্টান্ট, উসকানিমূলক ভিডিও বা ভুয়া তথ্য ছড়ান। দর্শকের ওপর প্রভাবের দিকটি তখন গুরুত্ব পায় না।
প্ল্যাটফর্ম ও পরিবারের দায়িত্ব কোথায়
সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলোর নীতিমালা থাকলেও বাস্তব প্রয়োগে ঘাটতি আছে। অনেক সময় ক্ষতিকর কনটেন্ট ভাইরাল হয়ে যায়, ব্যবস্থা নেওয়া হয় দেরিতে। দ্রুত প্রতিক্রিয়া, শক্ত নজরদারি আর ব্যবহারকারী সচেতনতা বাড়ানো এখন জরুরি।
এখানে অভিভাবকদের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ। তদারকি ছাড়া শিশুদের অনিয়ন্ত্রিত ব্যবহার তাদের ঝুঁকির মুখে ফেলে। ছোটবেলা থেকেই ডিজিটাল লিটারেসি শেখানো গেলে তারা কী দেখবে, কী শেয়ার করবে—সে বোধ তৈরি হয়।
শেষ পর্যন্ত, সোশ্যাল মিডিয়ায় ক্ষতিকর কনটেন্টের স্বাভাবিকীকরণ একটি সম্মিলিত সমস্যা। ব্যবহারকারী, নির্মাতা, প্ল্যাটফর্ম ও পরিবার—সবার দায়িত্ব আছে। সচেতনতা, ডিজিটাল নৈতিকতা আর কার্যকর নিয়ন্ত্রণই পারে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে ক্ষতিকর ডিজিটাল সংস্কৃতি থেকে রক্ষা করতে।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















