০৩:৪৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫
কারখানার ঝুঁকিতে শৈশব, দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশুশ্রমিক শিল্প খাতে কাজ করছে খ্রিস্টমাসের আগে খাদ্যসহায়তার ডাক, বক্স পৌঁছাতে স্বেচ্ছাসেবক খুঁজছে পিটার ম্যাকি কমিউনিটি ফুড সেন্টার স্নিকো বিভ্রাটে রেহাই ক্যারি, অভিযোগের পথে ইংল্যান্ড কলকারখানা বন্ধে ফাঁকা হচ্ছে গ্রাম, মানুষ হারাচ্ছে নিউজিল্যান্ড বিরল সাদা লেজওয়ালা ঈগল নিখোঁজে স্তব্ধ ব্রিটেন, পুনরুদ্ধার প্রকল্পের গভীর উদ্বেগ মেরু ভালুকের মমতা বিস্ময় জাগাল, পরের শাবক দত্তক নিয়ে নতুন আশার গল্প বয়সের সঙ্গে নীরব ক্ষয়, সত্তর পেরোলেই আলঝেইমারের মতো পরিবর্তন ভয়াবহ হারে রাশিয়ার হুমকির ছায়ায় ইউরোপ, জব্দ সম্পদ ঘিরে বেলজিয়াম ও অর্থনৈতিক নেতৃত্বের ওপর চাপ ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ার জমাট সম্পদ ব্যবহারে ইইউর কঠিন সিদ্ধান্ত, বেলজিয়ামের আপত্তি আর মস্কোর হুমকি নিরাপত্তা পুরোপুরি ব্যক্তিগত বিষয়: নির্বাচন নিয়ে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ার জমাট সম্পদ ব্যবহারে ইইউর কঠিন সিদ্ধান্ত, বেলজিয়ামের আপত্তি আর মস্কোর হুমকি

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় চার বছর পূর্তির মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক ঐতিহাসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের সামনে দাঁড়িয়ে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমাট রাখা বিপুল অর্থ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসছেন ইইউ নেতারা। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা শুধু ইউক্রেনের অর্থনৈতিক টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, বরং ইউরোপের রাজনৈতিক ঐক্য ও আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতার বড় পরীক্ষা হয়ে উঠবে

ইইউর পরিকল্পনা কী
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে রাশিয়ার প্রায় দুইশ দশ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পদ জব্দ করে রেখেছে, যার বড় অংশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউরোক্লিয়ারে সংরক্ষিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই সম্পদ থেকে সরাসরি টাকা নেওয়া হবে না। বরং ইউরোক্লিয়ার থেকে ঋণ নিয়ে ইউক্রেনকে প্রায় নব্বই বিলিয়ন ইউরো দেওয়া হবে। এই অর্থ ২০২৬ ও ২০২৭ সালে কিয়েভের মোট অর্থনৈতিক চাহিদার বড় অংশ পূরণ করতে পারে। ভবিষ্যতে যুদ্ধক্ষতিপূরণ হিসেবে রাশিয়া টাকা দিলে তবেই ইউক্রেন সেই ঋণ শোধ করবে। পুরো প্রক্রিয়ায় আইনগতভাবে সম্পদের মালিকানা রাশিয়ার কাছেই থাকবে।

কেন এখন এই সিদ্ধান্ত
এর আগে ইইউ শুধু জমাট সম্পদের সুদ ইউক্রেনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু মূল সম্পদ ছোঁয়ার প্রশ্নে দীর্ঘদিন দ্বিধা ছিল, কারণ এতে ইউরোজোনের বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি বদলায় যখন জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস প্রকাশ্যে এই পরিকল্পনার পক্ষে অবস্থান নেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য নতুন সামরিক সহায়তা বন্ধ করায় ইউরোপের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। ইউরোপীয় কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, নতুন অর্থ না এলে আগামী বসন্তের মধ্যেই ইউক্রেন দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও হুমকি
মস্কো এই পরিকল্পনাকে সরাসরি চুরি বলে আখ্যা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করলে ইউরোপীয় অর্থনীতির ওপর এর গুরুতর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছে এবং রাশিয়ায় পশ্চিমা রাষ্ট্র ও কোম্পানির সম্পদ জব্দ সহজ করতে নতুন ফরমান জারি করা হয়েছে।

বেলজিয়ামের আপত্তির কারণ
বেলজিয়াম, যেখানে অধিকাংশ রুশ সম্পদ রাখা আছে, এই পরিকল্পনাকে মৌলিকভাবে ভুল বলে মনে করছে। তাদের আশঙ্কা, রাশিয়া যদি ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা জিতে নেয়, তবে বেলজিয়ামকে বহু বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। বেলজিয়াম বলছে, অন্য ইইউ দেশগুলো শতভাগ আইনি ও আর্থিক নিশ্চয়তা না দিলে তারা এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেবে না। পাশাপাশি তারা চায়, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্যান্য দেশও তাদের হাতে থাকা রুশ সম্পদ ইউক্রেনের জন্য ব্যবহার করুক।

সমঝোতা না হলে কী হবে
এই বৈঠক থেকে যদি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ্বাসযোগ্যতা বড় ধাক্কা খাবে বলে সতর্ক করছেন শীর্ষ নেতারা। ইউক্রেন ইস্যুতে ঐক্য দেখাতে ব্যর্থ হলে ইউরোপের কূটনৈতিক প্রভাবও দুর্বল হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সমঝোতা হলে স্বস্তি এলেও আইনি কাঠামো তৈরি এবং ইউক্রেন পুনর্গঠনের বিপুল ব্যয়ের প্রশ্ন রয়ে যাবে।

#ইউক্রেনযুদ্ধ #ইউরোপীয়ইউনিয়ন #রাশিয়ারসম্পদ #বেলজিয়াম #ইউক্রেনসহায়তা

জনপ্রিয় সংবাদ

কারখানার ঝুঁকিতে শৈশব, দেশের প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ শিশুশ্রমিক শিল্প খাতে কাজ করছে

ইউক্রেনের জন্য রাশিয়ার জমাট সম্পদ ব্যবহারে ইইউর কঠিন সিদ্ধান্ত, বেলজিয়ামের আপত্তি আর মস্কোর হুমকি

১১:৫৮:৪৫ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রায় চার বছর পূর্তির মুখে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এক ঐতিহাসিক ও ঝুঁকিপূর্ণ সিদ্ধান্তের সামনে দাঁড়িয়ে। রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংকের জমাট রাখা বিপুল অর্থ ব্যবহার করে ইউক্রেনকে ঋণ দেওয়ার পরিকল্পনা নিয়ে বৃহস্পতিবার ব্রাসেলসে বৈঠকে বসছেন ইইউ নেতারা। এই সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত হলে তা শুধু ইউক্রেনের অর্থনৈতিক টিকে থাকার প্রশ্ন নয়, বরং ইউরোপের রাজনৈতিক ঐক্য ও আর্থিক বিশ্বাসযোগ্যতার বড় পরীক্ষা হয়ে উঠবে

ইইউর পরিকল্পনা কী
ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইতিমধ্যে রাশিয়ার প্রায় দুইশ দশ বিলিয়ন ইউরো সমমূল্যের কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পদ জব্দ করে রেখেছে, যার বড় অংশ বেলজিয়ামের ব্রাসেলসভিত্তিক আর্থিক প্রতিষ্ঠান ইউরোক্লিয়ারে সংরক্ষিত। পরিকল্পনা অনুযায়ী, এই সম্পদ থেকে সরাসরি টাকা নেওয়া হবে না। বরং ইউরোক্লিয়ার থেকে ঋণ নিয়ে ইউক্রেনকে প্রায় নব্বই বিলিয়ন ইউরো দেওয়া হবে। এই অর্থ ২০২৬ ও ২০২৭ সালে কিয়েভের মোট অর্থনৈতিক চাহিদার বড় অংশ পূরণ করতে পারে। ভবিষ্যতে যুদ্ধক্ষতিপূরণ হিসেবে রাশিয়া টাকা দিলে তবেই ইউক্রেন সেই ঋণ শোধ করবে। পুরো প্রক্রিয়ায় আইনগতভাবে সম্পদের মালিকানা রাশিয়ার কাছেই থাকবে।

কেন এখন এই সিদ্ধান্ত
এর আগে ইইউ শুধু জমাট সম্পদের সুদ ইউক্রেনকে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। কিন্তু মূল সম্পদ ছোঁয়ার প্রশ্নে দীর্ঘদিন দ্বিধা ছিল, কারণ এতে ইউরোজোনের বিনিয়োগকারীদের আস্থায় আঘাত লাগতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছিল। পরিস্থিতি বদলায় যখন জার্মানির নতুন চ্যান্সেলর ফ্রিডরিশ মের্ৎস প্রকাশ্যে এই পরিকল্পনার পক্ষে অবস্থান নেন। একই সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের নতুন প্রশাসন ইউক্রেনের জন্য নতুন সামরিক সহায়তা বন্ধ করায় ইউরোপের ওপর চাপ আরও বেড়ে যায়। ইউরোপীয় কমিশনের হিসাব অনুযায়ী, নতুন অর্থ না এলে আগামী বসন্তের মধ্যেই ইউক্রেন দেউলিয়া হওয়ার ঝুঁকিতে পড়বে।

রাশিয়ার প্রতিক্রিয়া ও হুমকি
মস্কো এই পরিকল্পনাকে সরাসরি চুরি বলে আখ্যা দিয়েছে। প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন সতর্ক করে বলেছেন, রাশিয়ার সম্পদ ব্যবহার করলে ইউরোপীয় অর্থনীতির ওপর এর গুরুতর প্রভাব পড়বে। এরই মধ্যে রাশিয়ার কেন্দ্রীয় ব্যাংক ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে ক্ষতিপূরণ দাবি করে মামলা করেছে এবং রাশিয়ায় পশ্চিমা রাষ্ট্র ও কোম্পানির সম্পদ জব্দ সহজ করতে নতুন ফরমান জারি করা হয়েছে।

বেলজিয়ামের আপত্তির কারণ
বেলজিয়াম, যেখানে অধিকাংশ রুশ সম্পদ রাখা আছে, এই পরিকল্পনাকে মৌলিকভাবে ভুল বলে মনে করছে। তাদের আশঙ্কা, রাশিয়া যদি ইউরোক্লিয়ারের বিরুদ্ধে মামলা জিতে নেয়, তবে বেলজিয়ামকে বহু বিলিয়ন ইউরো ক্ষতিপূরণ দিতে হতে পারে। বেলজিয়াম বলছে, অন্য ইইউ দেশগুলো শতভাগ আইনি ও আর্থিক নিশ্চয়তা না দিলে তারা এই পরিকল্পনায় সম্মতি দেবে না। পাশাপাশি তারা চায়, যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, জাপানসহ অন্যান্য দেশও তাদের হাতে থাকা রুশ সম্পদ ইউক্রেনের জন্য ব্যবহার করুক।

সমঝোতা না হলে কী হবে
এই বৈঠক থেকে যদি কোনো চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না আসে, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বিশ্বাসযোগ্যতা বড় ধাক্কা খাবে বলে সতর্ক করছেন শীর্ষ নেতারা। ইউক্রেন ইস্যুতে ঐক্য দেখাতে ব্যর্থ হলে ইউরোপের কূটনৈতিক প্রভাবও দুর্বল হয়ে পড়বে। অন্যদিকে সমঝোতা হলে স্বস্তি এলেও আইনি কাঠামো তৈরি এবং ইউক্রেন পুনর্গঠনের বিপুল ব্যয়ের প্রশ্ন রয়ে যাবে।

#ইউক্রেনযুদ্ধ #ইউরোপীয়ইউনিয়ন #রাশিয়ারসম্পদ #বেলজিয়াম #ইউক্রেনসহায়তা