‘অনিশ্চয়তা’ ও ‘শঙ্কা’ নিয়ে সংসদ নির্বাচনে ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার কথা বলেছে জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি বা জাপা। তবে গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের মিত্র হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির নির্বাচনে অংশ নেওয়ার প্রশ্নে রাজনৈতিক দলগুলো রয়েছে পাল্টাপাল্টি অবস্থানে।
এই ইস্যুতে বিএনপি ‘নমনীয়’ অবস্থানে আছে বলে দলটির নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানাচ্ছে। তবে আপত্তি রয়েছে জামায়াতে ইসলামী ও এনসিপিসহ বিভিন্ন দলের।
অন্যদিকে, ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনার পর ১২ই ফেব্রুয়ারির নির্বাচনে নিরাপত্তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যেও নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে।
তবে নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা বাড়লেও ভোটের মাঠে নানা সমীকরণে তৎপরতা চালাচ্ছে বিএনপি, জামায়াত ও এনসিপিসহ বর্তমানে সক্রিয় দলগুলো।
ভোটের তফসিল ঘোষণার পর রাজনীতি যখন নির্বাচনমুখী, এর মধ্যেও জাতীয় পার্টি এবং কার্যক্রম নিষিদ্ধ থাকা আওয়ামী লীগের ১৪ দলীয় জোটের অন্য শরিকেরা নিশ্চিত নয় যে তারা এই নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে কি না। তাদের বিষয়ে শেষপর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার কী অবস্থান নেয়, তাও স্পষ্ট নয় ওই দলগুলোর কাছে।
জাতীয় পার্টিই প্রধান বিরোধী দল ছিল বিগত তিনটি সংসদ, অর্থাৎ দশম, একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদে। বিগত তিনটি জাতীয় নির্বাচনে আওয়ামী লীগের সঙ্গে আসন ভাগাভাগির সমঝোতা এবং সংসদে ভূমিকার কারণে ‘গৃহপালিত বিরোধী দলের’ তকমা পেয়েছিল জাতীয় পার্টি।
আর আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের পতনের পর জাতীয় পার্টির জন্য জুটেছে ‘ফ্যাসিবাদের দোসরের’ তকমা।
অতীত ভূমিকার জন্য জাতীয় পার্টিকে খেসারত দিতে হচ্ছে অন্তর্বর্তী সরকারের শাসনে ১৬ মাস ধরে। দলটি রাজনৈতিক কর্মসূচি চালাতে গিয়ে বাধার মুখে পড়ছে।
এমনকি দলটিকে নিষিদ্ধের দাবি তুলছে জামায়াত, এনসিপি, গণঅধিকার পরিষদসহ বিভিন্ন দল।
এখন জাতীয় পার্টি আসন্ন নির্বাচনে প্রার্থী দিতে পারলেও তারা প্রচারণা চালাতে পারবেন কি না-এই আলোচনাও চলছে।
১৪ দলীয় জোটের ওয়ার্কার্স পার্টি ও জাসদসহ শরিক দলগুলোও আওয়ামী লীগের শাসনে ব্যস্ত ছিল আসন ভাগাভাগির সমঝোতার মাধ্যমে সংসদে যাওয়া এবং ক্ষমতার ভাগ পাওয়া নিয়ে। ফলে এই দলগুলোর নিজেদের সাংগঠনিক অবস্থা দুর্বল থেকে দুর্বল হয়েছে এবং অস্তিত্বের সংকটে পড়েছে বলে বিশ্লেষকেরা মনে করেন।
আওয়ামী লীগের এই মিত্রদেরও ভোটের মাঠে নামার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে জামায়াত, এনসিপিসহ বিভিন্ন দল। যদিও বিএনপির অবস্থান নমনীয়।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অনেকে বলছেন, ১৪ দলীয় জোটের শরিকদের কারও ঘুরে দাঁড়িয়ে প্রতিকূল পরিবেশে এককভাবে নির্বাচন করার সাংগঠনিক অবস্থা আছে কি না, সেই প্রশ্নও থেকে যায়।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, ফাইল ছবি
বিএনপি নমনীয় কেন
প্রথমত, বিএনপির নেতা-কর্মীরা মনে করছেন, নির্বাচন হলেই তাদের দলের জয় পেয়ে সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
যেহেতু তারা ক্ষমতার দোরগোড়ায় বলে একটা ধারণা তৈরি হয়েছে, এমন প্রেক্ষাপটে সেই নির্বাচন নিয়ে বিতর্ক তৈরির সুযোগ থাকুক-এটা বিএনপি চাইছে না বলে দলটির বিভিন্ন পর্যায়ে কথা বলে মনে হয়েছে।
আর সেকারণে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর ভোটের মাঠে নামার ক্ষেত্রে বিএনপি বাধা হয়ে দাঁড়াবে না।
বিষয়টিতে নমনীয় থাকার কৌশল নিলেও ওই দলের নির্বাচনে অংশ নিতে পারা না পারার প্রশ্নে বিএনপি প্রকাশ্যে কোনো প্রতিক্রিয়া দেখাবে না বলা যায়। তারা এই দায়িত্ব চাপাতে চায় অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর।
তবে আওয়ামী লীগ প্রশ্নে ভিন্ন কৌশলে বিএনপি। দলটির নেতৃত্বের একটা বড় অংশই বর্তমান রাজনৈতিক বাস্তবতায় আওয়ামী লীগকে নির্বাচনে অংশ গ্রহণের সুযোগ দেওয়ার বিপক্ষে।
এক্ষেত্রে রাজনীতির বাইরে আইনগত দিক থেকেই যুক্তি রয়েছে তাদের।
কারণ ক্ষমতাচ্যুত আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক কার্যক্রম নিষিদ্ধ রয়েছে। এমনকি নির্বাচন কমিশনে দলটির নিবন্ধনও বাতিল হয়েছে। আইনগত দিক থেকে এই দলের নির্বাচনে অংশ নিতে পারার সুযোগ নেই।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, যেসব দলের কার্যক্রম নিষিদ্ধ নয় বা আইনগত দিক থেকে কোনো বাধা নেই, সে দলগুলোর নির্বাচনে অংশ নেওয়ার ক্ষেত্রে বাধা দেওয়ার কিছু নেই।
মি. আলমগীরের বক্তব্যে জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলের শরিকদের নির্বাচনে অংশ নিতে পারার বিষয়ে বিএনপি অবস্থানের একটা ইঙ্গিত পাওয়া যায়।
অন্যদিকে, আওয়ামী লীগের অনুপস্থিতিতে বর্তমানে সক্রিয় দলগুলোর মধ্যে বিএনপির প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে উঠেছে তাদেরই পুরোনো মিত্র জামায়াতে ইসলামী। এটি বিএনপিকে কিছুটা অস্বস্তিতে ফেলেছে বলে মনে হয়।
এমন প্রেক্ষাপটে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে অংশ নিয়ে জামায়াতের বিকল্প হয়ে দাঁড়াতে পারে কি না, এ ধরনের চিন্তাও বিএনপিতে কাজ করছে।
তবে দলটির উচ্চ পর্যায়ের একাধিক নেতা এটাও বলছেন, আওয়ামী লীগের মিত্ররা যাতে নির্বাচন করতে না পারে, সে ব্যাপারে জামায়াত, এনসিপি পাল্টা অবস্থান কারণেও বিএনপি এক ধরনের চাপ অনুভব করে। সেজন্য বিএনপি নমনীয় থাকার কৌশল প্রকাশ্যে আনবে না।

জামায়াতের মিছিলে সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারসহ দলের নেতারা, ফাইল ছবি
কঠোর অবস্থানেই জামায়াত
জামায়াতসহ ইসলামপন্থি দলগুলো শুধু কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা নয়, দল হিসেবে আওয়ামী লীগকেই নিষিদ্ধ করার অবস্থানে অটল রয়েছে।
ইসলামী আন্দোলন ও বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসসহ আটটি দলের যে মোর্চা হয়েছে জামায়াতের নেতৃত্বে, তাদের পক্ষ থেকেই আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ করার দাবি তোলা হয়েছে।
একইসঙ্গে জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের মিত্র অন্যদলগুলোরও রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করা হয়েছে জামায়াতের ওই মোর্চা থেকে।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, ভোটের হিসাব-নিকাশ ও সংসদ আসন পাওয়ার অতীতের পরিসংখ্যানের বিবেচনায় জামায়াত প্রতিপক্ষ ভাবছে জাতীয় পার্টিকে। ফলে জাতীয় পার্টিকে নির্বাচনের সুযোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানেই থাকছে জামায়াত।
বিষয়টাতে জামায়াত নেতারা অবশ্য ভিন্ন যুক্তি দাঁড় করাচ্ছেন। দলটির সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ার বিবিসি বাংলাকে বলেছেন, জাতীয় পার্টি ও ১৪ দলীয় জোটের মিত্রদের লাগাতার সমর্থনের কারণেই আওয়ামী লীগ ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে ‘স্বৈরাচারী’ ও ‘ফ্যাসিবাদী’ শাসন চালিয়ে যেতে পেরেছে।
সে জন্য গণ-অভ্যুত্থানে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের প্রেক্ষাপট বিবেচনায় জাতীয় পার্টিসহ আওয়ামী লীগের মিত্রদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় অংশ নেওয়ার সুযোগ দেওয়ার বিরুদ্ধে তাদের অবস্থান।
তবে রাজনৈতিক বিশ্লেষক এবং বিএনপিসহ বিভিন্ন দলের নেতাদের অনেকে জামায়াতের অবস্থান বা গতবিধিকে ভিন্নভাবে ব্যাখ্যা করছেন।
তারা বলছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পরপরই জামায়াতের কৌশল ও নেতাদের বক্তব্য-বিবৃতিতে যে ধরনের অবস্থান প্রকাশ পেতো, এখন তাতে অনেক পরিবর্তন হয়েছে। বিশেষ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ছাত্র সংসদ নির্বাচনে জামায়াত সমর্থিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের জয়ের পর দলটির নেতাদের বক্তব্যে ও কৌশলে বড় পরিবর্তন চোখে পড়ার মতো।
দলটির কর্মসূচি ও নেতাদের বক্তব্যে এমন একটা ধারণা দেওয়ার চেষ্টা থাকছে যে, আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হয়ে তাদেরই সরকার গঠনের সম্ভাবনা রয়েছে।
এ ধরনের অভিযোগ বা বক্তব্য মানতে রাজি না হলেও জামায়াত নেতা মিয়া গোলাম পরওয়ার বলেছেন, নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার চিন্তা থেকেই কাজ করে রাজনৈতিক দলগুলো। একটি দল হিসেবে তারাও সেভাবেই কর্মকাণ্ড চালাচ্ছেন।
জামায়াতের অন্য একাধিক নেতা জানিয়েছেন, রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের প্রেক্ষাপটে এখন আগের যেকোনো সময়ের তুলনায় তাদের দলের জন্য বড় সুযোগ এসেছে। সেটাকে তারা ক্ষমতায় যাওয়া বা ক্ষমতার কাছাকাছি থাকার সম্ভাবনা হিসেবে দেখছেন। আর এই সুযোগ কাজে লাগাতে তারা এবার পরিকল্পনা করে রাজনীতির সবদিক থেকে আঁটঘাঁট বেঁধে নেমেছেন।
ফলে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনে যে দলগুলো ছিটকে পড়েছে, সেই দলগুলোকে নির্বাচনে ও রাজনীতিতে ফেরার কোনো সুযোগ দিতে চায় না জামায়াত।

জাতীয় নাগরিক পার্টির সদস্য সচিব আখতার হোসেন
এনসিপিও বলছে ‘না’
আওয়ামী লীগ ও এর মিত্ররা, এমনকি এর সমর্থনেও কেউ যাতে নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে বা রাজনীতিতে ফিরতে না পারে, এটি এনসিপির পুরোনো অবস্থান। তাদের সেই অবস্থানের কোনো পরিবর্তন হয়নি।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকেরা বলছেন, জুলাই আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্বের একাংশ জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি গঠন করেছে। ফলে এই দলটির রাজনীতির প্রধান উপাদানই হচ্ছে আওয়ামী লীগ বিরোধিতা।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেন বিবিসি বাংলাকে বলেন, জাতীয় পার্টিসহ যাদের সহযোগিতার কারণে আওয়ামী লীগ ‘ফ্যাসিবাদ’ প্রতিষ্ঠা করেছিল, তাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় শরিক হওয়ার সুযোগ নেই। সেকারণে ‘ফ্যাসিবাদের দোসর’ হিসেবে পরিচিতদেরও রাজনীতি করার সুযোগ দিতে রাজি নন তারা।
তিনি উল্লেখ করেন, জুলাই গণ-অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের শাসনের পতনের মধ্য দিয়ে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। সেখান নতুন কোনো চিন্তা করা হলে, সেটা সেই আন্দোলনের চেতনার পরিপন্থি হবে।
গণঅধিকার পরিষদসহ আরও কয়েকটি দলও আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টির রাজনীতি নিষিদ্ধের দাবি করছে। তাদেরও যুক্তি একই।
এমন বাস্তবতায় বাংলাদেশে সক্রিয় দলগুলোর বেশিরভাগই জাতীয় পার্টির ও ১৪ দলের শরিকদের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছে।
ফলে জাতীয় পার্টি নির্বাচনে যদি প্রার্থী দেয়, তারা নির্বিঘ্নে প্রচারণা চালাতে পারবে কি না, তা দলটির জন্য চ্যালেঞ্জের বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে, এই দলগুলোর বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের অবস্থান এখনো স্পষ্ট নয়।

জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের
শঙ্কা থাকার পরও কেন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি
আওয়ামী লীগের দীর্ঘদিনের সঙ্গী জিএম কাদেরের নেতৃত্বাধীন জাতীয় পার্টি অস্তিত্বের সংকটেও রয়েছে। অতীতে বিভিন্ন সময় ভাঙনে দলটির চারটি অংশ তৈরি হয়েছে যারা সবাই নিজেদের মূল জাতীয় পার্টি বলেই দাবি করছে।
সাম্প্রতিক সময়ে জিএম কাদেরের নেতৃত্বের বিরোধিতা করে আনিসুল ইসলাম মাহমুদসহ একটি অংশ আরেকটি জাতীয় পার্টি করেছেন। দুই অংশই নির্বাচন করতে চাইছে।
একদিকে অস্তিত্ব রক্ষার বিষয় যেমন রয়েছে, অন্যদিকে দুই অংশের নেতারাই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের ভোটারদের জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম রাখার কথা বলছেন।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জিএম কাদের বিবিসি বাংলাকে বলেন, একটি রাজনৈতিক দল হিসেবে নির্বাচনে অংশ নেওয়া তাদের অধিকার। এছাড়া আওয়ামী লীগকে বাদ দিয়ে ভোট করা হচ্ছে। সেখানে জাতীয় পার্টিও যদি না থাকে, দেশে-বিদেশে সেই নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা প্রশ্নের মুখে পড়বে।
সেজন্য তারা ৩০০ আসনেই প্রার্থী দিয়ে ভোটের মাঠে নামার চেষ্টা করবেন বলেও জানান মি. কাদের।
তবে তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ রয়েছে। মি. কাদের বলেন, এখন নিরাপত্তার বিষয় বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এতটাই খারাপ যে অতীতে কোনো নির্বাচনের সময় এমন ছিল না। ফলে নির্বাচন নিয়েই শঙ্কা বাড়ছে।

ওসমান হাদির ওপর হামলার ঘটনার পর ঢাকার কিছু এলাকায় তল্লাশি বাড়িয়েছে পুলিশ
সরকার ঘনিষ্ঠ দলগুলোরও শঙ্কা নিরাপত্তা প্রশ্নে
অন্তর্বর্তী সরকারের ওপর প্রভাব রয়েছে, এমন দলগুলোর মধ্যে জামায়াত ও এনসিপিতেও নির্বাচনের নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কা আছে।
ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরিফ ওসমান হাদিকে হত্যাচেষ্টার ঘটনা ওই দলগুলোর মধ্যে নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।
জামায়াতের সেক্রেটারি জেনারেল মিয়া গোলাম পরওয়ারের বক্তব্য হচ্ছে, নিরাপত্তা বা আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে রাজনীতিতে নতুন করে উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। তারা মনে করেন, সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নেবে যাতে নির্বাচন নিয়ে মানুষের সংশয় কেটে যায়।
এনসিপির সদস্য সচিব আখতার হোসেনও মনে করেন, নিরাপত্তা নিয়ে মানুষের মধ্যে এক ধরনের শঙ্কা ছিল। শরিফ ওসমান হাদিকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার চেষ্টার ঘটনায় ওই শঙ্কা বা উদ্বেগ আরও বেড়েছে।
দল দুটির এই দুই নেতাই বলছেন, ১২ই ফেব্রুয়ারি তারিখেই নির্বাচনে হবে, এ ব্যাপারে মানুষের মধ্যে কোনো শঙ্কা যাতে না থাকে, সেজন্য সরকারকেই কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, গত ১২ই ডিসেম্বর ঢাকায় প্রকাশ্যে রাস্তায় ওসমান হাদিকে গুলি করার ঘটনা ঘটে। সংকটাপন্ন অবস্থায় তাকে এখন সিঙ্গাপুরে একটি হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটেই নির্বাচন নিয়ে আবারও শঙ্কার কথা এসেছে।
তবে পরিস্থিতিটাকে ভিন্নভাবে দেখছে বিএনপি। তারা বলছে, নিরাপত্তা প্রশ্নে আগে থেকেই উদ্বেগ ছিল।
দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলছেন, এখনকার পরিস্থিতি নির্বাচন নিয়ে কোনো শঙ্কা তাদের নেই। তারা বিশ্বাস করেন, ১২ই ফেব্রুয়ারিতেই নির্বাচন অনুষ্ঠানে সরকার ও নির্বাচন কমিশন যথাযথ পদক্ষেপ নিচ্ছে।
সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী অবশ্য বলে আসছেন, নিরাপত্তা বা আইশৃঙ্খলা নিয়ে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।
কিন্তু মাঠের বাস্তবতা ও সরকারের বক্তব্যে অনেক ফারাক। তাতে মানুষ কতটা আশ্বস্ত হচ্ছে সেই প্রশ্ন বিশ্লেষকদের।
লেখক ও বিশ্লেষক মহিউদ্দিন আহমদ বিবিসি বাংলাকে বলেন, মানুষের আস্থা অর্জন করাটাই সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বিবিসি নিউজ বাংলা
কাদির কল্লোল 


















