কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দ্রুত বিস্তারে শিল্প ও সংস্কৃতির জগৎ এখন গভীর এক অনিশ্চয়তার মুখে। প্রশ্ন উঠছে, মানুষের সৃজনশীলতা নয়, বরং সেই সৃজনশীলতা দিয়ে জীবিকা অর্জনের সুযোগই কি সবচেয়ে বড় ঝুঁকিতে পড়ছে। সাম্প্রতিক সময়ে লেখক, চিত্রশিল্পী, অভিনয়শিল্পী ও সংগীতশিল্পীদের অভিজ্ঞতা বিশ্লেষণ করে এমনই আশঙ্কার কথা উঠে এসেছে
সৃজনশীল জীবিকার সামনে নতুন সংকট
শিল্পী হওয়া কখনোই সহজ ছিল না। তবে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা এখন সেই লড়াইকে আরও কঠিন করে তুলেছে। অনেক শিল্পীর মতে, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের সৃজনশীলতা ধ্বংস করছে না, বরং তাদের কাজের বাজার কেড়ে নিচ্ছে। প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতায় তৈরি শিল্পকর্ম যখন অনায়াসে নকল হয়ে যাচ্ছে, তখন আয়ের পথ সংকুচিত হচ্ছে।
নকলের ভয় আর জীবিকার প্রশ্ন
অনেক শিল্পী বলছেন, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা তাদের কাজের ধরন শিখে একই রকম সৃষ্টি করছে। এতে সৃষ্টিশীল মানুষের শ্রম ও জীবনের দীর্ঘ সাধনার মূল্য কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে নতুন শিল্পীরা সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, কারণ শেখার সময় যে ছোটখাটো কাজগুলো আয়ের উৎস ছিল, সেগুলো দ্রুত কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার দখলে চলে যাচ্ছে।
প্রতিযোগিতা নয়, সুযোগের সংকট
কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা মানুষের মতো ভালো শিল্প তৈরি করতে পারবে কি না, সে প্রশ্নে অনেক শিল্পী আগ্রহী নন। তাদের মতে, বড় সমস্যা হলো শিল্পচর্চার মধ্যবর্তী ধাপগুলো হারিয়ে যাওয়া। এই ধাপগুলোই একজন গড় শিল্পীকে সময়ের সঙ্গে দক্ষ করে তোলে। সেই সুযোগ বন্ধ হলে ভবিষ্যতের বড় শিল্পী তৈরি হওয়াই কঠিন হয়ে পড়বে।

অসমতা আরও বাড়ার আশঙ্কা
শিল্পের জগতে বরাবরই সুযোগের অভাব ছিল। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সেই পুরোনো বৈষম্যকে আরও বাড়িয়ে দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। যাদের আর্থিক নিরাপত্তা আছে, তারাই শিল্পচর্চায় টিকে থাকতে পারবেন। অন্যদের জন্য এই পথ ক্রমেই সংকীর্ণ হয়ে উঠবে।
ইউনিয়ন, আইন ও প্রতিরোধ
এই পরিস্থিতিতে শিল্পী সংগঠন ও শ্রমিক ইউনিয়নগুলো নতুন করে সক্রিয় হচ্ছে। কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যবহার নিয়ে চুক্তিতে সুরক্ষা ধারা যুক্ত করার চেষ্টা চলছে। কিছু ক্ষেত্রে ডিজিটাল নকলের বিরুদ্ধে আইনি লড়াইও শুরু হয়েছে। এতে কিছু অগ্রগতি হলেও ভবিষ্যৎ এখনও অনিশ্চিত।
সহযোগী না প্রতিদ্বন্দ্বী
অনেক শিল্পী পুরোপুরি কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার বিরোধী নন। বরং একঘেয়ে ও পরিশ্রমী কাজের ক্ষেত্রে এটি সহায়ক হতে পারে বলে তারা মনে করেন। তথ্য যাচাই বা ছোটখাটো কাজ দ্রুত শেষ করতে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করে সময় বাঁচানোর অভিজ্ঞতাও শেয়ার করেছেন কেউ কেউ। তবে শর্ত একটাই, এতে যেন মানুষের সৃজনশীল শ্রমের মূল্য নষ্ট না হয়।
মানবিক সিদ্ধান্তেই ভবিষ্যৎ নির্ধারিত
বিশেষজ্ঞদের মতে, শিল্পের ভবিষ্যৎ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হাতে পুরোপুরি ছেড়ে দেওয়ার বিষয় নয়। শিল্পী, দর্শক ও নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্তই ঠিক করবে মানুষের তৈরি শিল্প টিকে থাকবে কি না। এখনই যদি লড়াই ছেড়ে দেওয়া হয়, তাহলে সেই পরাজয়ই বাস্তব হয়ে উঠবে।
#কৃত্রিমবুদ্ধিমত্তা #সৃজনশীলতা #শিল্পসংস্কৃতি #শিল্পীরজীবন #প্রযুক্তিওসমাজ
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















