উত্তর ও দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তে দীর্ঘদিনের কোলাহল হঠাৎ থেমে গেছে। সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে যে শব্দযুদ্ধ চলছিল, তা এখন স্মৃতি। এই পরিবর্তনের পেছনে রয়েছে দক্ষিণ কোরিয়ার নতুন প্রেসিডেন্ট লি জে মিয়ংয়ের নীতিগত মোড়। উত্তর কোরিয়ার সঙ্গে উত্তেজনা কমাতে তিনি বেছে নিয়েছেন নীরবতার কূটনীতি।
সীমান্তে নীরবতার শুরু
দক্ষিণ কোরিয়ার সীমান্তবর্তী গ্রাম দেদংরিতে একসময় রাতে ঘুমাতে কানে তুলো দিতে হতো। সীমান্তে বসানো উচ্চক্ষমতার শব্দযন্ত্র থেকে উত্তর কোরিয়ার দিকে ভেসে যেত গান আর খবর। জবাবে উত্তর কোরিয়া চালাত পশুর ডাক আর ভয়ংকর শিস। চলতি বছরে হঠাৎ সেই শব্দ থেমে যায়। নতুন সরকারের সিদ্ধান্তে শব্দযন্ত্র বন্ধ হওয়ার কয়েক দিনের মধ্যেই উত্তর কোরিয়াও তাদের প্রচার থামিয়ে দেয়। সীমান্তবাসীর কাছে এটি স্বস্তির খবর।

নীতির পরিবর্তন কেন
এর আগের প্রেসিডেন্টের সময়ে দুই কোরিয়ার সম্পর্ক ছিল চরম উত্তেজনাপূর্ণ। সীমান্তে লিফলেট ছোড়া, পাল্টা আবর্জনা পাঠানো আর শব্দযন্ত্র চালু রাখাই ছিল নিত্যদিনের ঘটনা। ক্ষমতায় এসে লি জে মিয়ং প্রথমেই এই উসকানিমূলক কর্মকাণ্ড বন্ধের নির্দেশ দেন। তাঁর লক্ষ্য স্পষ্ট, পরিস্থিতি আরও খারাপ হওয়া ঠেকানো এবং আলোচনার পথ খোলা রাখা।
বন্ধ হলো রেডিও সম্প্রচার
শব্দযন্ত্র বন্ধের পাশাপাশি আরেকটি বড় সিদ্ধান্ত নেয় সিউল। বহু বছর ধরে যে রেডিও সম্প্রচার উত্তর কোরিয়ার নাগরিকদের কাছে বাইরের খবর পৌঁছে দিত, তা বন্ধ করা হয়। এর ফলে বাইরে থেকে উত্তর কোরিয়ায় পৌঁছানো তথ্যের পরিমাণ উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এটি উত্তর কোরিয়ার নেতৃত্বের জন্য বড় ছাড়। কারণ বাইরের তথ্যকে তারা শাসনের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে।

উত্তর কোরিয়ার কঠোর নিয়ন্ত্রণ
উত্তর কোরিয়ায় বিদেশি তথ্য গ্রহণ এখন গুরুতর অপরাধ। বিদেশি সামগ্রী রাখার শাস্তি দীর্ঘ কারাদণ্ড, এমনকি মৃত্যুদণ্ডও হতে পারে। তবু অনেক মানুষ মনে করেন, রেডিও ছিল তুলনামূলক নিরাপদ মাধ্যম। বিদ্যুৎ ছাড়াই চালানো যায়, লুকিয়ে রাখা সহজ। সেই পথ বন্ধ হওয়ায় উদ্বেগ বেড়েছে।
সমঝোতার আশা নাকি ঝুঁকি
লি জে মিয়ং দাবি করেন, রেডিও এখন পুরোনো মাধ্যম। তবে বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর আসল লক্ষ্য উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং উনকে আলোচনায় ফেরানো। প্রশ্ন হলো, এতে কি কাজ হবে। চীন ও রাশিয়ার সমর্থন পেয়ে উত্তর কোরিয়া আপাতত তাড়াহুড়ো দেখাচ্ছে না। সামনে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্ভাব্য বৈঠকই তাদের বড় লক্ষ্য। তবু সীমান্তে নীরবতা অন্তত যুদ্ধের শব্দ থামিয়েছে, আর সীমান্তবাসী পাচ্ছেন শান্ত ঘুম।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















