০১:১৯ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ ডিসেম্বর ২০২৫
রাজ্য বনাম কর্পোরেট শক্তি: হলিউডের পরের মহামার্জার কি আটকে দেবে অঙ্গরাজ্যগুলো আমেরিকা বড় হওয়ার গল্পে এক শিশু আর দুই অভিযাত্রীর অদৃশ্য শক্তি মার্কিন এপস্টেইন নথি প্রকাশে ক্লিনটনের নাম বেশি, ট্রাম্পের উল্লেখ সামান্য নির্বাচন সামনে রেখে সিইসির সঙ্গে বৈঠকে বসছেন তিন বাহিনীর প্রধান শহীদ শরিফ ওসমান বিন হাদিকে নিয়ে আপত্তিকর মন্তব্যের অভিযোগে চিকিৎসক সাময়িক বরখাস্ত জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি পরীক্ষা শুরু রোববার, সি ইউনিট দিয়ে সূচনা প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার বন্ধের দাবি রাকসু ভিপির প্রথম আলো ও ডেইলি স্টার পোড়ানোকারীরা জাতির শত্রু: মির্জা আব্বাস পাঁচ দিনের রিমান্ড শেষে কারাগারে পাঠানো হলো সাংবাদিক আনিস আলমগীর সভ্যতার নেশা থেকে সংযমের সন্ধান: মদ কীভাবে মানুষ গড়েছে, আর প্রযুক্তি কীভাবে বদলাচ্ছে সেই সম্পর্ক

আমেরিকা বড় হওয়ার গল্পে এক শিশু আর দুই অভিযাত্রীর অদৃশ্য শক্তি

আমেরিকাকে আরও বড় করার বাসনা নতুন নয়। আজকের সময়ের ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে তাকালে ইতিহাসের পাতায় চোখ ফেরানো জরুরি হয়ে পড়ে। ঠিক এমন এক সময়েই সামনে আসে দুই অভিযাত্রী আর এক নবজাতকের গল্প, যারা নীরবে বদলে দিয়েছিল পুরো একটি দেশের ভবিষ্যৎ।

লুইজিয়ানা কেনা আর অজানা ভূখণ্ডের ভয়
উনিশ শতকের শুরুতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বুঝেছিলেন, বিশাল এক ভূখণ্ড যদি আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে তা প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির হাতে চলে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ফ্রান্সের কাছ থেকে লুইজিয়ানা কেনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু কাগজে কেনা মানেই বাস্তবে জানা নয়। অঞ্চলটির প্রকৃতি, মানুষ আর সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াশিংটনে তখন প্রায় কিছুই জানা ছিল না।

এই অজানাকে জানার দায়িত্ব পড়ে মেরিওয়েদার লুইস ও উইলিয়াম ক্লার্কের কাঁধে। শুরু হয় এক দুঃসাহসিক অভিযান, যার লক্ষ্য শুধু মানচিত্র আঁকা নয়, বরং নতুন ভূখণ্ডকে বোঝা।

জ্ঞানই শক্তি, কিন্তু ঝুঁকি ছিল প্রতিদিন
মিসৌরি নদী ধরে উজানে যাত্রা সহজ ছিল না। খাবারের সংকট, শারীরিক অসুস্থতা আর কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেই এগোতে হয়েছে দলটিকে। পথে এক সৈনিকের মৃত্যু মনে করিয়ে দেয়, এই অভিযান ছিল জীবনের দড়িতে ঝুলে থাকা এক পরীক্ষা।

How two explorers, a mother and a baby made America | The Economist

স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল আরেক বড় চ্যালেঞ্জ। কোথাও কূটনৈতিক ভাষণ, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি, কোথাও আবার সংঘর্ষের মুখোমুখি হওয়ার উপক্রম। একবার তো সামান্য ভুল সিদ্ধান্তেই পুরো অভিযান শেষ হয়ে যেতে পারত।

এক শিশুর উপস্থিতি যেভাবে বদলে দিল ভাগ্য
এই অভিযানের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক ছিল এক নবজাতকের উপস্থিতি। শোশোন নারী সাকাগাওয়িয়ার কোলে থাকা সেই শিশু অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছে স্পষ্ট বার্তা দেয়—এটি কোনো যুদ্ধযাত্রা নয়। অস্ত্রে সজ্জিত দলটি যে শান্তিপূর্ণ, সেই বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল ওই শিশুর কারণেই। ইতিহাসবিদদের মতে, শিশুটি না থাকলে বহু জায়গায় অভিযানটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারত।

পাহাড়, তুষার আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি
রকি পর্বতমালা পেরোনোর সময় প্রকৃতির কঠোর রূপের মুখোমুখি হয় দলটি। তুষারে ঢাকা পাহাড়, খাবারের অভাব আর অসুস্থ শরীর নিয়েও এগিয়ে চলা ছিল প্রায় অসম্ভব এক যাত্রা। তবু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তা আর ভাগ্যের কিছু অনুকূল মুহূর্ত তাদের পথ খুলে দেয়।

How two explorers, a mother and a baby made America | The Economist

অবশেষে প্রশান্ত মহাসাগরের দেখা পেয়ে ক্লার্কের ডায়েরিতে লেখা সেই আনন্দ ইতিহাস হয়ে আছে আজও।

আমেরিকার ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রভাব
লুইস ও ক্লার্কের মানচিত্র, নথি আর পর্যবেক্ষণ আমেরিকানদের পশ্চিমমুখী বিস্তারের পথ খুলে দেয়। কৃষি, বাণিজ্য, সামরিক কৌশল—সব ক্ষেত্রেই তাদের তথ্য হয়ে ওঠে দিকনির্দেশনা। একই সঙ্গে তারা প্রাণী ও উদ্ভিদের অসংখ্য নতুন প্রজাতির পরিচয় দেন বিজ্ঞানের জগতে।

এই পুরো গল্পের নেপথ্যে ছিলেন টমাস জেফারসন। তথ্যভিত্তিক চিন্তা, দূরদৃষ্টি আর রাজনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতাই আমেরিকাকে মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত শক্তিতে রূপ দেয়। তাঁর ভুল ছিল, কিন্তু ইতিহাসে তাঁর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।

আজও সেই পথের স্মৃতি
আজও হাজারো মানুষ লুইস ও ক্লার্কের পথ ধরে ভ্রমণ করেন, ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে। তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি তারা নিজেরাই স্বীকার করেন—তারা জানতেন কোথায় যাচ্ছেন, কিন্তু সেই অভিযাত্রীরা জানতেন না।

জনপ্রিয় সংবাদ

রাজ্য বনাম কর্পোরেট শক্তি: হলিউডের পরের মহামার্জার কি আটকে দেবে অঙ্গরাজ্যগুলো

আমেরিকা বড় হওয়ার গল্পে এক শিশু আর দুই অভিযাত্রীর অদৃশ্য শক্তি

১১:০০:৫৪ অপরাহ্ন, শনিবার, ২০ ডিসেম্বর ২০২৫

আমেরিকাকে আরও বড় করার বাসনা নতুন নয়। আজকের সময়ের ভূরাজনৈতিক উচ্চাকাঙ্ক্ষার দিকে তাকালে ইতিহাসের পাতায় চোখ ফেরানো জরুরি হয়ে পড়ে। ঠিক এমন এক সময়েই সামনে আসে দুই অভিযাত্রী আর এক নবজাতকের গল্প, যারা নীরবে বদলে দিয়েছিল পুরো একটি দেশের ভবিষ্যৎ।

লুইজিয়ানা কেনা আর অজানা ভূখণ্ডের ভয়
উনিশ শতকের শুরুতে তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট টমাস জেফারসন বুঝেছিলেন, বিশাল এক ভূখণ্ড যদি আমেরিকার নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে তা প্রতিদ্বন্দ্বী শক্তির হাতে চলে যেতে পারে। সেই আশঙ্কা থেকেই ফ্রান্সের কাছ থেকে লুইজিয়ানা কেনার সিদ্ধান্ত। কিন্তু কাগজে কেনা মানেই বাস্তবে জানা নয়। অঞ্চলটির প্রকৃতি, মানুষ আর সম্ভাবনা সম্পর্কে ওয়াশিংটনে তখন প্রায় কিছুই জানা ছিল না।

এই অজানাকে জানার দায়িত্ব পড়ে মেরিওয়েদার লুইস ও উইলিয়াম ক্লার্কের কাঁধে। শুরু হয় এক দুঃসাহসিক অভিযান, যার লক্ষ্য শুধু মানচিত্র আঁকা নয়, বরং নতুন ভূখণ্ডকে বোঝা।

জ্ঞানই শক্তি, কিন্তু ঝুঁকি ছিল প্রতিদিন
মিসৌরি নদী ধরে উজানে যাত্রা সহজ ছিল না। খাবারের সংকট, শারীরিক অসুস্থতা আর কঠোর শৃঙ্খলার মধ্যেই এগোতে হয়েছে দলটিকে। পথে এক সৈনিকের মৃত্যু মনে করিয়ে দেয়, এই অভিযান ছিল জীবনের দড়িতে ঝুলে থাকা এক পরীক্ষা।

How two explorers, a mother and a baby made America | The Economist

স্থানীয় আদিবাসীদের সঙ্গে সাক্ষাৎ ছিল আরেক বড় চ্যালেঞ্জ। কোথাও কূটনৈতিক ভাষণ, কোথাও ভুল বোঝাবুঝি, কোথাও আবার সংঘর্ষের মুখোমুখি হওয়ার উপক্রম। একবার তো সামান্য ভুল সিদ্ধান্তেই পুরো অভিযান শেষ হয়ে যেতে পারত।

এক শিশুর উপস্থিতি যেভাবে বদলে দিল ভাগ্য
এই অভিযানের সবচেয়ে বিস্ময়কর দিক ছিল এক নবজাতকের উপস্থিতি। শোশোন নারী সাকাগাওয়িয়ার কোলে থাকা সেই শিশু অনেক আদিবাসী গোষ্ঠীর কাছে স্পষ্ট বার্তা দেয়—এটি কোনো যুদ্ধযাত্রা নয়। অস্ত্রে সজ্জিত দলটি যে শান্তিপূর্ণ, সেই বিশ্বাস গড়ে উঠেছিল ওই শিশুর কারণেই। ইতিহাসবিদদের মতে, শিশুটি না থাকলে বহু জায়গায় অভিযানটি নিশ্চিহ্ন হয়ে যেতে পারত।

পাহাড়, তুষার আর অদম্য ইচ্ছাশক্তি
রকি পর্বতমালা পেরোনোর সময় প্রকৃতির কঠোর রূপের মুখোমুখি হয় দলটি। তুষারে ঢাকা পাহাড়, খাবারের অভাব আর অসুস্থ শরীর নিয়েও এগিয়ে চলা ছিল প্রায় অসম্ভব এক যাত্রা। তবু স্থানীয় জনগোষ্ঠীর সহায়তা আর ভাগ্যের কিছু অনুকূল মুহূর্ত তাদের পথ খুলে দেয়।

How two explorers, a mother and a baby made America | The Economist

অবশেষে প্রশান্ত মহাসাগরের দেখা পেয়ে ক্লার্কের ডায়েরিতে লেখা সেই আনন্দ ইতিহাস হয়ে আছে আজও।

আমেরিকার ভবিষ্যৎ নির্মাণে প্রভাব
লুইস ও ক্লার্কের মানচিত্র, নথি আর পর্যবেক্ষণ আমেরিকানদের পশ্চিমমুখী বিস্তারের পথ খুলে দেয়। কৃষি, বাণিজ্য, সামরিক কৌশল—সব ক্ষেত্রেই তাদের তথ্য হয়ে ওঠে দিকনির্দেশনা। একই সঙ্গে তারা প্রাণী ও উদ্ভিদের অসংখ্য নতুন প্রজাতির পরিচয় দেন বিজ্ঞানের জগতে।

এই পুরো গল্পের নেপথ্যে ছিলেন টমাস জেফারসন। তথ্যভিত্তিক চিন্তা, দূরদৃষ্টি আর রাজনৈতিক ঝুঁকি নেওয়ার মানসিকতাই আমেরিকাকে মহাদেশজুড়ে বিস্তৃত শক্তিতে রূপ দেয়। তাঁর ভুল ছিল, কিন্তু ইতিহাসে তাঁর প্রভাব অস্বীকার করার উপায় নেই।

আজও সেই পথের স্মৃতি
আজও হাজারো মানুষ লুইস ও ক্লার্কের পথ ধরে ভ্রমণ করেন, ইতিহাসকে ছুঁয়ে দেখতে। তবে সবচেয়ে বড় পার্থক্যটি তারা নিজেরাই স্বীকার করেন—তারা জানতেন কোথায় যাচ্ছেন, কিন্তু সেই অভিযাত্রীরা জানতেন না।