জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিশ্ব এখন এক অদ্ভুত, ভাঙা বাস্তবতার মুখোমুখি। একদিকে রেকর্ড ভাঙা তাপমাত্রা, নজিরবিহীন তাপপ্রবাহ আর ভয়াবহ বন্যা। অন্যদিকে সেই সংকট মোকাবিলায় বৈশ্বিক ঐকমত্য ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছে। দুই হাজার পঁচিশ সালের জলবায়ু রাজনীতি তাই এক সরল পথে নয়, বরং নানা স্বার্থ আর বাস্তবতার টানাপোড়েনে এগোচ্ছে।
বেলেম সম্মেলন ও অনুপস্থিত প্রতিশ্রুতি
নভেম্বরে আমাজনের শহর বেলেমে যখন বিশ্বের বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধিরা জলবায়ু সম্মেলনে মিলিত হন, তখন পৃথিবী ইতিমধ্যেই এক ভয়াবহ বছরের অভিজ্ঞতা নিয়ে সেখানে হাজির। বিজ্ঞানীদের মতে, মানবসৃষ্ট উষ্ণতা ছাড়া এমন পরিস্থিতি প্রায় অসম্ভব। এই সম্মেলনের লক্ষ্য ছিল গ্রিনহাউস গ্যাস কমাতে নতুন করে বৈশ্বিক অঙ্গীকার। তেল, গ্যাস আর কয়লার ব্যবহার কমানোর প্রস্তাব উঠেছিল। কিন্তু তেল ও গ্যাস উৎপাদনকারী দেশগুলোর বিরোধিতায় চূড়ান্ত ঘোষণায় সেই জ্বালানির নামই থাকল না। এই ফলাফল দেখিয়ে দেয়, জলবায়ু উদ্যোগ এখন কতটা খণ্ডিত ও জটিল।
যুক্তরাষ্ট্রের আলাদা পথ
দুই হাজার পঁচিশ সালের জানুয়ারিতে ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় ফেরার পর জলবায়ু আন্দোলনের আশঙ্কা বাস্তবে রূপ নেয়। সমুদ্রভিত্তিক বায়ু বিদ্যুৎ প্রকল্প কার্যত থেমে যায়, বৈদ্যুতিক যানবাহন ও নবায়নযোগ্য জ্বালানিতে সরকারি সহায়তা কমে আসে। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের বৈজ্ঞানিক ভিত্তিকেই প্রশ্নের মুখে ফেলা হয়। এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রের নির্গমন কমার বদলে স্থির থাকার সম্ভাবনাই বেশি। বৈশ্বিক জলবায়ু রাজনীতিতে দেশটির প্রভাব ও ক্রমশ কমছে।

অর্থনীতির বাস্তবতা ও নবায়নযোগ্য শক্তি
তবে অর্থনৈতিক বাস্তবতা পুরো চিত্র বদলে দিচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্রে বহু দশক পর বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে, যার বড় কারণ কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক তথ্যকেন্দ্রের বিস্তার। এই চাহিদা মেটাতে নবায়নযোগ্য শক্তিই এখন সবচেয়ে সস্তা ও সহজ পথ। একই সঙ্গে পারমাণবিক শক্তি ও শক্তি সংরক্ষণ প্রযুক্তিতে কিছু করছাড় বহাল থাকায় যুক্তরাষ্ট্র পুরোপুরি পিছিয়ে পড়েনি, বরং নিজের মতো করে এগোচ্ছে।
চীনের উত্থান ও বৈশ্বিক পরিবর্তন
বিশ্ব নির্গমনের বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে। সেই সুযোগেই চীন পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তির শক্তিধর দেশে পরিণত হয়েছে। সৌরকোষ রপ্তানিতে দেশের প্রবৃদ্ধি অভাবনীয়, দাম নেমেছে রেকর্ড পর্যায়ে। উন্নয়নশীল দেশগুলোর কাছে নবায়নযোগ্য শক্তি এখন প্রায় অপ্রতিরোধ্য আকর্ষণ। ফলে বৈশ্বিক পর্যায়ে সবুজ শক্তির বিস্তার থামছে না।
অভিযোজনের জরুরি ডাক
জলবায়ু দুর্যোগ বাড়তে থাকায় আলোচনার কেন্দ্রে এসেছে অভিযোজন। অবকাঠামোকে জলবায়ু সহনশীল করা, আগাম প্রস্তুতি নেওয়া এখন অপরিহার্য। বিশেষজ্ঞদের মতে, সবচেয়ে ভালো পরিস্থিতিতেও অভিযোজন ছাড়া উপায় নেই। তবে উষ্ণতা যত বাড়বে, অভিযোজন এর কার্যকারিতা তত কমবে। দুই হাজার পঁচিশ সালে ব্যয় বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে, নির্গমন কমানো ও অভিযোজন—দুটোই একসঙ্গে দরকার। আর সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।
#জলবায়ুপনিবর্তন #জলবায়ুসম্মেলন #নবায়নযোগ্যশক্তি #চীন #যুক্তরাষ্ট্র #সবুজপ্রযুক্তি #পরিবেশসংকট
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















