দুই হাজার পঁচিশ সালে বিশ্ব রাজনীতি কিংবা অর্থনীতিতে কে জিতল, তা নিয়ে তর্ক চলতেই পারে। কিন্তু হলিউডের ক্ষেত্রে প্রশ্নটা অনেক সহজ। এই বছরের সবচেয়ে বড় বিজয়ী টিমোথি শালা মে ও সিডনি সুইনি। শুধু বক্স অফিস বা পুরস্কারের বিচারে নয়, তারকা খ্যাতির ধারণা, বড় পর্দার ভবিষ্যৎ এবং দর্শকের সঙ্গে সিনেমার সম্পর্ক নতুন করে ভাবার ক্ষেত্রেও তাঁদের উত্থান তাৎপর্যপূর্ণ।
চরিত্রের দাপটেই তারকা
বছরের শেষ ভাগে মুক্তি পাওয়া ঝলমলে ছবিতেই দুজনের উপস্থিতি নজর কেড়েছে। পঞ্চাশের দশকের পটভূমিতে নির্মিত এক ছবিতে টিমোথি শালা মে হাজির হন উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বেপরোয়া এক ক্রীড়াবিদের চরিত্রে। খেলাটার চেয়ে সেখানে বেশি গুরুত্ব পায় চরিত্রের জেদ, স্বপ্ন আর দায়িত্ব এড়িয়ে চলার মানসিকতা। অভিনয়ে কখনো আকর্ষণীয়, কখনো বিরক্তিকর হয়ে ওঠার মধ্য দিয়ে তিনি দেখিয়েছেন, দর্শক আসলে গল্পের চেয়ে চরিত্রের আবেগেই বেশি বাঁধা পড়ে। একই বছরে আরেক ছবিতে কিংবদন্তি সংগীতশিল্পীর ভূমিকায় তাঁর অভিনয়ও প্রশংসিত হয়।
বিতর্কে জন্ম নেওয়া জনপ্রিয়তা
অন্যদিকে সিডনি সুইনি আলোচনায় আসেন শুধু সিনেমার জন্য নয়, একটি বিজ্ঞাপনকে ঘিরে তৈরি হওয়া তুমুল বিতর্কের কারণেও। সেই আলোচনা নারীর দেহের উপস্থাপনা থেকে শুরু করে সামাজিক মূল্যবোধ পর্যন্ত বিস্তৃত হয়। তবু এই বিতর্কই তাঁকে আরও দৃশ্যমান করে তোলে। থ্রিলার ঘরানার নতুন ছবিতে তিনি হাজির হন রহস্যময় এক গৃহকর্মীর চরিত্রে, যেখানে বিলাসবহুল বাড়ির আড়ালে লুকিয়ে থাকে অজানা গল্প। অন্য ছবিতে নারী বক্সারের ভূমিকায় তাঁর অভিনয় সমালোচকদের প্রশংসা পেলেও বাণিজ্যিক সাফল্য সীমিত ছিল।

তারকাখ্যাতির সূক্ষ্ম খেলা
টিমোথি শালামে অভিনয়ের দিক থেকে এগিয়ে থাকলেও সিডনি সুইনির পর্দার উপস্থিতি তাঁকে পূর্ণাঙ্গ চলচ্চিত্র তারকায় পরিণত করেছে। প্রকৃত তারকা সেই, যিনি ছবিকে জনপ্রিয় করেন, ছবি নয়। দর্শক তাঁদের সিনেমা দেখে শুধু গল্পের জন্য নয়, তারকার ব্যক্তিত্ব ও ক্যারিয়ারের ধারাবাহিকতা বোঝার জন্যও। তবে এই অবস্থান ধরে রাখতে দরকার ঘনিষ্ঠতা আর দূরত্বের সূক্ষ্ম ভারসাম্য। প্রচারের আলো জ্বালাতে হয়, কিন্তু কখনোই পুরোটা উজাড় করে দেওয়া যায় না।
স্ট্রিমিং যুগে বড় পর্দার লড়াই
আজকের ভাঙা মনোযোগের যুগে তারকা হয়ে ওঠা আগের চেয়ে কঠিন। ঘরে বসে ছবি দেখার অভ্যাস বড় পর্দার জাদু কিছুটা ম্লান করেছে। অ্যাকশননির্ভর ধারাবাহিক ছবির ভিড়ে চরিত্র কেন্দ্রিক তারকানির্ভর সিনেমা কমে যাচ্ছে। এর মধ্যেই কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার হুমকি নতুন করে ভাবাচ্ছে চলচ্চিত্র জগতকে। তবু যত উন্নতই হোক প্রযুক্তি, মানুষের ব্যক্তিগত জীবন, মতামত আর অনুভূতি নিয়ে কৌতূহল তৈরি করতে পারবে না। সেই কৌতূহল ই প্রকৃত তারকা খ্যাতির মূল।
এই কারণেই টিমোথি শালামে ও সিডনি সুইনির মতো তারকারা শুধু দুই হাজার পঁচিশ সালের বিজয়ী নন, বড় পর্দা কে বাঁচিয়ে রাখার শেষ ভরসাও।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















