চিংহাই-তিব্বত মালভূমির পূর্ব প্রান্তে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে চার হাজার তিনশো মিটার উচ্চতায় প্রাগৈতিহাসিক মানুষের বসতির গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ মিলেছে। চীনের প্রত্নতত্ত্ববিদদের এই নতুন আবিষ্কার মানব ইতিহাসে উচ্চভূমিতে মানুষের অভিযোজন ও অভিবাসনের ধারণাকে নতুনভাবে ব্যাখ্যা করার সুযোগ তৈরি করেছে।
আবিষ্কারের স্থান ও গুরুত্ব
চীনের সিচুয়ান প্রদেশের গারজে তিব্বতি স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চলের দাওচেং কাউন্টিতে সুনচেন কো হ্রদের কাছে এই প্রত্নস্থলটি অবস্থান। স্থানটি এখন পর্যন্ত চিংহাই-তিব্বত মালভূমিতে মানুষের উপস্থিতির সবচেয়ে উঁচু প্রমাণ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। সিচুয়ান প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য প্রশাসনের তথ্যের ভিত্তিতে রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা জানিয়েছে, এই আবিষ্কার প্রাচীন মানুষের জীবনযাত্রা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ নতুন তথ্য যোগ করেছে।
গবেষণা ও প্রকাশনা
বেইজিং বিশ্ববিদ্যালয় এবং সিচুয়ান প্রাদেশিক সাংস্কৃতিক নিদর্শন ও প্রত্নতত্ত্ব গবেষণা ইনস্টিটিউটের গবেষক দল বিস্তারিত ফলাফল আন্তর্জাতিক গবেষণা সাময়িকীতে প্রকাশ করেছে। এতে বলা হয়েছে, এই এলাকা বিখ্যাত পিলুও প্রত্নস্থল গুচ্ছের অংশ, যা এর আগে চীনের শীর্ষ প্রত্ন আবিষ্কারের স্বীকৃতি পেয়েছিল।
হ্রদ, জলবায়ু ও প্রাচীন জীবন
সুনচেন কো শব্দের অর্থ স্থানীয় ভাষায় বড় হ্রদ। শেষ বরফ যুগের পর হিমবাহ গলে এই অঞ্চলে অসংখ্য হ্রদের সৃষ্টি হয়। এসব জলাশয় দীর্ঘকাল ধরে নানা প্রাণীর আবাস ছিল এবং প্রাচীন শিকারি ও সংগ্রাহক জনগোষ্ঠীর জন্য গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ জুগিয়েছে।
উচ্চতায় মানব বসতির প্রমাণ
নতুন আবিষ্কৃত স্তরগুলোর প্রাচীনতম অংশের বয়স প্রায় বারো হাজার বছর বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই স্থানে একশ নব্বইটির বেশি পাথরের তৈরি সরঞ্জাম পাওয়া গেছে, এগুলোর আকার ছোট ও মাঝারি। এগুলো সূক্ষ্ম কারিগরির নিদর্শন এবং উচ্চভূমির কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার জন্য বিশেষ প্রযুক্তিগত অভিযোজনের ইঙ্গিত দেয়।

মানব অভিযোজন এর নতুন ব্যাখ্যা
চিংহাই-তিব্বত মালভূমিকে দীর্ঘদিন ধরে মানুষের জন্য অত্যন্ত প্রতিকূল অঞ্চল হিসেবে ধরা হতো। কম অক্সিজেন, তীব্র শীত ও দুর্গম ভৌগোলিক অবস্থার কারণে এখানে প্রাচীন মানুষের স্থায়ী বসতি নিয়ে সন্দেহ ছিল। কিন্তু এই আবিষ্কার দেখিয়েছে, প্রাগৈতিহাসিক জনগোষ্ঠী শুধু অল্প সময়ের জন্য নয়, বরং বারবার ফিরে এসে এখানে বসবাস করত।
গবেষক দলের প্রধানের বক্তব্য
পিলুও প্রকল্পের প্রধান প্রত্নতত্ত্ববিদ ঝেং ঝেশুয়ান বলেন, এটি কেবল অস্থায়ী শিবির ছিল না, বরং নিয়মিত ব্যবহৃত আবাসস্থল। তাঁর মতে, দশ হাজার বছরেরও বেশি আগে উষ্ণ জলবায়ুর সময়গুলো কাজে লাগিয়ে মানুষ উচ্চভূমির হ্রদ কেন্দ্রিক এলাকায় বসতি গড়ে তোলে এবং দীর্ঘমেয়াদে পরিবেশের সঙ্গে খাপ খাইয়ে নিতে সক্ষম হয়।
মানব ইতিহাসে প্রভাব
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই স্থান মানব ইতিহাসের সময় ও স্থানের একটি গুরুত্বপূর্ণ সেতুবন্ধন তৈরি করেছে। এর মাধ্যমে পূর্ব এশিয়ায় আধুনিক মানুষের বিস্তারের পথ ও কঠিন পরিবেশে টিকে থাকার কৌশল নিয়ে নতুন গবেষণার দরজা খুলেছে।
চলমান গবেষণা
পিলুও প্রত্নস্থলে খনন ও বহুমাত্রিক গবেষণা এখনও চলছে। সময় নির্ধারণ, পরিবেশগত প্রত্নতত্ত্বসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশ্লেষণের মাধ্যমে এই অঞ্চলের প্রাচীন জীবনকে আরও স্পষ্টভাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছেন গবেষকরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 


















