কানাডার তুষারঢাকা উত্তরে গবেষকদের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে এক বিরল ও আবেগঘন দৃশ্য। একটি স্ত্রী মেরু ভালুক নিজের সন্তানের পাশাপাশি আরেকটি শাবককে লালন করছে, যা তার নিজের নয়। বিজ্ঞানীদের মতে, মেরু ভালুকের জীবনে এ ধরনের দত্তক ঘটনা এক শতাংশেরও কম ক্ষেত্রে দেখা যায়। প্রকৃতির এই ব্যতিক্রমী অধ্যায় নতুন করে আলোচনায় এনেছে প্রজাতিটির মাতৃত্ববোধ ও টিকে থাকার সংগ্রাম
দুটি শাবক নিয়ে বিস্ময়
গবেষণা সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের বসন্তে ওই স্ত্রী মেরু ভালুকটিকে একটি শাবকসহ দেখা গিয়েছিল। শরতে আবার তাকে শনাক্ত করতে গিয়ে বিজ্ঞানীরা দেখেন, তার সঙ্গে রয়েছে দুটি শাবক। একটির শরীরে গবেষণার চিহ্ন থাকলেও অন্যটির ছিল না। এ থেকেই নিশ্চিত হওয়া যায়, দ্বিতীয় শাবকটি পরবর্তী সময়ে দত্তক নেওয়া হয়েছে।
ক্যামেরায় বন্দি তুষারজীবন
গত মাসে উত্তর কানাডার বরফাচ্ছন্ন প্রান্তরে হাঁটার সময় মা ও দুই শাবকের চলাফেরা ভিডিওতে ধরা পড়ে। কখনও তারা একসঙ্গে তুষারের ওপর অনুসন্ধান করছে, কখনও একটি শাবক দৌড়ে এসে মায়ের পাশে দাঁড়াচ্ছে। গবেষকদের ভাষায়, এই দৃশ্য শুধু বিরলই নয়, প্রজাতিটির সামাজিক আচরণ বোঝার ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ।
কেন এত বিরল এই দত্তক
দীর্ঘ চার দশকের বেশি সময় ধরে হাজার হাজার মেরু ভালুক পর্যবেক্ষণ করেও হাতে গোনা কয়েকটি দত্তক ঘটনার তথ্য মিলেছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সাধারণত শাবকরা একা বাঁচতে পারে না। মায়ের সান্নিধ্য না পেলে তাদের টিকে থাকার সম্ভাবনা প্রায় নেই বললেই চলে। তাই এই দত্তক শাবকের জন্য এটি কার্যত নতুন জীবন পাওয়ার সুযোগ।

জলবায়ু পরিবর্তন নয়, মাতৃত্ববোধই কারণ
গবেষকদের মতে, এই দত্তক আচরণের পেছনে সরাসরি জলবায়ু পরিবর্তনের যোগ নেই। বরং স্ত্রী মেরু ভালুকেরা স্বভাবগতভাবেই সন্তানের যত্নে অত্যন্ত সংবেদনশীল। একা শাবকের মুখোমুখি হলে অনেক সময় তারা তাকে ফেলে রাখতে পারে না, নিজের সন্তানের মতোই আগলে তোলে।
অজানা রয়ে গেছে প্রকৃত রহস্য
মজার বিষয় হলো, কিছু ক্ষেত্রে দেখা গেছে দত্তক নেওয়া শাবকের প্রকৃত মা এখনও জীবিত। এতে ধারণা করা হচ্ছে, কখনও কখনও মেরু ভালুকদের মধ্যে শাবক অদলবদলও ঘটতে পারে। বিজ্ঞানীরা দত্তক শাবকের জিনগত নমুনা সংগ্রহ করেছেন, তবে এর প্রকৃত ইতিহাস জানা যাবে কি না, তা নিশ্চিত নয়।

সংকটের মধ্যে আশার গল্প
বিশ্বজুড়ে মেরু ভালুকের সংখ্যা কমছে, বরফ গলে যাওয়াই তাদের সবচেয়ে বড় হুমকি। এমন সময় এই দত্তক গল্প প্রকৃতির কঠিন বাস্তবতার মাঝেও মানবিক অনুভূতির মতো এক আশার বার্তা দেয়। গবেষকদের মতে, এই শাবকটি এখন অন্তত আরও দেড় বছর মায়ের সুরক্ষায় থেকে বেঁচে থাকার শিক্ষা পাবে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















