নিউইয়র্কের ম্যানহাটনে আবার মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে যাচ্ছে বামিয়ান বুদ্ধের প্রতিরূপ। শান্তি, সহনশীলতা ও মানবিক পুনর্জাগরণের প্রতীক হিসেবে তৈরি এই বিশাল ভাস্কর্য আগামী বসন্তে হাই লাইনের উন্মুক্ত পার্কে স্থাপন করা হবে। শিল্পী তুয়ান অ্যান্ড্রু নুগুয়েনের কল্পনায় নির্মিত এই বুদ্ধমূর্তি ধ্বংসের ইতিহাসকে সামনে এনে নতুন করে মানবতার প্রশ্ন তুলছে।
ধ্বংসের স্মৃতি থেকে নতুন উপস্থিতি
আফগানিস্তানের বামিয়ান প্রদেশে পাহাড়ের গায়ে খোদাই করা ষষ্ঠ শতকের দুটি বুদ্ধমূর্তি দুই হাজার এক সালে তালেবানের হাতে ধ্বংস হয়েছিল। সেই আন্তর্জাতিকভাবে প্রচারিত ধ্বংসযজ্ঞ বহু মানুষের মতো তুয়ান অ্যান্ড্রু নুগুয়েনকেও গভীরভাবে নাড়া দেয়। বহু বছর পর সেই স্মৃতি থেকেই জন্ম নেয় এই ভাস্কর্যের ভাবনা, যা এবার নিউইয়র্কের আকাশরেখার নিচে নতুন অর্থ নিয়ে হাজির হচ্ছে।

শিল্পীর জীবন ও দৃষ্টিভঙ্গি
ভিয়েতনামে জন্ম নেওয়া নুগুয়েন ছোটবেলায় শরণার্থী হিসেবে যুক্তরাষ্ট্রে যান। পরবর্তীতে শিল্পচর্চার মাধ্যমে যুদ্ধ, স্মৃতি, ক্ষত ও আরোগ্যের বিষয়গুলো তাঁর কাজের কেন্দ্রে উঠে আসে। সাম্প্রতিক সময়ে আন্তর্জাতিক শিল্পাঙ্গনে স্বীকৃতি পাওয়া এই শিল্পী মনে করেন, ধ্বংসের ইতিহাসকে এড়িয়ে নয়, বরং সামনে এনে নতুন আলোচনার জন্ম দেওয়াই শিল্পের কাজ।
পাথর, ধাতু ও প্রতীকের ভাষা
সাতাশ ফুট উচ্চতার এই বুদ্ধমূর্তি বেলেপাথরে হাতে খোদাই করে তৈরি করা হচ্ছে। মূল বুদ্ধমূর্তির হারিয়ে যাওয়া হাত নতুনভাবে কল্পনা করে তৈরি করা হয়েছে। এই হাতগুলো তৈরি হয়েছে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে সংগৃহীত গলানো ধাতু দিয়ে, যা ভয়হীনতা ও করুণার প্রতীকী ভঙ্গিতে স্থাপন করা হবে। ধ্বংসের উপাদানকে রূপান্তর করে মানবিক আশার চিহ্ন বানানোর মধ্যেই শিল্পীর মূল বার্তা লুকিয়ে আছে।

হাই লাইনের প্রতীকী নির্বাচন
হাই লাইন কর্তৃপক্ষের মতে, এই ভাস্কর্য শুধু একটি শিল্পকর্ম নয়, বরং জনপরিসরে স্মরণ ও সম্মান কাকে দেওয়া হবে, সেই প্রশ্নও নতুন করে তোলে। উগ্রতা ও সাংস্কৃতিক মুছে ফেলার প্রবণতার বিপরীতে এই বুদ্ধমূর্তি নিরাময় ও নবজাগরণের কথা বলছে। আগামী এপ্রিলের শেষ দিকে এটি স্থাপন করা হবে এবং প্রায় আঠারো মাস দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত থাকবে।
সমসাময়িক নগরে প্রাচীন বার্তা
নিউইয়র্কের আধুনিক নগরজীবনের মাঝে দাঁড়িয়ে থাকা এই বুদ্ধমূর্তি অতীতের ক্ষত, বর্তমানের অস্থিরতা ও ভবিষ্যতের আশার মধ্যে সেতুবন্ধ তৈরি করবে। শিল্পীর ভাষায়, সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলার মাঝেও মানুষ কীভাবে সহানুভূতিশীল ও নির্ভীক থাকতে পারে, এই ভাস্কর্য সেই প্রশ্নের নীরব উত্তর।



সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















