এক মুহূর্তের ভুল, আর সেই মুহূর্তের ভিডিওই বদলে দিল পুরো জীবন। একটি সংগীতানুষ্ঠানে বসের সঙ্গে ঘনিষ্ঠ মুহূর্ত ক্যামেরায় ধরা পড়ার পর ক্রিস্টিন কাবোট বুঝতে পারেন, নীরবতা আর তাঁকে রক্ষা করছে না। পাঁচ মাস পর প্রথমবার মুখ খুলে তিনি বললেন, ভুল করা মানুষের অধিকার, কিন্তু সেই ভুলের জন্য মৃত্যু হুমকি পাওয়া কোনোভাবেই স্বাভাবিক হতে পারে না।
জাম্বো পর্দায় ধরা পড়া এক রাত
গত জুলাই মাসে জনপ্রিয় একটি ব্যান্ডের কনসার্টে কাবোটের সঙ্গে তাঁর প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীর ঘনিষ্ঠ দৃশ্য বড় পর্দায় ভেসে ওঠে। সেই ভিডিও দ্রুত সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে এবং অল্প সময়েই কোটি মানুষের চোখে পড়ে। আনন্দের মুহূর্ত মুহূর্তেই আতঙ্কে বদলে যায়। তিনি বুঝতে পারেন, তিনি শুধু একজন কর্মী নন, একই সঙ্গে একজন মা, একজন আলাদা হয়ে যাওয়া স্ত্রী এবং একটি প্রতিষ্ঠানের মানবসম্পদ প্রধান।

ভাইরাল ভিডিও থেকে ঘৃণার ঝড়
ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার পর কাবোটের দিকে ধেয়ে আসে কটূক্তি, অপমান আর হুমকি। তাঁকে নিয়ে কুরুচিকর মন্তব্য করা হয়, চরিত্রহননের ভাষা ব্যবহার করা হয়, এমনকি তাঁর শরীর নিয়েও বিদ্রূপ চলে। পরিচয় ফাঁস হয়ে যাওয়ার পর প্রতিদিন শত শত ফোনকল আসে, বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা শুরু করে অচেনা গাড়ি। মৃত্যু হুমকিও পান তিনি।
পরিবারের ওপর মানসিক চাপ
এই ঘটনার সবচেয়ে বড় ধাক্কা আসে তাঁর সন্তানদের জীবনে। স্কুলপড়ুয়া সন্তানেরা মায়ের সঙ্গে প্রকাশ্যে থাকতে ভয় পেতে শুরু করে। একদিন জ্বালানি ভরতে গিয়ে এক অচেনা নারী তাঁকে অপমান করে বলেন, তিনি বাতাসে শ্বাস নেওয়ারও যোগ্য নন। সেই সব মুহূর্ত কাবোটকে ভেঙে দেয়, তবু সন্তানদের সামনে সত্যটা তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেন তিনি।

ভুলের দায় আর পেশাগত মূল্য
কাবোট স্বীকার করেন, সেদিন তিনি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তিনি দায়িত্ব এড়াননি, বরং তার মূল্য দিয়েছেন নিজের পেশা দিয়ে। তদন্ত শেষে প্রতিষ্ঠান তাঁকে কাজে ফিরতে বললেও তিনি মনে করেন, সেই অবস্থানে দাঁড়ানো তাঁর পক্ষে সম্ভব নয়। শেষ পর্যন্ত তিনি পদত্যাগ করেন। তাঁর ভাষায়, ভুল করা যায়, বড় ভুলও হতে পারে, কিন্তু তার জন্য মানুষকে ভয় দেখানো বা ধ্বংস করে দেওয়া ন্যায়সংগত নয়।
নারী হিসেবে বিচারের প্রশ্ন
এই ঘটনার পর কাবোট সবচেয়ে বেশি আঘাত পেয়েছেন একটি ধারণা থেকে। অনেকে ধরে নিয়েছে, তিনি ক্ষমতার শীর্ষে উঠেছেন ব্যক্তিগত সম্পর্কের মাধ্যমে। তিনি বলেন, অল্প বয়স থেকেই তিনি কাজ করছেন, কখনোই কারও ওপর নির্ভর করতে চাননি। তাঁর আকাঙ্ক্ষা একটাই, এই গল্পটি যেন কেবল উপহাসের নয়, বরং নারীদের প্রতি সমাজের নির্মম দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে একটি বড় প্রশ্ন তোলে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















