০৬:৫২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫
পাকিস্তানে সেনা শক্তির নতুন অধ্যায়, অসামরিক রাজনীতির সীমা কোথায় গাজা চুক্তির দ্বিতীয় ধাপ শুরু হতে পারে আগামী বছরের শুরুতেই, বলছে তুরস্ক ইন্ডিয়া টু ডে’র প্রতিবেদন: দীপু দাসের পিটিয়ে হত্যার পর দিল্লিতে বাংলাদেশের হাইকমিশনে ব্যাপক বিক্ষোভ বৃদ্ধ বাবা-মায়ের চাপ থেকে সন্তানকে বাঁচাতে আগাম প্রস্তুতি, বদলে যাচ্ছে আমেরিকার পরিবারচিত্র উত্তরের জেলাগুলোতে শীতের দাপট বাড়ছে, সপ্তাহজুড়ে মৃদু শৈত্যপ্রবাহের সম্ভাবনা খুলনায় চলতি বছরে ৩৬ হত্যাকাণ্ড, নেপথ্যে অপরাধী গোষ্ঠীর দ্বন্দ্ব, বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কা সংখ্যাগত আধিপত্যে ড্রোন ঝাঁক, যুদ্ধজয়ের চাবিকাঠি স্যাচুরেশন হামলা: পিএলএ মুখপত্র চকবাজারের গলিতে নবজাতকের মরদেহ উদ্ধার বাংলাদেশে প্রতি চারজন প্রাপ্তবয়স্কের একজন উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন গণতন্ত্রের পথে বাধা দিতে গভীর চক্রান্ত চলছে: মির্জা ফখরুল

ভোক্তা নিত্যপণ্যে বিনিয়োগের আশ্রয়, তবে এখন চাই বাছাইয়ের বুদ্ধি

শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লে বিনিয়োগকারীদের চোখ স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দিকে। খাদ্য, পরিচ্ছন্নতা ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের ঝাঁকুনিতে তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে বিনিয়োগের উত্তেজনা কিছুটা কমে আসায় সেই পুরোনো প্রবণতাই আবার সামনে আসছে। তবে বদলে যাওয়া ভোক্তা অভ্যাসে এই খাতে বিনিয়োগ এখন আর অন্ধভাবে করা যাচ্ছে না।

বাজার অস্থিরতায় নিত্যপণ্যের ঐতিহাসিক শক্তি

গত কয়েক দশকে বড় বড় বাজার ধসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোম্পানিগুলো প্রায়ই সামগ্রিক বাজারের চেয়ে ভালো করেছে। প্রযুক্তি খাতের ধস, বৈশ্বিক আর্থিক সংকট কিংবা মূল্যস্ফীতিজনিত বিক্রির চাপ—প্রতিবারই এসব কোম্পানির স্থিতিশীল নগদ প্রবাহ বিনিয়োগকারীদের ভরসা জুগিয়েছে। দৈনন্দিন খাবার বা ঘরোয়া পণ্যের চাহিদা সংকটেও পুরোপুরি কমে না, আর এটাই তাদের মূল শক্তি।

Consumer Staples: Sector & Stocks | Guinness Global Investors

সাম্প্রতিক ধাক্কায় দেখা গেছে, বাজার যখন বড় পতনের মুখে, তখন কিছু বড় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার উল্টো ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে। এতে আবারও ধারণা জোরালো হয়েছে যে, ঝুঁকি এড়াতে নিত্যপণ্য খাত কার্যকর ঢাল হতে পারে।

ভোক্তা অভ্যাস বদল, চাপে পুরোনো মডেল

তবে এই সুরক্ষা স্থায়ী নয়। স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, ওজন কমানোর ওষুধের বিস্তার এবং খুচরা বিক্রেতাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের উত্থান বড় খাদ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত ও অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলাতে ভোক্তারা কম দামের বিকল্পের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে নামী ব্র্যান্ডগুলোকে ছাড় ও প্রচারণার পথে হাঁটতে হচ্ছে, যা লাভের মার্জিন সংকুচিত করছে।

২০২৬ সালে ওজন কমানোর ওষুধ আরও সহজলভ্য হলে এই চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, নিত্যপণ্য খাত নিরাপদ হলেও সব প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ সমান নয়।

যেখানে সুযোগ এখনো শক্ত

Everyday Essentials Can Still Offer Safety | The Wall Street Journal -  newspaper - Read this story on Magzter.com

এই বদলের মধ্যেও কিছু প্রতিষ্ঠান তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছে। ঘরে রান্নার প্রবণতা বাড়া এবং তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা মসলা ও অনুরূপ পণ্যের বাজারকে সহায়তা করছে। এসব পণ্যের খরচ পরিবারের মোট খাদ্য ব্যয়ের খুব সামান্য অংশ হওয়ায় চাহিদা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে। তরুণ প্রজন্মের রান্নায় আগ্রহও এখানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আরেকটি কৌশল হলো ভৌগোলিক বৈচিত্র্য। যেসব বহুজাতিক খাদ্য ও পানীয় কোম্পানির আয়ের বড় অংশ দেশের বাইরে থেকে আসে, তারা ঘরোয়া অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব তুলনামূলক কম অনুভব করে। বৈশ্বিক উপস্থিতি ও পণ্যের বৈচিত্র্য তাদের ঝুঁকি ছড়িয়ে দেয়।

খাদ্যের বাইরে দৈনন্দিন প্রয়োজন

Cheap household essentials: 7 everyday household items it pays to get right  - Which?

খাদ্য খাতের বাইরে গৃহস্থালি ও ব্যক্তিগত পরিচর্যার পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগকারীদের নজরে আছে। ডিটারজেন্ট, ডায়াপার কিংবা টিস্যুর মতো পণ্যের চাহিদা স্বাস্থ্যধারার পরিবর্তনে সরাসরি প্রভাবিত হয় না। যদিও নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রতিযোগিতা এখানে আছে, তবু এই পণ্যের প্রয়োজনীয়তা বাজারকে তুলনামূলক স্থিতিশীল রাখে।

সব মিলিয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখনো অস্থির বাজারে আশ্রয় দিতে পারে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সাফল্যের চাবিকাঠি হলো সূক্ষ্ম বাছাই। কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মডেল ভবিষ্যতের ভোক্তা আচরণের সঙ্গে মানানসই, সেটাই বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মূল প্রশ্ন।

 

জনপ্রিয় সংবাদ

পাকিস্তানে সেনা শক্তির নতুন অধ্যায়, অসামরিক রাজনীতির সীমা কোথায়

ভোক্তা নিত্যপণ্যে বিনিয়োগের আশ্রয়, তবে এখন চাই বাছাইয়ের বুদ্ধি

০৪:৫০:১৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৩ ডিসেম্বর ২০২৫

শেয়ারবাজারে অনিশ্চয়তা বাড়লে বিনিয়োগকারীদের চোখ স্বাভাবিকভাবেই ঘুরে যায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দিকে। খাদ্য, পরিচ্ছন্নতা ও দৈনন্দিন ব্যবহারের পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো দীর্ঘদিন ধরেই বাজারের ঝাঁকুনিতে তুলনামূলক নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত। সাম্প্রতিক সময়ে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ঘিরে বিনিয়োগের উত্তেজনা কিছুটা কমে আসায় সেই পুরোনো প্রবণতাই আবার সামনে আসছে। তবে বদলে যাওয়া ভোক্তা অভ্যাসে এই খাতে বিনিয়োগ এখন আর অন্ধভাবে করা যাচ্ছে না।

বাজার অস্থিরতায় নিত্যপণ্যের ঐতিহাসিক শক্তি

গত কয়েক দশকে বড় বড় বাজার ধসে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের কোম্পানিগুলো প্রায়ই সামগ্রিক বাজারের চেয়ে ভালো করেছে। প্রযুক্তি খাতের ধস, বৈশ্বিক আর্থিক সংকট কিংবা মূল্যস্ফীতিজনিত বিক্রির চাপ—প্রতিবারই এসব কোম্পানির স্থিতিশীল নগদ প্রবাহ বিনিয়োগকারীদের ভরসা জুগিয়েছে। দৈনন্দিন খাবার বা ঘরোয়া পণ্যের চাহিদা সংকটেও পুরোপুরি কমে না, আর এটাই তাদের মূল শক্তি।

Consumer Staples: Sector & Stocks | Guinness Global Investors

সাম্প্রতিক ধাক্কায় দেখা গেছে, বাজার যখন বড় পতনের মুখে, তখন কিছু বড় খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের শেয়ার উল্টো ঊর্ধ্বমুখী থেকেছে। এতে আবারও ধারণা জোরালো হয়েছে যে, ঝুঁকি এড়াতে নিত্যপণ্য খাত কার্যকর ঢাল হতে পারে।

ভোক্তা অভ্যাস বদল, চাপে পুরোনো মডেল

তবে এই সুরক্ষা স্থায়ী নয়। স্বাস্থ্যসচেতনতা বৃদ্ধি, ওজন কমানোর ওষুধের বিস্তার এবং খুচরা বিক্রেতাদের নিজস্ব ব্র্যান্ডের উত্থান বড় খাদ্যপ্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর চাপ বাড়াচ্ছে। উচ্চ ক্যালরিযুক্ত ও অতিপ্রক্রিয়াজাত খাবারের চাহিদা ধীরে ধীরে কমছে। একই সঙ্গে দীর্ঘদিনের মূল্যস্ফীতির ধাক্কা সামলাতে ভোক্তারা কম দামের বিকল্পের দিকে ঝুঁকছেন। এর ফলে নামী ব্র্যান্ডগুলোকে ছাড় ও প্রচারণার পথে হাঁটতে হচ্ছে, যা লাভের মার্জিন সংকুচিত করছে।

২০২৬ সালে ওজন কমানোর ওষুধ আরও সহজলভ্য হলে এই চাপ বাড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। অর্থাৎ, নিত্যপণ্য খাত নিরাপদ হলেও সব প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ সমান নয়।

যেখানে সুযোগ এখনো শক্ত

Everyday Essentials Can Still Offer Safety | The Wall Street Journal -  newspaper - Read this story on Magzter.com

এই বদলের মধ্যেও কিছু প্রতিষ্ঠান তুলনামূলকভাবে ভালো অবস্থানে আছে। ঘরে রান্নার প্রবণতা বাড়া এবং তুলনামূলক স্বাস্থ্যকর খাবারের চাহিদা মসলা ও অনুরূপ পণ্যের বাজারকে সহায়তা করছে। এসব পণ্যের খরচ পরিবারের মোট খাদ্য ব্যয়ের খুব সামান্য অংশ হওয়ায় চাহিদা তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে। তরুণ প্রজন্মের রান্নায় আগ্রহও এখানে ইতিবাচক প্রভাব ফেলছে।

আরেকটি কৌশল হলো ভৌগোলিক বৈচিত্র্য। যেসব বহুজাতিক খাদ্য ও পানীয় কোম্পানির আয়ের বড় অংশ দেশের বাইরে থেকে আসে, তারা ঘরোয়া অর্থনৈতিক চাপের প্রভাব তুলনামূলক কম অনুভব করে। বৈশ্বিক উপস্থিতি ও পণ্যের বৈচিত্র্য তাদের ঝুঁকি ছড়িয়ে দেয়।

খাদ্যের বাইরে দৈনন্দিন প্রয়োজন

Cheap household essentials: 7 everyday household items it pays to get right  - Which?

খাদ্য খাতের বাইরে গৃহস্থালি ও ব্যক্তিগত পরিচর্যার পণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলোও বিনিয়োগকারীদের নজরে আছে। ডিটারজেন্ট, ডায়াপার কিংবা টিস্যুর মতো পণ্যের চাহিদা স্বাস্থ্যধারার পরিবর্তনে সরাসরি প্রভাবিত হয় না। যদিও নিজস্ব ব্র্যান্ডের প্রতিযোগিতা এখানে আছে, তবু এই পণ্যের প্রয়োজনীয়তা বাজারকে তুলনামূলক স্থিতিশীল রাখে।

সব মিলিয়ে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য এখনো অস্থির বাজারে আশ্রয় দিতে পারে। কিন্তু বর্তমান বাস্তবতায় সাফল্যের চাবিকাঠি হলো সূক্ষ্ম বাছাই। কোন প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক মডেল ভবিষ্যতের ভোক্তা আচরণের সঙ্গে মানানসই, সেটাই বিনিয়োগ সিদ্ধান্তের মূল প্রশ্ন।