ফরাসি বিপ্লবের ইতিহাসে এমন কিছু মুহূর্ত আছে, যা শুধু রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড নয়, শিল্প ও মিথের চিরস্থায়ী প্রতীক হয়ে ওঠে। জ্যঁ পল মারাতের মৃত্যু ঠিক তেমনই এক ঘটনা। বাথটাবে রক্তাক্ত অবস্থায় নিহত এই বিপ্লবী সাংবাদিকের দৃশ্য ইতিহাসের পাতায় যেমন জায়গা করে নিয়েছে, তেমনি অমর হয়ে আছে জ্যাক লুই দাভিদের আঁকা ছবিতে।
মারাত হত্যার মুহূর্ত
১৭৯৩ সালের জুলাই মাসে মারাতকে হত্যা করেন শার্লট কর্দে। তিনি ছিলেন তুলনামূলক সংযত গিরঁদাঁ গোষ্ঠীর সমর্থক। মারাত তখন ফরাসি বিপ্লবের সবচেয়ে কট্টর কণ্ঠ, যিনি বিচারিক হত্যাযজ্ঞে উসকানি দিচ্ছিলেন। তীব্র চর্মরোগে ভুগতে থাকা মারাত কাজ করতেন বাথটাবে বসে। সেই সুযোগেই কর্দে তথ্য দেওয়ার অজুহাতে তার কাছে ঢুকে ছুরি চালান।

দাভিদের চিত্রে মৃত্যুর রূপ
জ্যাক লুই দাভিদের আঁকা মারাতের মৃত্যু শুধু একটি হত্যার দৃশ্য নয়, বরং বিপ্লবী শহীদের প্রতিকৃতি। বাস্তবে যেখানে রক্ত ছিটকে পড়েছিল চারদিকে, দাভিদের ছবিতে সেখানে রক্তের উপস্থিতি সংযত ও প্রতীকী। শান্ত মুখাবয়ব, নির্মল ত্বক আর কফিনের মতো বাথটাবে শুয়ে থাকা মারাতকে তিনি তুলে ধরেছেন ধর্মনিরপেক্ষ শহীদের আদলে।
বিপ্লবের তিন অধ্যায়
দাভিদের তিনটি চিত্র ফরাসি বিপ্লবের গতিপথ স্পষ্ট করে। একদিকে প্রজাতান্ত্রিক কঠোর আদর্শ, মাঝখানে নিজের সন্তানদেরই আঘাত করা বিপ্লব, আর শেষে নেপোলিয়নের উত্থান। এই ধারাবাহিকতায় মারাতের মৃত্যু হয়ে ওঠে আশা আর বিপর্যয়ের মাঝখানের নিঃশব্দ কেন্দ্র।

শিল্প ও রাজনীতির মেলবন্ধন
নিউ ইয়র্ক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প ইতিহাসবিদ টমাস ক্রোর লেখা গ্রন্থ মারাত হত্যার শিল্পগত ও রাজনৈতিক ব্যাখ্যা তুলে ধরে। তার বিশ্লেষণে দেখা যায়, দাভিদের চিত্র ধর্মীয় প্রতীকের ভাষা ব্যবহার করে কীভাবে বিপ্লবকে নতুন বিশ্বাসে রূপ দেয়। খ্রিস্টীয় প্রতীকের জায়গায় প্রকৃতি ও যুক্তির পূজা স্থাপন ছিল সেই সময়ের বিপ্লবী লক্ষ্য।
মারাত থেকে আধুনিক যুগ
মারাতের মিথ শুধু অষ্টাদশ শতকে সীমাবদ্ধ থাকেনি। বিশ শতকের ষাটের দশকে প্যারিস আন্দোলন থেকে শুরু করে ক্যালিফোর্নিয়ার সংস্কৃতিতেও তার প্রভাব দেখা যায়। নাটক, চলচ্চিত্র, সংগীত—সবখানেই মারাত হয়ে ওঠে বিদ্রোহের প্রতীক। তবে সমালোচকেরা মনে করিয়ে দেন, শাস্তির প্রতি তার আগ্রহ ও শত্রুর তালিকা আধুনিক সর্বগ্রাসী মতাদর্শের পূর্বাভাসও বয়ে আনে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















