লিড
ফরাসি ইমপ্রেশনিস্ট পিয়ের অগুস্ত রেনোয়ারের কাগজে আঁকা কাজের বিস্ময়কর শক্তি ও নরমতা একসঙ্গে ধরা দিয়েছে নিউইয়র্কের মর্গান লাইব্রেরি ও মিউজিয়ামে। এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর এই প্রথম রেনোয়ারের আঁকা রেখা, খড়িমাটি ও প্যাস্টেলের এমন বিস্তৃত প্রদর্শনী দর্শকদের সামনে খুলে ধরছে শিল্পীর গোপন সাধনা।
প্রদর্শনীর পরিসর ও বিন্যাস
মর্গান লাইব্রেরি ও প্যারিসের মিউজে দ’র্সে যৌথভাবে আয়োজিত এই প্রদর্শনীতে প্রায় একশটি কাজ রাখা হয়েছে। সময়কাল উনিশ শতকের ষাটের দশক থেকে বিশ শতকের দ্বিতীয় দশক পর্যন্ত। ড্রইং, প্যাস্টেল, জলরং, মুদ্রণচিত্র এবং কিছু সম্পর্কিত চিত্রকর্ম মিলিয়ে সাজানো হয়েছে রেনোয়ারের দীর্ঘ শিল্পজীবনের ধারাবাহিক গল্প। প্রদর্শনী শুরু হয়েছে লুভরের প্রাচীন ভাস্কর্য অনুকরণে আঁকা প্রাথমিক শিক্ষানবিশ কাজ দিয়ে, আর শেষ হয়েছে ধ্রুপদি ধারায় ফেরার স্পষ্ট ইঙ্গিতসহ।
দ্য গ্রেট বাথার্সের পথে
প্রদর্শনীর মাঝামাঝি অংশে এসে দর্শকের চোখ আটকে যায় বড় আকারের লাল ও সাদা খড়িমাটির আঁকায়। এগুলো ফিলাডেলফিয়ার বিখ্যাত চিত্রকর্ম ‘দ্য গ্রেট বাথার্স’-এর প্রস্তুতিপর্ব। এখানে শুধু সবল নগ্ন নারীমূর্তি দেখা যায়, তবু রেখার দৃঢ়তা ও ছন্দে নদীতীরের আবহ নিজে থেকেই গড়ে ওঠে। কাগজের কাজে রেনোয়ারের আত্মবিশ্বাসী রেখা কখনো জোরালো, কখনো সূক্ষ্ম হয়ে শরীরের গঠনকে জীবন্ত করে তোলে।
প্রাথমিক জীবন ও আধুনিকতার খোঁজ
চীনামাটির বাসন অলংকরণে প্রশিক্ষণ নিয়ে শুরু করা রেনোয়ার পরে লুভরে ভাস্কর্য অঙ্কনের মাধ্যমে হাত পাকান। দ্রুতই শহর ও গ্রামের আধুনিক জীবনের দৃশ্য ধরতে শুরু করেন। বই ও সাময়িকীর জন্য আঁকা তাঁর চিত্রে পুনর্মুদ্রণের প্রয়োজন কৌশলকে কীভাবে প্রভাবিত করেছে, প্রদর্শনীতে তা স্পষ্ট। এমিল জোলার উপন্যাসের জন্য করা এক খসড়া আঁকা কীভাবে ধাপে ধাপে দৃঢ় রূপ নেয়, সেই বিবর্তন এখানে চোখে পড়ে।
নৃত্য, প্রতিকৃতি ও ঘনিষ্ঠতা

এই প্রদর্শনীতে নৃত্যের দৃশ্যের একাধিক অধ্যয়ন রয়েছে, যেখানে সমসাময়িক পোশাক ও ভঙ্গিতে ধ্রুপদি প্রতিকৃতির গাম্ভীর্য মিশে গেছে। পাশাপাশি রয়েছে কোমল শিশু প্রতিকৃতি, বন্ধু ও পরিবারের মানুষের মুখ। ছয় বছরের এক কন্যাশিশুর প্যাস্টেল থেকে শুরু করে প্রৌঢ় ভাস্করের শক্ত মাথার আঁকা পর্যন্ত বিস্তৃত এই পরিসর রেনোয়ারের মানবিক দৃষ্টিকে স্পষ্ট করে।
মাতৃত্ব ও আয়তনের অনুসন্ধান
কিছু বছর সরাসরি দৃশ্য থেকে কাজ করার পর রেনোয়ার আবার প্রস্তুতিমূলক আঁকায় ফেরেন। মাতৃত্ব বিষয়ক এক শক্তিশালী খড়িমাটির চিত্রে আলো ও সূক্ষ্মতার সঙ্গে আয়তনের ভারসাম্য খোঁজার চেষ্টা স্পষ্ট। পরবর্তী সময়ে দাই গ্যাব্রিয়েল ও শিশুদের নিয়ে আঁকা প্যাস্টেল ও চিত্রকর্মে সেই অনুসন্ধান আরও বিকশিত হয়।

প্রকৃতি ও ধ্রুপদিতে প্রত্যাবর্তন
মাঝামাঝি সময়ে আঁকা জলরঙের প্রাকৃতিক দৃশ্যগুলো কিছুটা ভাঙাচোরা ও তীব্র। আর শেষের দিকে এসে দেখা যায় পৌরাণিক বিষয় নিয়ে কাজ, যেখানে তিন দেবী রুবেন্সীয় ভরাট শরীর নিয়ে হাজির। এই পর্বেই ধ্রুপদি ধারায় রেনোয়ারের পূর্ণ প্রত্যাবর্তন সম্পন্ন হয়।
এক শতকের শূন্যতা পূরণ
রেনোয়ারের এই কম পরিচিত দিক নিয়ে এক শতাব্দীরও বেশি সময় পর এমন পূর্ণাঙ্গ প্রদর্শনী শিল্প ইতিহাসের বড় শূন্যতা পূরণ করছে। গবেষণাভিত্তিক ক্যাটালগসহ এই আয়োজন রেনোয়ারকে নতুন চোখে দেখার সুযোগ দিচ্ছে।

সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















