বাংলাদেশের সঙ্গে একটি বিস্তৃত অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তি চূড়ান্ত করার বিষয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে সমঝোতা নিশ্চিত করেছে জাপান। এই চুক্তি কার্যকর হলে ধাপে ধাপে জাপানি ইস্পাত, গাড়ির যন্ত্রাংশ ও কিছু খাদ্যপণ্যের ওপর বাংলাদেশে আরোপিত উচ্চ শুল্ক প্রত্যাহার করা হবে।
চুক্তি নিশ্চিতের পটভূমি
জাপানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী তোশিমিতসু মোতেগি ও বাংলাদেশের বাণিজ্য উপদেষ্টা শেখ বশির উদ্দিনের মধ্যে সোমবার প্রায় দশ মিনিটের টেলিফোন আলোচনার মাধ্যমে এই সমঝোতা নিশ্চিত হয়। উভয় পক্ষ চুক্তিটি আনুষ্ঠানিকভাবে স্বাক্ষরের লক্ষ্যে আলোচনা অব্যাহত রাখার বিষয়ে একমত হয়েছে। এটি বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ প্রথমবারের মতো কোনো দেশের সঙ্গে অর্থনৈতিক অংশীদারত্ব চুক্তিতে প্রবেশ করবে।
আঞ্চলিক বাণিজ্যে কৌশলগত গুরুত্ব
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক জোরদারে জাপানের এই উদ্যোগ এমন এক সময়ে এলো, যখন চীনসহ একাধিক দেশ বাংলাদেশের সঙ্গে নতুন বাণিজ্য চুক্তি করতে আগ্রহী। এ কারণে এ চুক্তিকে জাপানের জন্য কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে।
ইস্পাত ও গাড়ি খাতে শুল্ক হ্রাস
বাংলাদেশে জাপানের মোট রপ্তানির প্রায় এক-চতুর্থাংশই ইস্পাত পণ্য। বর্তমানে ইস্পাতের ওপর সর্বোচ্চ শুল্ক হার প্রায় ছাপ্পান্ন দশমিক ছয় শতাংশ পর্যন্ত রয়েছে। চুক্তি স্বাক্ষরের পর আঠারো বছরের মধ্যে এই শুল্ক পুরোপুরি তুলে নেওয়া হবে। একইভাবে টায়ার, ইঞ্জিন ও অন্যান্য গাড়ির যন্ত্রাংশের শুল্ক পনেরো বছরের মধ্যে প্রত্যাহার করা হবে। যাত্রীবাহী গাড়ির ক্ষেত্রে বাংলাদেশ জাপানকে অন্য যেকোনো দেশের সমপর্যায়ের সুবিধা দেওয়ার নিশ্চয়তা দেবে।
খাদ্যপণ্যের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত
জাপানের ওয়াগিউ গরুর মাংস ও স্ক্যালপসের মতো সামুদ্রিক খাদ্যপণ্যের ওপরও আঠারো বছরের মধ্যে শুল্ক তুলে নেওয়ার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে চাল এই শুল্কমুক্ত সুবিধার আওতার বাইরে রাখা হয়েছে।
বাংলাদেশি পণ্যে জাপানের সুবিধা
চুক্তি স্বাক্ষরের সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশ থেকে আমদানি করা বস্ত্রপণ্যের ওপর জাপান তাৎক্ষণিকভাবে শুল্ক প্রত্যাহার করবে। জাপানে বাংলাদেশের মোট রপ্তানির নব্বই শতাংশের বেশি আসে পোশাক ও জুতা খাত থেকে, ফলে এই সিদ্ধান্ত বাংলাদেশের রপ্তানিকারকদের জন্য বড় স্বস্তি হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এলডিসি উত্তরণ ও ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ
জাতিসংঘের পূর্বাভাস অনুযায়ী, বাংলাদেশ আগামী দুই হাজার ছাব্বিশ সালের নভেম্বর মাসে স্বল্পোন্নত দেশের তালিকা থেকে উত্তরণ ঘটাবে। বর্তমানে এই মর্যাদার কারণে উন্নত দেশগুলোতে বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য শুল্কমুক্ত সুবিধা পায়। যদি সেই সময়ের মধ্যে নতুন চুক্তির আওতায় শুল্ক প্রত্যাহার কার্যকর না হয়, তবে বস্ত্রপণ্যের ওপর দশ শতাংশের বেশি শুল্ক আরোপ হতে পারে। এ বাস্তবতায় জাপানের সঙ্গে এই চুক্তিকে বাংলাদেশের জন্য ভবিষ্যৎ রপ্তানি সুরক্ষার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
Sarakhon Report 



















