গণতান্ত্রিক উত্তরণকে ব্যাহত করতে একটি মহল পরিকল্পিত ও ভয়ংকর চক্রান্তে লিপ্ত রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, বাংলাদেশ বর্তমানে একটি সংক্রমণকাল বা ট্রানজিশন পিরিয়ড অতিক্রম করছে। দীর্ঘদিনের ফ্যাসিবাদী শাসন দেশের গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, অর্থনীতি ও মূল্যবোধ ধ্বংস করেছে। সেই শাসন থেকে বেরিয়ে এসে দেশ এখন একটি নির্বাচনের দিকে এগোচ্ছে, যার মাধ্যমে নির্বাচিত সরকার ও সংসদ দেশকে সঠিক পথে পরিচালিত করবে—এমন প্রত্যাশা সবার।
তবে এই প্রক্রিয়ার মাঝেই কিছু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী ইচ্ছাকৃতভাবে এই উত্তরণকে বাধাগ্রস্ত করার চেষ্টা করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। মঙ্গলবার সকালে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের রাজনৈতিক কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন মির্জা ফখরুল।
চক্রান্তের শিকার হয়ে নিহত ইনকিলাব মঞ্চের নেতা শরীফ ওসমান বিন হাদির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, এই চক্রান্তের ফলে যিনি শহীদ হয়েছেন, তার আত্মার মাগফিরাত কামনা করা হচ্ছে এবং মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করা হচ্ছে যেন তিনি তাকে জান্নাতের সর্বোচ্চ মর্যাদা দান করেন।

সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল জানান, শতবর্ষী রাজনৈতিক দল জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের সঙ্গে বিএনপির নির্বাচনি সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতার আওতায় চারটি সংসদীয় আসন ছেড়ে দেওয়া হচ্ছে। এসব আসনের মধ্যে রয়েছে নীলফামারী-১, নারায়ণগঞ্জ-৪, সিলেট-৫ ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া-২। এসব আসনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের প্রার্থীরা নির্বাচন করবেন।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে গিয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, অন্তর্বর্তী সরকারের ব্যর্থতার কারণে এই ট্রানজিশনাল সময়ে দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উল্লেখযোগ্য অবনতি হয়েছে। তিনি বলেন, মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকার অন্তত কয়েক মাসের জন্য দক্ষতা ও যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে দেশ পরিচালনা করবে—এমন প্রত্যাশা ছিল, কিন্তু বাস্তবতায় তা পুরোপুরি দেখা যাচ্ছে না।
নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা প্রসঙ্গে তিনি অন্তর্বর্তী সরকারকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, তারা প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী ২০২৬ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেছে। একই সঙ্গে তিনি আশা প্রকাশ করেন, একটি সুষ্ঠু, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পরিবেশ নিশ্চিত করতে সরকার ও নির্বাচন কমিশনকে আরও কার্যকর ও ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে হবে।
দলীয় শরিকদের বিষয়ে মির্জা ফখরুল বলেন, শরিকদের সঙ্গে বিএনপির সমঝোতা চূড়ান্ত হয়েছে এবং তাদের সঙ্গে সম্পর্ক আরও গভীর হয়েছে। সময়মতো এসব বিষয়ে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

সংবাদ সম্মেলনে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশ দেশের অন্যতম শীর্ষ ইসলামী রাজনৈতিক দল। তাদের সঙ্গে বিএনপির একটি স্পষ্ট নির্বাচনি সমঝোতা হয়েছে। এই সমঝোতা অনুযায়ী নির্ধারিত আসনগুলোতে বিএনপি প্রার্থী দেবে না এবং অন্যান্য আসনে জমিয়তের পক্ষ থেকেও প্রার্থী থাকবে না। তিনি জানান, গণতান্ত্রিক উত্তরণে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে যেতে ভবিষ্যতে আরও যেসব দলের সঙ্গে আসন সমঝোতা হয়েছে, তা পর্যায়ক্রমে জানানো হবে।
সালাহউদ্দিন আহমদ আরও বলেন, বিএনপি সংবিধানের প্রস্তাবনায় মহান আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস পুনঃস্থাপনে অঙ্গীকারবদ্ধ। কোরআন ও সুন্নাহবিরোধী কোনো আইন প্রণয়ন করা হবে না। কওমি ধারার মাদ্রাসা শিক্ষার্থীদের সর্বোচ্চ ডিগ্রির স্বীকৃতি, ইমাম-খতিব ও মুয়াজ্জেনদের জন্য রাষ্ট্রীয় ও উৎসব ভাতার ব্যবস্থা এবং ধর্মশিক্ষকদের নিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়ার বিষয়গুলো আগামী নির্বাচনি ইশতেহারে অন্তর্ভুক্ত থাকবে বলে জানান তিনি।

নির্বাচনি সমঝোতা প্রসঙ্গে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের আমির মাওলানা মো. উবায়দুল্লাহ ফারুক বলেন, দেশ বর্তমানে স্বাভাবিক অবস্থায় নেই এবং নির্বাচন নিয়ে সমাজ দুই মেরুতে বিভক্ত। দেশের পরিচালনা ও জাতির কল্যাণের প্রশ্নে অন্যান্য দলের তুলনায় বিএনপিকেই বেশি আস্থাভাজন মনে করে তার দল। অতীত অভিজ্ঞতা ও শাসনামলের স্থিতিশীলতার ভিত্তিতে তারা বিশ্লেষণ করে বিএনপির সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
তিনি আরও বলেন, ইসলামী মূল্যবোধে বিশ্বাসী দল হিসেবে তারা বিএনপিকে দেশ ও জাতির কল্যাণে উপযুক্ত মনে করেন। ভবিষ্যতে যদি বিএনপি সরকার গঠন করে, তবে দেশের সার্বিক উন্নয়নের পাশাপাশি ইসলামী অঙ্গনকে গতিশীল করার প্রত্যাশা থাকবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। দীর্ঘদিন ধরে ইসলামের ওপর যে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে, তা থেকে উত্তরণের জন্য আগামী সরকার আন্তরিক ভূমিকা রাখবে—এমন আশা প্রকাশ করেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের আমির।
সংবাদ সম্মেলনে জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















