যুক্তরাজ্যে পরিবেশ রক্ষার লড়াইয়ে এবার সামনে আসছে এক ভিন্নধর্মী বৈজ্ঞানিক উদ্যোগ। আগ্রাসী বিদেশি উদ্ভিদ ও প্রাণীর দাপটে বিপন্ন দেশীয় জীববৈচিত্র্যকে রক্ষা করতে গবেষণাগারে জন্মানো বিশেষ প্রজাতিকে প্রকৃতিতে ছাড়ছে সরকারি বিজ্ঞানীরা। লক্ষ্য একটাই—প্রকৃতির ভেতর থেকেই প্রতিরোধ গড়ে তোলা।
আগ্রাসী প্রজাতির চাপে সংকট
ব্রিটেনে জাপানি নটউইড, হিমালয়ান বালসাম, সিগন্যাল ক্রে-ফিশ কিংবা ভাসমান পেনিওয়ার্টের মতো আগ্রাসী প্রজাতি নদী, জলাভূমি ও বনাঞ্চলে দেশীয় উদ্ভিদ ও প্রাণীকে ঠেলে দিচ্ছে বিলুপ্তির দিকে। এই প্রজাতিগুলো দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট করছে, বাড়াচ্ছে অর্থনৈতিক ক্ষতিও।
বিজ্ঞানীদের নতুন অস্ত্র
এই সংকট মোকাবিলায় বিজ্ঞানীরা ব্যবহার করছেন জীববৈজ্ঞানিক নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি। দক্ষিণ আমেরিকার এক ধরনের পোকা ব্যবহার করে ভাসমান পেনিওয়ার্টের বিস্তার কমানোর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। কয়েক বছর ধরে যেসব এলাকায় এই পোকা ছাড়া হয়েছে, সেখানে উদ্ভিদের ঘনত্ব কমতে দেখা গেছে। একইভাবে জাপানি নটউইড দমনে বিশেষ এক পোকা এবং হিমালয়ান বালসামের বিরুদ্ধে ছত্রাক পরীক্ষামূলকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে।
কেন এই পদ্ধতি গুরুত্বপূর্ণ
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই জীবন্ত নিয়ন্ত্রক একবার কার্যকর হলে স্বাভাবিকভাবেই ছড়িয়ে পড়তে পারে। এতে মানুষের শ্রম ও খরচ কমে আসে এবং দীর্ঘমেয়াদে আগ্রাসী প্রজাতির সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে থাকে। জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে নতুন ঝুঁকি তৈরি হওয়ায় এই পদ্ধতির গুরুত্ব আরও বেড়েছে।
দেশীয় প্রজাতি রক্ষার লড়াই
আগ্রাসী সিগন্যাল ক্রে-ফিশের কারণে ব্রিটেনের দেশীয় সাদা নখওয়ালা ক্রে-ফিশ প্রায় বিলুপ্তির পথে। এদের বাঁচাতে নিরাপদ আশ্রয়কেন্দ্র তৈরি করা হয়েছে। ইয়র্কশায়ার ও ডেভনে বিশেষ হ্যাচারিতে এদের বংশবিস্তার করে নিরাপদ এলাকায় ছাড়ার কাজ চলছে। ইতিমধ্যে শতাধিক ক্রে-ফিশকে নিরাপদ স্থানে স্থানান্তর করা হয়েছে।
অর্থনীতি ও পরিবেশের দ্বৈত চাপ
সরকারি হিসাব অনুযায়ী আগ্রাসী বিদেশি প্রজাতির কারণে ব্রিটেনের অর্থনীতিতে বছরে বিপুল ক্ষতি হচ্ছে। তাই পরিবেশ উন্নয়ন পরিকল্পনার অংশ হিসেবে ২০৩০ সালের মধ্যে এই প্রজাতির বিস্তার অর্ধেকে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। বিজ্ঞান ও নীতিনির্ধারণের সমন্বয়েই এই লক্ষ্য পূরণের আশা দেখছেন বিশেষজ্ঞরা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















