দীর্ঘ এক শতাব্দীর বেশি সময় পর ঔপনিবেশিক অতীতের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায় নতুন করে লেখা শুরু হলো। নেদারল্যান্ডস ইন্দোনেশিয়ার কাছে ফিরিয়ে দিল প্রাগৈতিহাসিক মানব প্রজাতির বিখ্যাত নিদর্শন ‘জাভা মানব’-এর অস্থি, যা মানব বিবর্তনের ইতিহাসে এক যুগান্তকারী আবিষ্কার হিসেবে পরিচিত।
প্রতীকী প্রত্যাবর্তনের মুহূর্ত
জাকার্তায় ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় জাদুঘরে আয়োজিত এক আনুষ্ঠানিক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে এই অস্থি হস্তান্তর করা হয়। নেদারল্যান্ডসের রাষ্ট্রদূত ইন্দোনেশিয়ার সংস্কৃতিমন্ত্রীর হাতে তুলে দেন খুলি অংশ, দাঁত ও উরুর হাড়সহ মূল্যবান নিদর্শনগুলো। এগুলো প্রদর্শনের জন্য শিগগিরই জাদুঘরে উন্মুক্ত করা হবে বলে জানানো হয়েছে।
উপনিবেশিক ইতিহাস ও সংগ্রহের পটভূমি
উনিশ শতকের শেষভাগে ডাচ বিজ্ঞানী ইউজিন ডুবোয়া জাভা দ্বীপের বেগাওয়ান সোলো নদীর তীর সহ বিভিন্ন স্থান থেকে এই অস্থি ও জীবাশ্ম সংগ্রহ করেন। সে সময় অঞ্চল ছিল ডাচ শাসনের অধীনে। পরবর্তী সময়ে প্রায় চল্লিশ হাজারের বেশি জীবাশ্ম ও মাটি নমুনা নেদারল্যান্ডসে পাঠানো হয়, যা ইউরোপীয় গবেষণা প্রতিষ্ঠানের সংগ্রহশালায় স্থান পায়।

বিজ্ঞান, অধিকার ও ন্যায়বিচারের প্রশ্ন
এই প্রত্যাবর্তন শুধু প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ফেরত দেওয়ার ঘটনা নয়। এটি জ্ঞানগত ন্যায়বিচার ও বৈজ্ঞানিক সার্বভৌমত্বের স্বীকৃতি হিসেবেও দেখা হচ্ছে। ইন্দোনেশিয়ার গবেষকদের মতে, এখন তারা নিজ ভূখণ্ডে পাওয়া অন্যান্য আবিষ্কারের সঙ্গে এসব অস্থি তুলনা করে এশিয়ায় মানব বিবর্তনের নতুন দিক উন্মোচন করতে পারবেন। একই সঙ্গে স্থানীয় মানুষের শ্রম ও জ্ঞানের অবদানকে ইতিহাসে যথাযথ মর্যাদা দেওয়ার সুযোগ তৈরি হলো।
ডাচ জাদুঘরের পরিবর্তনশীল বাস্তবতা
নেদারল্যান্ডসের লেইডেন শহরের প্রাকৃতিক ইতিহাস জাদুঘরে ‘প্রারম্ভিক মানব’ গ্যালারির কেন্দ্রে এতদিন ‘জাভা মানব’ প্রদর্শিত হতো। সেই গ্যালারির গল্প এখন নতুনভাবে সাজাতে হবে। জাদুঘর কর্তৃপক্ষ বলছে, ভবিষ্যতের প্রদর্শনীতে মানব বিবর্তনের পাশাপাশি ঔপনিবেশিক ইতিহাস ও তার প্রভাব তুলে ধরা হবে।
বাকি সংগ্রহ ফেরত আসার অপেক্ষা
এই চারটি অস্থির পাশাপাশি ডুবোয়া সংগ্রহের বাকি জীবাশ্ম ও নমুনা গুলো ধাপে ধাপে ইন্দোনেশিয়ায় ফেরত আসবে বলে জানানো হয়েছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী আগামী বছর নাগাদ পুরো সংগ্রহ হস্তান্তর সম্পন্ন হওয়ার কথা।
সারাক্ষণ রিপোর্ট 



















